গৌর (মালদা) – বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..
পাহাড়ের বুকের ওপর বিমানবন্দর। যাকে বলা হয়’ দ্য মোস্ট ডিফিকাল্ট এয়ারপোর্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড!’ রানওয়েতে একটা মাত্র বিমান দাঁড়িয়ে আছে আর আমাদের বিমান চমৎকার একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মাত্র অবতরণ করলো সবে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করে বাইরে এলাম। সার্কভূক্ত দেশ হিসাবে অন এরাইভাল ভিসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিবার নিয়ে প্রথম দেশের বাইরে ঘুরতে আসা। লাগেজের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। আমাদের লাগেজ চলে এলো একেবারে প্রথমেই। আমরাও দেরী না করে বের হয় এলাম। আমরা মানে আমার পরিবার। পুত্র ফারহান ইশরাক বুলবুল আর জীবনসঙ্গিনী সরকারী কলেজের শিক্ষক সাজেদা শারমিন।
ড্রাইভারের সাথে দরকষাকষিতে সুবিধা হলো না, চেয়েছিল ৮০০ রুপী।নেপালে সরকারী ছুটির দিন, এই অজুহাতে সে জানালো দরকষাকষি করে কোনো লাভ নেই। বউয়ের ছটফটানি, আর বিমানযাত্রার ক্লান্তি মিলেমিশে বললাম, মশাই রাজি।
ট্যাক্সি চলতে শুরু করলো, জানলাম, তাঁর নাম রমেশ থাপা। রেন্টে কার চালালেও সে রাজনীতি নিয়ে উৎসাহী মানুষ। কথায় কথায় জানালো, ভারত একটি সম্প্রসারণবাদী রাষ্ট্র, যে কিনা বানিজ্যিকভাবে গিলে ফেলতে চায় নেপালী জাতিকে। ভারতের আধিপত্য মানতে না পারায় তাঁর পছন্দ গণচীন।পরবর্তীতে অন্য নেপালীদের সাথে আলাপেও বুঝা গেছে, নেপালীরা বাংলাদেশকে যেমন মিত্ররাষ্ট্র মনে করে,তেমনি চীনকে ভাবে বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতীয় রুপির কদর যেমন আছে কাঠ মান্ডুতে, এর বিপরীতে আছে ভারতীয় শাসকশ্রেণীর ওপর সাধারণ জনগণের উগরে ফেলা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের থাকার জায়গা জমকালো নয়, মাঝারি মানের হোটেল গ্যালাক্সি। পাঁচতারকা না হলেও, চার তারকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই নি। রাতের ঘুরাঘুরি করেছি তামেল এলাকায়, খুঁজে বের করেছি, বিসমিল্লাহ ও মোহাম্মদী নামক দুটি সুস্বাদু হালাল খাবারের হোটেল।
পরদিন, নাস্তা করেই রওয়ানা দিই বানর দর্শনে। স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির বানরের মন্দির হিসাবে খ্যাত। ২৪ শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই মন্দির। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নেপাল হলেও, নেপালের অন্য পরিচয় নেপাল পৃথিবীর বুকে একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র। হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রীতির এই যে মিলন, তাতে বড় ভূমিকা রাখছে, কাঠমান্ডু উপত্যকা পাহাড়ের এই মন্দির। হাজারো পুন্যার্থী আর পর্যটকের ভীড় ঠেলেই, বুদ্ধের মূর্তি দেখতে দেখতে আমরা এগোই, তিনশত চৌষট্টিটি সিঁড়ি বেয়ে মাঙ্কি টেম্পলে ওঠার কসরতে! এ এক বিশাল শারীরিক অনুশীলন। আমরা বানরদের সাথে বাঁদরামি করতে করতে কখনো শিশু হয়ে যাই। বানরাও সঙ্গী হয় চিপস, চকোলেট, এর লোভে পড়ে। সর্বোচ্চ উপরে ওঠে গেলে, আমাদের ভালোলাগে রাজধানী কাঠমান্ডুর মনোমুগ্ধকর ভিউটা দেখে। ছবি তুললাম আর পুরো শহরের রুপ দেখলাম চাতক পাখির চোখে। তাঁরচেয়েও বেশি সবার মনযোগ আকর্ষণ করতে আমার ছেলের প্রানবন্ত দুষ্টুমি, এরকম রোমান্টিক মুহুর্তের দুষ্ঠামিটুকু ইউরোপীয় পর্যটকদের মন কেঁড়ে নেয়। ছোট্ট বুলবুল এর সাথে অনেকেই সেলফি তুলেন। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামাটা বেশ সুখকর হলেও মনে হলো সুকান্ত বাবু চলে এসেছেন কাছাকাছি বুঝি ’ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ কথাটি জানাতে। মধ্যবয়স্ক মহিলা নেপালী রীতিতে প্রার্থনার ভঙ্গিতে সম্ভাষণ জানান,হাতের পরিস্কার কাঁপড় দিয়ে আগন্তুকদের বসার জায়গা মুছে দিলেন। অদ্ভুত এক আন্তরিকতার ছোঁয়াতে সম্বিৎ হারাই! সমাজতান্ত্রিক সমাজের মনোভাবাপন্ন নেপালীদের অতিথি ভালোবাসার আসলে জুড়ি নেই। বিল আসলো নিয়মমাফিক, ও রীতিসিদ্ধ অন্যান্য টুরিস্টকান্ট্রির মতো পকেটকাটার বন্দোবস্ত এখানে একেবারে নাই।
এরপর আমরা এগোতে থাকি, কাঠমান্ডুর আরেক বিষ্ময় পশুপতিনাথ মন্দিরের উদ্দেশে। প্রথমেই মনে হলো মন্দিরটি চৌকোনা। সারা গায়ে সোনা আর রুপার ঝলক। প্রধান দরোজা খুঁজে পেতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হলো!প্রধান দরোজা চারটি এবং সেই চারটিই রুপায় আবৃত। ভেতের ঢুকে দেখি, মন্দিরের পবিত্রকক্ষ। এখানে ছ’ফুট লম্বা দীর্ঘ শিবলিঙ্গ। নীচ থেকে মন্দিরের চূড়াটা পর্যবেক্ষণ করলাম, জানলাম এটাও খাঁটি সোনার তৈরি। ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য বেশ জরুরি এ জায়গাটা ঘুরে যাওয়া, কেননা এখানে রয়েছে রামায়ণ, পুরাণের বিভিন্ন কাহিনিচিত্র যার জৌলুস, পৃথিবীর নানা দেশের পর্যটকদের এদেশে টেনে আনছে।
সকালের সূর্যের ওম নিচ্ছে লোকেরা, কর্মজীবীরা বেরিয়ে পড়েছেন, প্রাইভেট কার,মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল, নানা রঙের লোকাল বাসে অফিসের উদ্দেশে। কেউ পরেছেন জিন্স, টিশার্ট কেউ নেপালের জাতীয় পোশাক। বাইরে জীবন সংঘর্ষের নিদাঘপীড়িত রুপ অথচ ভেতরে অন্তরাত্মায় এরা পরোপকারী। হাসিমুখে মানুষের প্রতি অমল ভালোবাসাটা জারি রাখা টের পেয়েছি, প্রতিটি নেপালীর ভেতরে। নেপালী জনগণকে পরখ করে নিতেই যেন, আমরা ওঠেছি একটি বিরতিহীন বাসে। যাবো রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে। প্রাচীন নেপালের রাজধানী ভক্তপুরে। মধ্যযুগীয় শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকাজ, ধাতব তৈরি মূর্তি আর আসবাবপত্রের যাদুকর সব মিলিয়ে জায়গাটা অসাধারণ। এখানে টিকিট কেটে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হয়। পাঁচ বছরের নিম্নের শিশুদের ফ্রি। প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে ১০০০ রুপিতে দুটো টিকিট কেনা হল। গাইড নিতেই হলো, কারন জায়গাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি মনভোলানো কিছু মিথের ব্যাখ্যা আপনি পেয়ে যাচ্ছেন মাত্র পাঁচশত রুপিতে। পঞ্চান্নটি জানালা সমৃদ্ধ রাজপ্রাসাদটি দেখতে চিত্তাকর্ষক।
গাইডের সাহায্য নিয়ে আমরা এখানে কিনলাম পশমিনা শাল, নেপালী টুপি, আংগোরা সুয়েটার, জ্যাকেট, পাথরের মালা, দুল, লিপস্টিক, ব্রেসলেট, চুড়িসহ মনোহারী পন্য। বেশকিছু নিজেদের জন্য বাকীটা স্বজন-বন্ধুদের মধ্যে করা হবে উৎসর্গ। থামেলে ফিরে এসে আমরা পরদিনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠি। আমাদের দিনে দিনে ফিরে আসার তাড়া থাকলেও হোটেল ম্যানেজার মনোজ রাজবংশী সূর্যাস্ত দেখে ফিরে না এসে বরং কোনো কটেজে নৈশযাপনের পরামর্শ দেন, যাতে না কি ভোরে নাগোরকোটের সৌন্দর্যটা দেখে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ বনে যাবে! আমরা নাগোরকোট যাচ্ছি জেনে নেপালী মেয়ে ভিকি আর ভারতীয় নরেশ ছেলে আমাদের যাত্রাসঙ্গী হন। বেশ চড়াই, এবড়োখেবড়ো সরু রাস্তা, এমন কিছু বাঁক আছে যা ওখানকার এক্সপার্ট ড্রাইভার ছাড়া কেউ ঠিকঠাক গাড়ি চালাতে পারবেনা,একটু এদিক-সেদিক হলেই থাকবে সহস্র ফুট নীচে পড়ে যাবার ঝুঁকি। মন ভরানো নীল আকাশ, সবুজ পাতায় দোল খাওয়া ছোট্ট সানবার্ড…যেন মানুষের বদলে আজ পুরোটা পথ ওরাই দখলে নিয়েছে। যেতে যেতে দেখছিলাম, পাহাড় থেকে লাফিয়ে নামছে খুব সরু ঝিরঝিরে ঝর্ণা।কৃষানের ঘরের ওঠোনে লাল বনমোরগের দাপাদাপি!শূকরছানাদের দৌরাত্মও দেখবার মতো। গ্রামে রৌদ্রস্নানে জেগে ওঠছে শুকাতে দেওয়া ভুট্টা আর আলু বোখারা। পায়ে হেঁটে চূড়ায় ওঠার মুহূর্তে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, কাঠমান্ডু থেকে নাগোরকোট যেতে আমাদের ব্যয় হলো দু’ঘন্টা। কাঠমান্ডু থেকে বত্রিশ কিলোমিটার দূরত্ব হবার কারনে পর্যটকদের আকর্ষণ উপচে পড়ছে এর সারা দেহে।
চূড়া বেয়ে উপরে ওঠার ক্ষণে ক্ষণে দেখা হলো প্রচুর ইউরোপীয় পর্যটকদের সাথে, এরা প্রচুর অর্থ এবং সময় ব্যয় করে এসেছেন হিমালয় কন্যার অপরুপ হাসিটি মনের মন্দিরে ধরে রাখার জন্য। অপরুপা নাগোরকোটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গ্রাম। এটাও এখানে কিংবদন্তি যে, পৃথিবীর অন্যান্য গ্রামে বসবাসকারী জনগণ যখন মাঠ থেকে গগণ অবলোকন করেন, সেখানে নাগোরকোটের বাসিন্দারা অনেকটা নীচে তাঁকিয়ে নীলিমার নীল পরখ করেন। স্বর্গের অপার্থিব সৌন্দর্য এভারেস্ট ছাড়াও আরো কয়েকটি ভিউ যেমনঃ লাংটাং, মানাসলু, গৌরিশংকর চূড়া এখান থেকে পরিস্কার দেখা যায়। চূড়ায় ওঠার মুহূর্তে আরোও দেখতে পাবেন, আগন্তুকদের চাহিদা মেটাতে আমাদের দেশের ছোট্ট টঙ দোকানের মতোই কয়েক কিলোমিটার পরপরই অনেকগুলো মেহমানখানা। যেখানে অল্পটাকায় স্যুপ, নুডুলস, চিকেন ফ্রাই, রাইস পাওয়া যায়। আবার সিগারেট থেকে মদ সবই সবই এখানে নাগালের মধ্যে।
দিনশেষে সুর্য যখন পাটে বসছে, আমরা তখন আরোহন করলাম নাগোরকোটের সর্বোচ্চ টাওয়ারে। লজ্জায় রাঙা সূর্যটা। সে লাজের ছোঁয়া লাগে নাগোরকোটে। মনে হলো প্রথম পলকেই প্রেম। শরীরে প্রচন্ড ক্লান্তির দখল তবু মনপোড়ানো প্রেমের পিয়ানোতে বাজছে নাগোরকোটের মিষ্টি বাতাস। সেই বাতাসেই যেন শুনলাম মহাকবি শার্ল বোদলেয়ার এর প্রতিধ্বনি; “বলো, আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?” আমি দেখছি, আশ্চর্য মেঘ কেটে কেটে প্রশ্নকে প্রশ্রয় দিয়ে কিভাবে বড় হচ্ছে ঝকমারি চাঁদ। বিষ্ময়ে অভিভূত শারমিন পাশ থেকে বলে ওঠলো, দেখো নরোম আলোয় কেমন করে ভিজে ওঠেছে নাগোরকোট; দেখো কী শান্ত অথচ বাঙ্মময়! ভেসে চলা সাদা মেঘেরা হঠাৎ যেন ব্যস্ত হয়ে ওঠলো…একমুঠো ধূসর কালো মেঘ এসে জড়ো হলো। চাঁদ ঢাকা পড়লে, বৃষ্টি এলো তাঁর অনন্ত আদর নিয়ে। বৃষ্টি আর পাহাড়ের হিমে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ে দেখি, শখের ডিজিটাল ক্যামেরার তথৈবচ অবস্থা! বুনো ঘাস আর কমলালেবুর গন্ধ মাড়িয়ে আমরা ফিরে আসি কটেজে। পরদিন প্রভাতের সূর্যমামাকে যে ধরতে হবে!
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..
এপিসোড-১ (প্রথমাংশে রেল-জংশন) সে তিন যুগ আগের কথা।ঢাকা থেকে এসে বিল্টু মামা নেমেছেন কুলাউড়া জংশন…..
কবি কাশীরামদাসের জন্মস্থান পূর্ববর্ধমান জেলার সিঙ্গিগ্রামে বেড়াতে গেলাম।তাঁর জন্মভিটের ভগ্নাবশেষ দেখলাম।আমি,মিহির,রিমি,সোমা,রজত সকলে গ্রাম ঘুুুুরলাম। চারদিকে…..
ভ্রমণবিলাসী চারজন বেরিয়ে পরলাম ভ্রমণে। আমিও গেলাম।প্রথমে ওরা গেল মুকুটমণিপুর। সপ্তাহান্তে পিকনিক বা একদিনে ছুটিতে…..