হিমাদ্রী চৌধুরীর সাতটি কবিতা

হিমাদ্রী চৌধুরী
কবিতা
Bengali
হিমাদ্রী চৌধুরীর সাতটি কবিতা

সময়

হাতের ঘড়িটি থেমে গ্যালো,
তবুও থামছেনা সময়ের চাকা

আমার ভিতর কমছে সময়
সময় কাটছে সুতা

চেনা
বর্ণে
পোড়া
গন্ধ

পোড়া
গন্ধে
হারা
ছন্দ

বিজ্ঞাপনে নিখোঁজের দলে আমি
ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে গ্যালাম দ্রুত।

 

প্রফেসার

মা আমার গণিতে বড্ড কাঁচা, বাবা জিনিয়াস, মাঝে মধ্যেই বলেন কালিধন বিএসসির কথা। ডাস্টারে ফাটা কপালে দাঁগ — গণিতে লেটার মার্ক! শক্ত চোয়ালে গুঁড়িয়ে যায় আমাদের সন্ধ্যারাতের বনভোজন।

আমরা হা হয়ে তাকিয়ে থাকি। বুঝতে পারি আমাদের মা অংক নির্মাণ করেন সূত্রবিহীন থালে

যদিও মা গণিতে কাঁচা, সে জানে না —
(a+b)²= a²+2ab+b²
তবুও সে সংসার নামক অংকে এক দুর্দান্ত কলাকার

বাবা জিনিয়াস, তবুও আমাদের কাছে
অংক মানে — আমাদের মা প্রফেসার।

 

ভুল প্রেম, ভুল বয়স

ভুল প্রেমে কেটে গ্যাছে ভুল বয়স
আমাকে — না ছুঁয়েছে প্রেম
না ছুঁয়েছো তুমি

কয়েক আউন্স ভুল ফাগুন চলে গ্যালেও
একটি উজ্জ্বল বৃত্তে বন্দী আমি এখনো
খুঁজে খুঁজে ফিরি বৃত্ত ভাঙার ছক ; মুক্তির যাবতীয় সূত্রাবলী

দুঃখরা একান্নবর্তী, (আর) আমি এক বিচ্ছিন্ন ইনাক, মাচুপিচু
এক ঝাঁক পায়রার মধ্যে বুলেটে বিদ্ধ একটি পায়রা ; যে উড়ছে, উড়তে উড়তে ভাবছে —
ক্যানো সে উড়ছে?

বুকের মধ্যে আজও জাজ্বল্যমান একটি অবয়ব, হাসির মমিফিক্যাশন
নিতম্বহীন রাত্রির এক আলোকিত একতারা

ঝড়ে পড়ছে প্রভাত কুড়ানো সুখ
ভুল প্রেমে কেটে যাওয়া বয়স।

 

লোভ

“ইলিশ মাছের পেটির ভিতর মায়া হরিণের মাংস”
এমন একটি তত্ত্বে নিজ শিশু কে লোভ শেখাচ্ছে পরিবার

শিশুটি বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে

একজন শিকারী
একজন খাদক
একজন হন্তারক
.
মাংস প্রাসঙ্গিক গো+এষণা শেষে আশ্চর্য এক বিভেদ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে জিহ্বার ডগায়, চেতনাদণ্ডে — মাংস/নারী মাংস
(মূলত দুটিই হয়ে উঠছে ভোগে উপভোগ্য)

কেবল ন এর ঘরে জন্ম নিচ্ছে লোভ
কামার্ত দৃষ্টির উষ্ণ প্রস্রবণ, লক লকে লালা প্রণালী…

হাওয়া বদল

ট্রাংক ভর্তি আবেগে ন্যাপথালিন ঘ্রাণ
কৌটো বন্দী প্রেমেই যখন জমাট ব্যথা
ছেঁড়া তারের টেলিফোনে রিং বাজলেই
উদাস তাপস দৃষ্টি বাড়ায় আকাশ পানে

মেঘবালিকা তখন ছিলো দারুণ সজিব
হাতগুলো থাকতো ভিজে শিশির ফোঁটায়
চোখের তারায় বসত ছিলো ষড়ঋতুর
ঘুড়ির মতোই উড়াউড়ি ভাবনা গুলোর

তরুণ তাপস মেঘবালিকার চুল ছুঁয়ে
বলতো যখন ভালবাসি বিভোর হয়ে
মেঘবালিকার লাজে রাঙা ঠোঁটের তিলে
উঠতো ভেসে পৌষালী রোদ রাত-দুপুরে

মেঘবালিকার বুকে যখন আলোর ভাঙন
কর্পোরেটেই নাক ডুবিয়ে ভুললো শপথ
তরুণ তাপস উদাস হলো জলোচ্ছ্বাসে
দিনগুলো সব বদলে গেলে এক নিমিষে।

আদালত

সর্বশেষ বার আমি প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
ওর বুকের ঘ্রাণ আমাকে কেমন যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দ্যায়, আমি হৃদপিন্ডের আওয়াজকে ভেবে নিই তারপুরা, আমার ঘুম চলে আসে
(আর) সে আমাকে সঙ্গমের জন্যে জাগাতে থাকে —
ঠোঁট ছোঁয়
চুমো খায় আঁচড় কাটে
গরম শ্বাসে আমাকে জাগিয়ে তুলে

অথচ, আমি তখনো সঙ্গমের জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না।

একটি ব্যর্থ সঙ্গম — ফলাফলঃ শূণ্য!

রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে প্রেমিকাটি
আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দ্যায়
চেঁচিয়ে বলে, খানকির পোলা! তুই পুরুষ না!

সে চলে যায়!

তারও আগে আমি আমার অন্য প্রেমিকার হাত ধরেছি , ক্রমশ আমার চোখ লাল হয়ে ওঠে গরম শ্বাসে আমি নিজেই তেঁতে উঠেছিলাম চুল্লীর মতো
(মনে হচ্ছিলো একখুনি ঢুকে যাই পৃথিবীর প্রাচীনতম গুহায়)
আমি তাকে আরো কাছে টেনে নিই
আঙুলে চুল বিলি কেটে গাঢ় করে চুমো খাই ঠোঁটে! আমার হাত চলে যায় ঠিক বুকের বা’পাশে, যেখানে তার পাহাড়ের মতো উচু ঢিবি!

আমি হাত দিতেই সে খেঁকিয়ে ওঠে —
বদমাশ! চরিত্র বলে কিছু আছে তোর!

সেও
চলে
যায়!
মূলত তখন আমি সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত ছিলাম।

তারও আগে আমি বহু প্রেমিকার বুক ছুঁয়েছি,ঠোঁটের চুমোয় শুঁষে নিয়েছি ভূমধ্যসাগর!
সফল আর ব্যর্থ সঙ্গম আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি! কেননা — আমি তখন ভীষণ প্রেমিক।

বহু গণিকার হাত ধরে আমি আকাশ দেখেছি, চাঁদ কে বলেছি রূপহীন,
কেউ কেউ সাড়া রাত আমার বুকের বুনো ঘাঁসে আঙুল সাতার কেঁটে কেঁটে বলতো —
বাবু! তুই ই পুরুষ…

এখন আমি মৃত! বিচার সভা উপস্থিত।

সম্মুখে ঈশ্বর আর আমার প্রেমিকার দল!
বিচার কার্যের এক পর্যায়ে — হিসেব শুরু হলোঃ ঠিক কতজন কে আমি বিছানায় বুনো মোষের গল্প বলেছি আর কতজন কে আকাশের কথা বলতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি!

ঈশ্বর তাকিয়ে আছেন, শুনছেন সব!
কেউ বলেঃ আমি পুরুষ নই সুতরাং আমাকে নরকবাসী করা হউক
কেউ আবার বলেঃ না না “ওকে স্বর্গ আর নরকের মাঝামাঝি রাখা হউক”
কেউ বা নিবর শোকে! কেউ চায় সেখানেও আমি তার হই।

সম্মুখে ঈশ্বর! অথচ, যুদ্ধ বেঁধে যায় প্রেমিকাদের মধ্যে —কে চায়, কে চায়না।

হঠাৎ ওপাশ হতে (হয়ত নরক হবে) হঠাৎ
হৈ চৈ উঠে! ওরা বলে — ঈশ্বর, বাবুকে আমাদের দিন, সে আমাদের আকাশের গল্প বলেছে, চাঁদ কে শ্রুশ্রষাহীন বলে আমাদের মাথায় গোলাপ গুঁজেছে,
বাবু আমাদের বুনো হরিণ আর মোষদের কথা শুনিয়েছে
হে ঈশ্বর, বাবু কে আমাদের দিন!

ঈশ্বর একটি প্রশ্ন করলেনঃ
আচ্ছা বলো — প্রেম কি?
আমি আঙুলের ইশারায় গনিকাদের দেখাতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

হ্যাঁ, সর্বশেষ ঈশ্বর বলে উঠেছিলেন-
The Court is Adjourned for forever.

ব্যথা

তিন পয়সার জোছনা কিনে আমার একান্ত নিকটবর্তী ব্যথা সমূহে সঙ্গে মিশিয়ে এক গামলা
মুড়িঘণ্ট কোরে, সঙ্গে দুয়েক টুকরো সুখের নান
স্মৃতির কাঁচা ঝাল লঙ্কা সমেত চিবিয়ে খাবো

ঝাল লাগলে নিন্মমুখী হা হয়ে লালা ঝরাতে ঝরাতে শুনবো দ্রুত লয়ের অশ্ববাহী সঙ্গীত —
” চাবুক চাবকে ঝরুক ব্যথা “

হিমাদ্রী চৌধুরী। কবি ও শিক্ষার্থী। জন্ম ও বাস বাংলাদেশের ঢাকায়। লেখাপড়া করছেন ইংরেজি সাহিত্যে। তিনি স্বপ্ন দেখেন পৃথিবী হবে ক্ষুধা ও বৈষম্যমুক্ত। তিনি বিশ্বাস করেন, ভুল বোধের প্রাচীর ভেঙে একদিন আলো আসবেই।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..