হিমাদ্রী চৌধুরীর এগারোটি কবিতা

হিমাদ্রী চৌধুরী
কবিতা
Bengali
হিমাদ্রী চৌধুরীর এগারোটি কবিতা

(রক্তজবা)

ঝড় বয়ে যায়।ফিরে আসে বাঁক।ধুলোয় লুটিয়ে হাসে ভেজা চোখ
ওই বালুকায় তবুও ছাপ পড়ে কখনো কখনো পোড়া শাবকের মৌন পালক

এখানে ঝরে না জল, আগুনের পেখমে ম্লান এই জলমুখ
অদৃশ্য শকুন উড়ে।খুঁটে খায়, লুটে খায় রক্তজবায়।

(জোনাক পোকা)

তোমার সৌরভ ম ম কোরে ছুটে দূরাক্রান্ত নিশানায়।আমি কিঞ্চিৎ দিকভ্রান্ত।বিছানায় বোলতা ফোঁটায় হুল — ব্যথা ফেলে আসি,আমাকে জড়িয়ে ধরে মান্দার ফুলবন।

কভু জ্বর আসে।ঘোরে কাঁপে ঠোঁট। তবুও নিবর জিকিরে তোমাকে পিষে রাখি দাঁতের তলায় — য্যানো আমার কোন ব্যথা নেই, নক্ষত্রহীন আকাশে তুমি বন ভর্তি জোনাক পোঁকার ঝাড়।

(রাত)

সন্ধ্যা শেষের মিছিলে রাত এক নিমগ্ন কালো ফুল — ক্রমশ গাঢ় ঘ্রাণ নাভি ফুঁড়ে উদ্বেল যৌবনে বেড়িয়ে পড়ে সরীসৃপ।পরতে লুকিয়ে থাকে কান্না, লবন বনের জোছনায় চাপা চিৎকার।বয়ে যেতে থাকে কিংবা আকাঙ্খায় থামিয়ে রাখে পলক — নৈঃশব্দে য্যানো পাতা ঝ’রে এমন মেকাপে রাঙিয়ে নেয় তার মোলায়েম পরশ।

(পুড়ে যাই)

চাঁদোয়ায় ধোঁয়া রঙ আমার বিপন্ন চোখে বিস্ময়ের তমাশা ঘোর
সদাই উলু ধ্বনি বাজিয়ে উড়ে ঝড়বান্ধব চুল
সে অদ্ভুত এক আগুন ত্রাস, আমি লণ্ডভণ্ড চন্দনবন
পুড়ে যাচ্ছি, খুব পুড়ে যাই…

[কবিতাটা চূড়াকে উৎসর্গ করা হলো]

(বিপন্ন বিউগল)

অথবা
আমরা
না
তাকিয়েই
গড়িয়ে
যাওয়া
মার্বেল

ঘুমহীন এই অবরুদ্ধ মিনারে জোনাক পোকার জল

চিৎকারে
ভাসে
নদীমাতৃক
অবগাহন

ক্যালকাস জুড়ে মহাজাগতিক উড়ালপথ — অতীত পুরুষ বিপন্ন বিউগলে ছুটে…

(বধির ফুল)

বিপন্ন বাঁশিতে নদীর শিরায় আউলা সাঁতার কাটে সংসারী মাছ।চোখের ডগায় হুদহুদ পাখির লিরিক্যাল উড়াল য্যানো একখণ্ড হলুদ ক্ষেতে দৌড়ে বেড়ানো কিশোরী ঝড়।তুমুল উত্থানে কেউ শিথানের পাশে দাঁড়ায় — একটি শান্ত পূর্ণিমার গোসল হয় নামে বিক্ষুব্ধ দ্যাশে।কোন ছিন্ন আয়াত নয় পরিপূর্ণ তিলাওয়াতে সে পপিফুলের নূপুর

মাতাল!
মাতাল!
মাতাল!

ঘোরের ভিতর পাইথন জড়িয়ে ধরে।হাড়গোড় চুরমার কোরে প্রশ্ন জাগে — এতো ধুসর ক্যানো পথের পান্ডুলিপি, হে পথিক?

একটি দু’টি বধির ফুল ঝরে পড়ে এপিটাফে…

(ঘোর)

আততায়ী এই প্রহর — আমি গোলাপ পেরিয়ে ছায়া ঘাতক বনে গ্যাছি। নিভু নিভু সুখে মরিচ বাতির ব্যাকরণ। বেধড়ক মুখস্থ সড়কে দাড়ি-কমাহীন দৌড়, ফিরে যায় অলস দুপুরের গীত-বিতান। প্রাসঙ্গিক ক্রোধ ভেঙে চাঁদ হাসে সূর্যদীঘল নীড়ে — রক্তে মাইলাম, চোখে চিৎকার

কারফিউ যেন চন্দন ফোঁটা।বিস্ময়চিহ্নের ঘোরে কেটে যায় বিষাক্ত শরীর যন্ত্রণার ঐশ্বর্যে।

(কুয়াশা রঙা ফুল)

…অথচ দীর্ঘ হচ্ছে প্রহরের ব্যথা।দুপুর গুলো ফ্যাকেশে এক ঘাম ঝরানো মেশিন।আমি সেলাই হচ্ছি উত্তাপে।পুড়ে যাচ্ছে গোলাপডাঙার আয়ু।চোখের সম্মুখে বিস্তীর্ণ জলাশয় — তুমি কুয়াশা রঙের ফুল হয়ে হেঁটে বেড়াও অন্য কারো হাতে।

(লিখে নিও বাতাস)

তোমার ললাটে লিখে নিও সেই বাতাস — ফাগুনের দ্বিচারিণী কৃষ্ণচূড়ায় যার কথা রঙ হয়ে ঝরে কাক ডাকা ভোরে।

উদ্ভট
লাল
এক
রাজকীয়
পোষাকি
পিচ

নিতম্বের চেয়েও সরস চিত্রকলায় ছেপে রাখো উল্টানো ছাতার শাড়িতে সেই বাতাসে ধনুষ্টংকার হাসি…

(আত্মমগ্নতা)

আত্মমগ্ন হয়ে ডুব সাঁতারে ভুলে যাই ভাসমান জাহাজীর লাল চোখ — ঝুলন্ত চাঁদের বেনারসি বেদনার ত্রস্ত সেলাই।বিক্ষোভ জাগে,নত হয়ে পরে ড্রপারের বিচ্ছুরণ…

এক ফালি কুমড়ো রঙের আলো আমাকে ভাগ করে রাখে মুদ্রার এক পিঠ জুড়ে। ও’পাশে নাইট ফলস্ ; শিশির ক্ষেত্রে কান্না হয়ে হাসে ঝিলিক কুমার।গভীর এক আড়ষ্টতায় বুক বৃক্ষ শাবকের ঘুম ভেঙে যায়।

য্যানো পৃথিবী এক মৃত্যু পথের দাঁগ।মগ্ন হয়ে এখানে কেউ কেউ বিলাপে আঁকেন আয়ুষ্কালের সৌরভ।

(সংবাদ)

ছলাৎ শব্দে ভাঙছে নদীর শরীর — ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে কুয়াশায় মোড়ানো দিগন্ত। ও’ধারে বিস্তীর্ণ পাড় সবুজ শাড়ি পড়া কিশোরীর ডাগর ভ্রুর হরিণক্ষেত্র এক।

ভাসছে লৌহ জাত জাহাজ, কাঠ নৌকার দল।অদ্ভুত আওয়াজে মাঝেমধ্যে বাজছে সাইরেন, সরে যাচ্ছে গাঙশালিক, কচুরিপানার সংসার (য্যানো) আয়োজন করে মাস্তুলে দাঁড়িয়ে থাকা সারেং পৌঁছে দিচ্ছে সংবাদ দ্রুত — প্রস্তুত হও ঘর, বিছানায় সাজাও সিঁদুরে আলাপন…

হিমাদ্রী চৌধুরী। কবি ও শিক্ষার্থী। জন্ম ও বাস বাংলাদেশের ঢাকায়। লেখাপড়া করছেন ইংরেজি সাহিত্যে। তিনি স্বপ্ন দেখেন পৃথিবী হবে ক্ষুধা ও বৈষম্যমুক্ত। তিনি বিশ্বাস করেন, ভুল বোধের প্রাচীর ভেঙে একদিন আলো আসবেই।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ