প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
প্রতি বছরই অ্যানুয়াল স্পোর্টস মিটের পরের দিনটিতে শিক্ষক বনাম ছাত্রদের ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় মহেন্দ্রপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ে ৷ মহেন্দ্রপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয় একটি সরকার পোষিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৷ চাকদহ রেলস্টেশনের লাগোয়া। বিশাল তিনতলা বিল্ডিং, পাশেই লাগোয়া বিশাল খেলার মাঠ। সবমিলিয়ে হাজার দেড়েক ছাত্র আর স্থায়ী, পার্শ্ব ও অস্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে জনাপঞ্চাশেক স্টাফ ৷ প্রধানশিক্ষক অভয় কুমার পাল রাশভারী ও সৎ মানুষ। শিক্ষক-ছাত্র সকলেই তাকে শ্রদ্ধা ও ভয় দুই-ই করে ৷
যাই হোক, এই দিনটির প্রতি অসীম আগ্রহে তাকিয়ে থাকেন শিক্ষক ও ছাত্রকুল ৷ এমনকি স্কুল পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও একটা দারুণ উদ্দীপনা কাজ করে থাকে ৷ স্কুলে তিনদিন ধরে চলে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। কিন্তু স্কুলমাঠে এই তিনদিন যত না ভীড় হয়, তার দ্বিগুণ ভীড় হয় এই দিনটিতে। ছাত্র-শিক্ষকের এই মহারণ দেখে সবাই বেশ মজা অনুভব করেন।
প্রতি বছরই ছাত্ররা একটু আলগা খেলে ৷ শিক্ষকদের জিতিয়ে দিতে পারলে কয়েকটা ক্ষেত্রে একটু সুবিধা পাওয়া যায় ৷ তাছাড়া একটা শ্রদ্ধাও কাজ করে থাকে ৷ শিক্ষকরাও জিতে একটু তৃপ্তি অনুভব করেন। কিন্তু এবছরের চিত্রটি সম্পূর্ণ আলাদা। এবারে স্কুল সার্ভিস কমিশন দিয়ে বেশ কয়েকজন কমবয়সী শিক্ষক যোগ দিয়েছেন স্কুলে। তাঁরা ক্রিকেটটা বেশ ভালোই খেলেন। আগের কয়েকটা প্রাকটিস ম্যাচে ছাত্রদের টিমকে বলে বলে হারিয়েছেন ৷ তাই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা এর প্রতিশোধ নেবার জন্য উন্মুখ ৷ প্রতিবছর বিদায়ী ছাত্রদের নিয়েই এই টিম তৈরি হয় কিনা! তাছাড়া, এবার হেডস্যার বলে দিয়েছেন নো গটআপ গেম ৷ টিচারদের যদি জিততেই হয় তো নিজের যোগ্যতাতেই জিততে হবে ৷
তাই , এবার বেশ প্রেস্টিজের ব্যাপার। পাশেই আবার গার্লস স্কুল। শিক্ষকরা হারলে গার্লস স্কুলের দিদিমনিরা দুয়ো দেবে স্যারদের আর ছাত্ররা হারলে তারা রীতিমতো ছোট হয়ে যাবে মেয়েদের কাছে ৷ গার্লস স্কুলের মেয়েদের সঙ্গে যে সব ছাত্ররা একটু আধটু লাইন তৈরি করার আশায় আছে হারলে তাদের সেই চেষ্টা একেবারে বিফলে যাবে। সবচেয়ে বড়ো কথা কমলা স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের প্রধানশিক্ষিকা কাকলিদেবী আসলে অভয়বাবুর সহধর্মিনী। তাই ভেতরে ভেতরে একটা টক্কর লেগে থাকে সারাবছর ধরে দুটি স্কুলের মধ্যে ৷ অবশ্য এলাকার মানুষজন ও অভিভাবকরা এগুলি উপভোগই করেন। তা, কমলা স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের প্রধানশিক্ষিকা মহেন্দ্রপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষককে আগের বছর ম্যাচের শেষে পুরস্কার ট্রফি দেবার সময় বলেছিলেন, “আর কতদিন ছাত্রদের দাক্ষিণ্যে জিতবেন আপনারা? একবার তো নিজেদের যোগ্যতায় জিতে দেখান”! (স্কুলে কাবেরীদেবী নিজের স্বামীকে আপনি বলে সম্বোধন করেন)। তা কথাগুলি কিন্তু অভয়বাবুর একেবারে অন্তঃস্থলে গিয়ে লেগেছিল। রাগে অপমানে নিজের স্ত্রীর সাথে একসপ্তাহ ভালো করে কথা বলেননি তিনি। তাই এবছর নিজের সহশিক্ষকদের ও ছাত্রদের প্রতি তার কঠোর নির্দেশ “জিতলে নিজেদের যোগ্যতায় জিততে হবে ৷ ছাত্রদের কাছ থেকে কোনরূপ দাক্ষিণ্য নেওয়া চলবে না ৷”
যাইহোক, এবছর সেজন্য শিক্ষকদের জন্য আলাদা প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করেছেন তিনি ৷ নিজেও জোরকদমে প্র্যাকটিস করেছেন ৷ ভরসা বলতে নতুন জয়েন করা রাকেশ, অনিন্দ্য, মজিদ আর অতনু। মজিদ ভালো বল করে ৷ বেশ জোরে ৷ প্র্যাকটিসের সময় দেখেছেন ওর বল ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেন না তিনি ৷ বাকিদেরও একই সমস্যা হচ্ছে ৷ অতনু বল করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটটাও করে চমৎকার ৷ রাকেশ আর অনিন্দ্যর ব্যাটের হাত ভালো ৷ বড়ো বড়ো শট আছে ওদের হাতে ৷
ম্যাচের একমাস আগেই স্টাফরুমে মিটিং ডেকেছিলেন তিনি দলটা ঠিকমতো বেছে নেবার জন্য ৷ রাকেশবাবু, অনিন্দ্যবাবু, মজিদবাবু , অতনুবাবু এবং সেইসঙ্গে অভয়বাবু ছিলেন অটোমেটিক পছন্দ ৷ পুরোনো স্যারদের মধ্যে সওকতস্যার উইকেটকিপার থাকতেন। ঠিক হলো এবারও উনি উইকেটকিপার থাকবেন। ওনার সবচেয়ে বড়ো অ্যাডভান্টেজ হলো ওনার উচ্চতা ৷ ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। সেই সঙ্গে এই লম্বালম্বা হাত। তাঁর হাত থেকে একটাও বল ফস্কায় না। উইকেটের পেছনে যে বলই আসুক না, ঠিক উনি তা তালুবন্দি করবেনই ৷ সমরবাবু ও প্রদীপবাবুও কাজ চালানোর মতো ব্যাটিং-বোলিং দুটোই করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত স্যারদের দলটা একরকম দাঁড়ালো –
রাকেশ পাল, অনিন্দ্য মিশ্র, মজিদ হাসান, অতনু দত্ত, অভয় কুমার পাল, সওকত আলি (উইকেটকিপার ), সমর ব্যানার্জী, প্রদীপ প্রধাণ, সৌমিত্র দাস, মুকেশ লাল, শান্তনু চৌধুরী, প্রতীক শর্মা (দ্বাদশ ব্যক্তি ) ৷
খেলার দিন একঘণ্টা আগে থেকেই মাঠ ভর্তি ৷ পাশের স্কুল থেকে দুইজন স্যারকে আম্পায়ার হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ সংলগ্ন গার্ল স্কুলের দিদিমনিরাও উপস্থিত স্যারদের উৎসাহ দেবার জন্য। আর গার্লস স্কুলের মেয়েরাও মাঠ ভর্তি করে ফেলেছে ৷ তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার ঠাকুরের কাছে রীতিমত প্রার্থণা করে এসেছে স্যারদের হারের জন্য ৷
নির্দিষ্ট সময়ে দু-দলই উপস্থিত হয়েছে মাঠে ৷ হেডস্যার অভয়বাবু আর ছাত্রদের ক্যাপ্টেন দশম শ্রেণির সুরজিত টস করতে মাঠের মাঝে গেলো ৷ টস হয়ে যাবার পর আম্পেয়ার ইশারায় জানালেন যে শিক্ষকরা টসে জিতেছেন ও ব্যাট করবেন প্রথমে ৷
আগে থেকেই ঠিক ছিল টেনিস বলে খেলা হবে ৷ তাই প্যাড গ্লাভস পড়ার কোন বালাই নেই ৷ দুটো নতুন ব্যাট কেনা হয়েছে ৷ সেই ব্যাটদুটো নিয়েই রাকেশবাবু ও অনিন্দ্যবাবু নেমে পড়লেন মাঠে ৷ মাথায় শুধু কাপড়ের টুপি। গোটা মাঠ হাততালিতে ফেটে পড়লো ৷ ছাত্রদের দল আগে থেকেই মাঠে যে যার পজিশন নিয়ে নিয়েছে ৷ প্রথম বল হাতে তৈরি মইদুল ৷ রাকেশবাবুও তৈরি।
সাঁৎ করে চলে গেলো প্রথম বলটা কানের পাশ দিয়ে ৷ বাউন্সার ৷ ম্যাচের প্রথম বলই বাউন্সারের জন্য একেবারেই তৈরি ছিলেন না রাকেশবাবু। একটু হতচকিত হয়ে গেলেন তিনি। মৃদু হেসে আবার বোলিং মার্কের দিকে চলে গেল মইদুল ৷ পরের বল আবার বাউন্সার দেবার চেষ্টা। কিন্তু লাইন হারাল বোলার ৷ সপাটে ব্যাট চালালেন রাকেশবাবু ৷ সকলে দাড়িঁয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো মুহুর্তে বাউন্ডারি লাইন পার করলো। এবার রাকেশবাবুর পালা। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে মইদুলের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি হানলেন তিনি ৷ লজ্জা পেয়ে মইদুল বোলিং মার্কের দিকে রওনা দিলো। প্রথম ওভারে বলার মতো আর কিছু হলো না ৷ তবে দু-দলই বুঝিয়ে দিলো কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। শেষ বলে একটা সিঙ্গেলস নিয়ে স্ট্রাইক রেখে দিলেন রাকেশ স্যার।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম থেকেই হাত খুলে মারতে শুরু করলেন রাকেশবাবু আর অনিন্দ্যবাবু ৷ কুড়ি ওভারের খেলা ৷ তাই রান তোলার লয় যেন না কমে সেজন্য সচেষ্ট হলেন দুজনই ৷ প্রথম পাঁচ ওভারে আটচল্লিশ রান উঠলো ৷ ছাত্রের দল ম্রিয়মান হয়ে পড়লো। অন্যান্য স্যাররা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়লেন ৷ মাঠের ধারে টাঙানো শামিয়ানার তলায় বসে সবাই হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিতে লাগলেন দুই ব্যাটসম্যানকে ৷
ষষ্ঠ ওভার শুরু করতে এলো সায়ন স্পিন আক্রমণ নিয়ে ৷ প্রথম বলটাই বাউন্ডারির উপর দিয়ে উড়ে গেলো গৌতমের চায়ের দোকানের ভিতর ৷ দুধের ডেকচিতেই পড়ছিল বলটা আর একটু হলে। সকলে হইহই করে উঠলো ৷ গৌতম বলটা কিন্তু ফেরত দিলো হাসিমুখেই ৷ পরের বলটায় একইরকম ভাবে ব্যাট চালালেন রাকেশবাবু ৷ কিন্তু টাইমিংটা ভুল হয়ে গেলো ৷ লোপ্পা ক্যাচটা লুফে দুহাত মেলে ডানার মতো করে অনেকখানি ছুট লাগালো অরিজিত ৷ গার্লস স্কুলের মেয়েরা তুমুল হাততালি দিয়ে উঠলো ৷
তিন নম্বরে নামলেন অভয়বাবু। ওভারের বাকি চারটে বল বাউন্ডারি লাইনের ঠিকানা পেরিয়ে গেলো ৷ জলে ভেজা মুড়ির মতোই মিইয়ে গেলো ছাত্রদল ৷ মুখ ছোট করে তারা শুধু বলই কুড়াতে লাগলো।
আরও চার ওভার কেটে গেলো ৷ দশ ওভার শেষে ৯৫ রান উঠলো বোর্ডে। একাদশ ওভারে বল করতে এলো মইদুল ৷ প্রথম বলটায় আলতো করে ব্যাটটা পেতে দিলেন অভয়বাবু ৷ উইকেটকিপার অচিন্ত্যর পাশ দিয়ে মাটি কামড়ে বলটা ছুটলো বাউন্ডারির দিকে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো শুধু অচিন্ত্য ৷ পরের বলটাও একইভাবে আলতো ব্যাটের ছোঁয়ায় পৌছে গেলো বাউন্ডারির সীমার বাইরে। তৃতীয় বলটা হঠাৎ করে উঠে এলো বুক সমান উঁচুতে। বলটা নামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বলটা গিয়ে জমা পড়লো উইকেটকিপারের হাতে। একটা বিশাল উল্লাসের আওয়াজ উঠলো মাঠের চারিদিকে ৷ মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেলেন তিনি ৷ ব্যাট করতে এলেন মজিদবাবু। চতুর্থ বলটা ইয়র্কার দিলো মইদুল ৷ বলটার আন্দাজ পাবার আগেই মিডল্ উইকেটটা উপড়ে ভূমিশয্যা গ্রহণ করলো ৷ বিস্ময়ভরা চোখে একবার উইকেটটার দিকে চেয়ে ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়লেন মজিদবাবু ৷ স্ট্যান্স নিয়ে অতনু দত্ত বেশ বেপরোয়া ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন ৷ মইদুল বলটা ফেলল একদম উইকেটের সামনে। উইকেট থেকে সরে এসে ব্যাটটা চালালেন তিনি ৷ কিন্তু ব্যাটের নীচের কানায় লেগে বলটা ঢুকে এলো উইকেটের ভিতরে ৷ লেগষ্ট্যাম্পকে স্পর্শ করে বেরিয়ে গেলো। সারা মাঠ গর্জে উঠলো মূহুর্তে ৷ হ্যাট্রিকের আনন্দে ততক্ষণে মাটিতে শুয়ে পড়েছে মইদুল। আর তার পিঠের উপর চড়ে বসেছে বাকিরা। সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। এবার স্যারদের মুখ ছোট করার পালা ৷ ১০৩ রানে ১ উইকেট থেকে ১০৩ রানে ৪ উইকেট ৷ এরপর চললো আসা যাওয়ার পালা। নিমেষের মধ্যে ম্যাচের মোড় ১৮o ডিগ্রি ঘুরে গেলো ৷ বাকি স্যাররা তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেন না ৷ ১৩০ রানে ১৮ ওভারেই শেষ হয়ে গেলো শিক্ষকদের ইনিংস।
কিংশুক আর অনুভব ব্যাট করতে নামার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হাততালি পড়লো ৷ বিশেষত মেয়েদের দিক থেকে। কিংশুক মেয়েদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। শিক্ষকদের মধ্যেও ৷ যেমন দেখতে, তেমনই পড়াশুনায় ৷ খেলাধুলায়ও চৌখস ৷ স্ট্রাইকিং এন্ডে স্টান্স নিলো কিংশুকই ৷ বল হাতে বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসলেন অতনু স্যার। বলটা ফুলটস। ব্যাট চালাল কিংশুক ৷ কিন্তু যে বলটা সন্দেহাতীতভাবে চার হবার কথা, সেটা এসে জমা হলো বোলারের হাতে – মাটি না ছুঁয়ে ৷ পুরো মাঠ জুড়ে নিস্তব্ধতা নেমে এলো ৷ অতনু স্যারও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ৷ 0 রানে ১ উইকেট ৷
বোর্ডে কোন রান উঠতে না উঠতেই উইকেট পতন ছাত্রদের অনেকটা সাবধানী করে তুললো ৷ দীপক নামলো তিন নম্বরে ৷ দীপক একটা দিক ধরল আর অনুভব সিঙ্গেলস নিয়ে খেলতে লাগলো ৷ প্রথম ৫ ওভারে রান উঠলো ২০ ৷ ষষ্ঠ ওভারের শুরুতেই আবার আউট। অনুভব বোল্ড হয়ে ফিরে এলো। সুরজিত একটা প্রচন্ড চাপ নিয়ে চার নম্বরে ব্যাট করতে এলো। ততক্ষণে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো স্যারদের টিম জয়ের নেশা পেয়ে গেছে ৷ বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাতে তারা মরিয়া। সুরজিত আর দীপক কিন্তু অঙ্ক মেনে খেলতে শুরু করলো ৷ প্রতি ওভারে ৭-৮ রান নিতে থাকলো তারা।
১০ ওভার পরে প্রমাদ গুণলেন অভয়বাবু। বুঝতে পারলেন দীপক আর সুরজিত খুব বুদ্ধি করে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ৷ ২০ রানে ২ উইকেট থেকে ১০ ওভার শেষে ৬০ রানে দু উইকেট ৷ স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করলেন তিনি। নিজেই বল হাতে তুলে নিলেন ৷ ফিন্ডিংটা আরো ছড়িয়ে দিলেন। প্রথম দুটো বল লোপ্পা দিলেন সুরজিতকে। প্রথমটা একস্ট্রা কভার দিয়ে চার হলো এবং দ্বিতীয়টা লং অফের উপর দিয়ে ছয় ৷ ২ উইকেটে ৭০ রান। তৃতীয় বলটা সাপের ছোবলের মতো বিষাক্ত ইনসুয়িং ইয়র্কার ৷ বলের লাইন পুরোপুরি মিস করে গেলো সুরজিত ৷ ব্যাটের কানায় লেগে বলটা জমা পড়লো সওকত স্যারের বিষাক্ত হাতে। বলটা তালুবন্দী করে সওকত স্যার এক ফুট লাফিয়ে উঠলেন ৷ অভয়বাবুও লাফাতে লাফাতে গিয়ে সওকতবাবুকে জড়িয়ে ধরলেন ৷ দুই রাশভারী মানুষের এহেন ছেলেমানুষী উপভোগ করলো গোটা মাঠ ৷ গার্লস স্কুলের প্রধাণশিক্ষিকা তথা অভয়বাবুর সহধর্মিণী কাকলিদেবী টাঙানো শামিয়ানার তলায় বসে লজ্জায় মাথা নিচু করলেন ৷
ছাত্ররা হঠাৎ করে আবার খেলায় খেই হারিয়ে ফেললো ৷ পরের পাঁচ ওভারে রান উঠলো মাত্র ২০ ৷ উইকেটও পড়লো আরও ১টি ৷ সবমিলিয়ে ১৫ ওভারের শেষে ৯০ রানে ৪ উইকেট। ৫ ওভারে তুলতে হবে ৫১ রান। কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। দীপক সপ্তদশ ওভারে হঠাৎ হাত খুলে মারতে শুরু করলো ৷ ঐ ওভারে ১৮ রান একাই তুললো সে। অপর প্রান্তে যোগ্য সঙ্গত দিতে লাগলো অনির্বাণ ৷ ১৭ তম ওভারের শেষে রান বাকি থাকলো ২৪ ৷ ১৮ তম ওভারে এলো ৫ রান ৷ ১৯ তম ওভারে ১০ রান।
শেষ ওভারে বাকি আছে ৯ ৷ হাতে ৬ উইকেট ৷ যদিও এখন হাতের উইকেট বেশি মূল্য রাখে না ৷ বল হাতে তুলে নিলেন অভয়বাবু। শেষ ওভারের দায়টা নিজের কাঁধেই তুলেই নিলেন তিনি ৷ যদি শিক্ষককূল হারে তো লোকে যেন তার কোন সহকর্মীর দিকে আঙুল তুলতে না পারে ৷ প্রথম বলটায় দুই রান নিল অনির্বাণ ৷ ৫ বল, ৭ রান বাকি ৷ দ্বিতীয় বলটা বাউন্সার দিলেন অভয়বাবু। ব্যাটটা ঠিকঠাক পজিশনে নিয়ে যেতে পারলো না অনির্বাণ। ৪ বল, ৭ রান ৷ তৃতীয় বলে একটা সিঙ্গেলস এলো ৷ ৩ বল, ৬ রান ৷ দীপক স্ট্রাইকিং এন্ডে ৷ চতুর্থ বলটা এলো ইয়র্কার ৷ ব্যাটটা কোনরকমে পেতে নিজের উইকেট বাঁচাল দীপক ৷ ২ বল, ৬ রান। পঞ্চম বলের জন্য যখন অভয়বাবু দৌড় শুরু করলেন দীপক লেগের দিকে একটু সরে দাঁড়াল। বলটা পুরোপুরি ব্যাটে পেয়ে গেলো সে ৷ বলটা ব্যাটের চুম্বনে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটলো বাউন্ডারির দিকে ৷ সহজেই মাঠের সীমানা অতিক্রম করলো ৷ ১ বল, ২ রান ৷ মাঠের মধ্যে একটা গম্ভীর ও টানটান উত্তেজনা নেমে এসেছে। প্রত্যেকেই যেন নিজের হৃদপিণ্ডের আওয়াজটি টের পাচ্ছে ৷
শেষ বলের জন্য দৌড় শুরু করলেন অভয়বাবু ৷ ইয়র্কার। ব্যাটটাকে কোনভাবে বলে স্পর্শ করিয়েই দৌড় শুরু করলো দীপক ৷ বলটা কভারের দিকে মাটি ঘেঁসে গড়াতে লাগলো ৷ চিলের গতিতে মাটি থেকে ছোঁ মেরে বলটা তুলে নন-স্ট্রাইকিং এন্ডের উইকেটের দিকে ছুঁড়লেন অতনু দত্ত ৷ দীপকের ব্যাটটা ক্রিজ থেকে তখনো তিন ইঞ্চি মতো দূরে, নন-স্ট্রাইকিং এন্ডের লেগস্ট্যাম্প উপড়ে দু মিটার দূরে গিয়ে পড়লো ৷ মাথা নিচু করে বসে পড়লো দীপক ৷ অভয়বাবু এসে দীপকের মাথায় স্নেহের হাত বোলালেন ৷
“খেলায় তো হারা জেতা থাকে রে”, পাশ থেকে অতনুবাবুও বলে উঠলেন ৷
পুরস্কার বিতরণীর সময় সকল ছাত্র-শিক্ষককে ডেকে নিলেন অভয়বাবু ৷ খুশিটা সবার সাথে ভাগ করে নিলেন ৷ পরেরদিন স্কুল ছুটির ঘোষণাও দিলেন ৷
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..