হিয়া

ইসরাত জাহান
গল্প
Bengali
হিয়া

হিয়া বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পুরো নাম কাজী হিয়া তারান্নুম। হিয়ার বাবারা দুই ভাই। কাজী রফিক ও কাজী সফিক।হিয়ার বাবা কাজী রফিক বড়। রাজশাহী সাহেববাজারে দুই ভাইয়ের একটি বড় তৈরি পোশাকের দোকান আছে। দোকানটা হিয়ার দাদার ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর দুই ভাই মিলে এই ব্যবসা সামলান। রাজশাহী শহরের উপশহরে ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন তিন নাম্বার সেক্টরে হিয়াদের বাড়ি। দোতলা বাড়ি। অনেকটা জায়গা জুড়ে। চারিদিকে গাছ গাছালিতে ভরা। বাড়িতে সদস্য বলতে পাঁচজন। হিয়া,বাবা, মা,কাকা,কাকীমা। কাকা কাকীমা নিঃসন্তান। এখন জানুয়ারি মাস চলছে। মার্চ মাসেই হিয়ার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। লেখাপড়ার খুব চাপ। হিয়া বরাবরই মেধাবী ছাত্রী। সব কিছুই ঠিক ঠাক চলছিল। জানুয়ারির দশতারিখে হিয়ার বাবা মা গেলেন পুঠিয়াতে ওদের নিকট আত্মীয় একটি পরিবারে বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। সামনে পরীক্ষা বলে হিয়া গেলনা। কাকা কাকীও রয়ে গেলেন। বাবা মা সেখানে দুদিন থাকবেন। ফিরবেন বারো তারিখে। বারো তারিখ সন্ধ্যায় বাবা হিয়াকে ফোনে বললেন আমরা একটু পরে রওনা দেব।

পুঠিয়া থেকে উপশহরের দুরত্ব ঘন্টাখানেক এর মত।তাছাড়া নিজেদের গাড়ি। বাবা নিজেই ড্রাইভ করবেন।কথা শেষ করে হিয়া পড়তে বসল।তারপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হল।রাত দশটা বেজে গেল কিন্তু বাবা মা আসার খবর নেই।কাকা কাকীমা ও খুব চিন্তায় পড়লেন।এদিকে কাকা বারবার ফোন করছেন বাবা মার মোবাইল নাম্বারে। কিন্তু দুজনের ফোন বেজে যাচ্ছে অথচ কেউ ধরছেন না।আত্মীয় বাড়িতে ও ফোন করা হল।তারা বললেন বেরিয়ে গেছেন অনেক আগেই।এভাবেই রাত দুটো বাজল।

কাকা প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুঠিয়া যাবেন বলে।সেখানকার আত্মীয় স্বজনেরা ও বেরিয়ে পড়েছেন খোঁজে।তারপর হঠাৎ বাবার নাম্বার থেকে কাকার ফোনে কল এল ।কাকা ধরেই বললেন এতক্ষণ ফোন তুলছিলেন না কেন?কিন্তু ও প্রান্ত থেকে কেউ কিছু বলল।কাকা ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়লেন। কলটি পুলিশ করেছিলেন বাবার নাম্বার থেকে কাকার ফোনে।তারপর বাড়িতে কান্নাকাটি ছুটোছুটি চিৎকার। কাকী হিয়া কে জড়িয়ে ধরে থাকলেন।সারারাত এভাবেই কাটল।সকালে বাবা মা ফিরলেন।কিন্তু লাশ হয়ে।পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার সময় পুঠিয়ার সেই গ্রাম ছাড়িয়ে পরের গ্রামের একটি আম বাগানের ভেতরের রাস্তার সামনে গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি থামানো হয়।তারপর দুজনকেই গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত মুখ বেঁধে টাকা পয়সা গয়না কেড়ে নেওয়া হয় এবং দুজনকেই ছুরিকাঘাত করা হয়।নির্জন গ্রামের ফাঁকা রাস্তায় কাজটি তারা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করে চলে যায়। তারপর প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণে দুজনেই সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন।ঘটনার দুই তিন ঘন্টা পর দুজন পথযাত্রী ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি থেমে থাকা গাড়ি দেখতে পেয়ে গ্রামের লোকজন জড়ো করেন।তারপর আশপাশে খোঁজ করে পাশেই আম বাগানের ভেতর দুটো লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।এই ঘটনা শুনে ও বাবা মাকে একসঙ্গে এই অবস্থায় দেখে হিয়া চেতন হারায়।চারদিন পর হিয়ার চেতন ফেরে।কিন্তু হিয়া খুব চুপচাপ হয়ে যায়।কাকা কাকী সব সময় হিয়া কে জড়িয়ে থাকে।খুব যত্ন করে।বোঝায় তুমি একা নও আমরা তো আছি।তুমিই আমাদের সব।তোমাকে স্বাভাবিক হতে হবে।লেখাপড়া করতে হবে।বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।হিয়া বুঝতে পারে সব।কিন্তু মেনে নিতে পারেনা বাবা মা নেই।এভাবেই চলতে থাকে।তারপর মার্চে হিয়ার পরীক্ষা শুরু হল।হিয়া অংশ গ্রহণ করল পরীক্ষায়। এপ্রিলের শেষে পরীক্ষা শেষ হল।কিন্তু হিয়া কেমন মনমরা হয়ে গেল।সারাক্ষণ একা থাকার জন্য বাহানা খুঁজতে থাকে।

সতের বছর বয়সের হিয়া সদ্য বাবা মা হারিয়ে ভীষণ রকম শূণ্যতা বোধের অস্থির দোলাচলে দুলতে থাকল। মে মাসের চার তারিখ হিয়ার জন্মদিন।আগের দিন সকালে কাকা বললেন হিয়া মা,প্রতিবছর তোমার জন্মদিনে আমরা কত আনন্দ করি,কত কেনাকাটা করি কিন্তু এই প্রথম এত কষ্ট বুকে নিয়ে তোমার জন্মদিন পালন করতে হবে ভাবিনি।কিন্তু ভাই ভাবি নেই আমরা তো আছি।আমরা ও তো নিঃসন্তান। এখন থেকে তুমি আমাদের সন্তান। তোমার জন্য ভাই ভাবি যা করতেন আমরা ও তাই করব, না হলে যে তাদের আত্মা শান্তি পাবেনা।তারপর কাকা কাকী হিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন।হিয়া ও কাঁদল। দুপুরে কাকী হিয়া কে নিয়ে কেনাকাটা করলেন।একটা সাদা গাউন কিনে দিলেন। তার সাথে মিল করে পাথর বসানো একটি মুকুট ও কিনে দিলেন।প্রেস্টি শপ থেকে একটি কেক ও কিনলেন হিয়ার পছন্দে। তারপর অনেক গুলো রজনী গন্ধা ফুল কিনে দুজন বাড়ি এলেন।কাকী বললেন,আজ তুমি রানীর মত সাজবে।রাত বারোটা বাজলে আমরা তোমাকে শুভ জন্মদিন বলব। আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু হবে।তুমি আর কখনও মন খারাপ করবে না।এখন থেকে শুধু সামনে এগিয়ে যাবে।হিয়া শক্তি খুঁজে পায় যেন।মনে হয় সত্যিই তো!নতুন করে ভাবতে হবে।বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।ডাক্তার হতে হবে।

কাকী হিয়াকে ভাত মেখে খাইয়ে দেন রাতে।তারপর রাত এগারোটা বাজলে হিয়াকে সাজতে পাঠালেন হিয়ার ঘরে।হিয়া নিজের ঘরে এল।হিয়ার ঘরটি দোতলায়। হিয়া নতুন কেনা সাদা গাউনটা পরল।চুল গুলোকে টেনে উঁচু করে বাঁধল।এতদিন ওর জন্মদিনে এই কাজটি ওর মা করতেন।এই প্রথম নিজে করতে গিয়ে দুচোখ ভরে জল এল।চোখ ভরা জল নিয়ে চুল বাঁধা শেষ করল।তারপর পাথর বসানো মুকুট খানি মাথায় পরল।আয়নায় নিজেকে দেখল।মা থাকলে বলতেন,আমার হিয়া ডিজনি প্রিন্সেস। হিয়া দীর্ঘশ্বাস লুকোয়। তারপর মনে হল ওর মা গলায় একটা চিকন সোনার চেইন পরত। যার লকেটে লেখা আছে লিলি।লিলি হিয়ার মায়ের নাম।সেই চেইনটি হিয়ার আলমারিতে আছে।হিয়া সেটি বের করল।কিন্তু গলায় লাগিয়ে চেইনের হুক আটকাতে পারছেনা বলে নীচে কাকীর ঘরে এল।এসে দেখল কাকী ঘরে নেই।কাকা ও নেই।কোথায় গেল দুজন।এ ঘর ও ঘর খুঁজে না পেয়ে রান্না ঘরে এল।কিন্তু সেখানেও তারা নেই। কিন্তু খেয়াল করল রান্না ঘরের দরজা খোলা অথচ আলো নেভানো। বাইরে থেকে মৃদু স্বরে কথা বলছে কেউ।হিয়া কান পাতে। কাকী কথা বলছেন।কাকী বলছেন,কাজটা কি ঠিক হবে?এই তো কয়েক মাস আগে ভাই ভাবি কে পরিকল্পনা করে মারলে।সেটি এখনও ডাকাতি মামলা ধরে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।এখন আবার হিয়া কে।হিয়ার মুখ থেকে গোঙানি বেরোতে চায়।কিন্তু নিজের মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে সর্ব শক্তি দিয়ে। এবার কাকা বলছেন,সেজন্যই খুব তাড়াতাড়ি সব করতে হবে।কোন না কোনদিন সব খোলাশা হবে পুলিশের কাছে।তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।বাড়ি ও দোকান আমি গোপনে বিক্রি করে দেব সময় মত।ব্যাংক থেকে সব টাকা সরিয়ে নিয়েছি অন্য একাউন্ট্ এ।এখন হিয়াকে সরিয়ে দিয়ে আমরা দুজন বিদেশ চলে যাব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এই বলে একটি ছোট বোতল কাকীর হাতে দিয়ে বললেন,এটা কেক এর ক্রিম এর উপর সাবধানে দিয়ে দেবে।কাকী ভয় পাচ্ছে। কাকা বলছেন ভয় কেন পাচ্ছ?এটা পটাসিয়াম সায়ানাইড। এর এফেক্ট হবে দ্রুত কিন্তু শরীরে এর কোন অস্তিত্ব থাকবেনা।কাকী বললেন কিন্তু তারপর?তারপর কি করব?কাকা বললেন, তারপর মৃত হিয়া কে আমরা ছাদ থেকে নীচে ফেলে দেব।সবাই কে বলব বাবা মায়ের শোকে মেয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে।তাই আমরা ও ধরা পরবনা।যাও দেরী করোনা।
উহ্ কি বিভৎস।হিয়া কাঁপছে।কিন্তু শব্দ করছেনা একটুও। যেন মূর্তি।

হিয়া সম্বিত ফিরে পায়। ভাবছে,দ্রুত পালাতে হবে আমাকে,আমি মরব না।হিয়া খুব সন্তর্পণে পা ফেলে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে আসে।তারপর সোফার পেছনে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।অপেক্ষা করছে কখন কাকা কাকী উপরে যাবে হিয়ার ঘরে।কারণ এখন বসার ঘরের দরজা খুললে কাকা কাকী টের পাবে।বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝল কাকা কাকী কেকের ট্রে হাতে নিয়ে দোতলায় হিয়ার ঘরের দিকেই যাচ্ছে। হিয়া উঠে দাঁড়াল। কাকা কাকী উপরে উঠে গেছেন।হিয়া আস্তে করে বসার ঘরের দরজা খুলে বাগান ছাড়িয়ে লোহার বড় দরজার সামনে এল।রাত বারোটার আগে এই দরজা বন্ধ হয়না।হিয়া বেরিয়ে এল রাস্তায়। তারপর সামনে যে রাস্তাটি পেল সেদিকেই ছুট দিল।পৃথিবীর সব শক্তি যেন ভর করেছে ওর শরীরে।ছুটছে তো ছুটছেই।কোথায় যাচ্ছে জানে না।শুধু জানে বাঁচতে হবে।ছুটতে ছুটতেই কানে এল ঢং ঢং আওয়াজ। হ্যাঁ এটা তেরখাদিয়া খ্রিষ্টান পল্লীর গির্জার ঘন্টা বাজার শব্দ। তার মানে ও তেরখাদিয়ার দিকে যাচ্ছে। হঠাত্ একটা কিছুর সাথে ধাক্কা খেল।মনে হল এক মুহূর্তে চারপাশ ঘুরে গেল।তারপর ঘুমিয়ে গেল।কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল জানেনা।তবে ঘুম ভাঙলে নিজেকে একটা বিছানায় আবিষ্কার করে।চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে এটি একটি হাসপাতাল।হিয়া চোখ মেলেছে দেখে এক ভদ্রলোক সোফা থেকে উঠে এলেন।তাকে দেখে হিয়া চিৎকার করে উঠল ভয়ে।হিয়ার চিৎকারে ছুটে এল ডাক্তার নার্স।সাথে একজন বয়স্ক মহিলা।মহিলাটি দৌঁড়ে এসে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,ভয় নেই মা।তুমি নিরাপদে আছ।তারপর হিয়া একটু একটু করে নিজের ভেতর আসে। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের ঐ রুমে একজন পুলিশ এলেন।হিয়া তাকে দেখে চিনতে পারে।পুলিশ ও হিয়াকে।এই পুলিশ বাবা মায়ের দুর্ঘটনার তদন্ত করছেন।নাম হায়দার আলী।তিনি সস্নেহে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?কিন্তু হিয়া চুপ।এবার সোফায় বসে থাকা লোকটি নিজের পরিচয় দিলেন পুলিশের কাছে।বললেন আমি ডঃ রাসিফ।গবেষক।আমিই বোয়ালিয়া থানায় ফোন করেছিলাম। পুলিশ অফিসার নিজের পরিচয় দিলেন। বললেন,আমি ইন্সপেক্টর হায়দার আলী।ওর নাম হিয়া।কিছুদিন আগে ওর বাবা মা মারা গেছেন নৃশংসভাবে। কিন্তু মেয়েটির এই হাল কেমন করে হল সেটাই বুঝতে পারছি না।আর আপনিই বা ওকে কোথায় পেলেন?কি করে?

ডঃ রাসিফ বললেন,আসলে আমি সাপের বিষের ভেনম ও এন্টি ভেনম নিয়ে গবেষণা করি নিউ জার্সিতে। তবে বছর খানেক হল বাংলাদেশেই এই গবেষণা শুরু করেছি।ঢাকার বারিধারায় আমার একটি বাড়ি আছে।মূল গবেষণা সেখানেই করি।এখন থেকে বাংলাদেশেই থাকব ঠিক করেছি।গাজীপুরে আমার একটি ঘোড়ার খামার আছে।যেখানে এন্টি ভেনম তৈরি হয়।তেরখাদিয়াতে একটি জমি দেখতে এসেছিলাম আরেকটি খামার করব বলে।জমি দেখে বাড়ির পুরোনো গৃহকর্মী আমেনা খালাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলাম।আমি বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমেনা খালা তেরখাদিয়াতে মেয়ের কাছেই থাকতেন। রাত বারোটার দিকে তেরখাদিয়া থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলাম গাড়ি নিয়ে।সঙ্গে ড্রাইভার এবং আমেনা খালা। তখন এই মেয়েটি ছুটতে ছুটতে আমার গাড়িতে ধাক্কা লেগে লুটিয়ে পড়ে রাস্তায় এবং জ্ঞান হারায়। আমি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসি।এবং থানায় ফোন করি।

ইন্সপেক্টর হায়দার আলী সব শুনে বললেন,এত রাতে হিয়া ছুটছিল?কেন?কি হয়েছিল ওর সাথে?জানতে হবে সবকিছু।ওর কাকার ফোন নাম্বার আছে আমার কাছে,আমি বরং সেখানে কল দিই। একথা শুনে হিয়া না না বলে চিৎকার করতে লাগল।আমেনা খালা ওকে শক্ত করে ধরে রাখলেন।তারপর হিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে ভয় পাচ্ছে? হিয়া কাঁদতে কাঁদতে রাতের ঘটনা বলল।সবাই শুনে অবাক হল।ছিঃ মানুষ এত নির্মম হয়।পুলিশ অফিসার থানায় ফোন করে ফোর্স চাইলেন।তারপর ডঃ রাসিফ কে বললেন,এখন ভোর চারটে।সকালের আগেই হিয়ার কাকা কাজী সফিক ও তার স্ত্রী কে গ্রেফতার করব।আপনি এখানেই থাকুন।রুমের বাইরে ও পুলিশ প্রোটেকশান থাকবে। যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করবেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।ডঃ রাসিফ হিয়ার দিকে এগিয়ে এলেন। বললেন,ভয় পেয়োনা। তোমার সাথে হওয়া অন্যায় এর বিচার নিশ্চই হবে।আমরা তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবনা।তারপর ডাক্তার হিয়াকে একটা ইনজেকশন দিলেন।হিয়া আবার ঘুমিয়ে পড়ল।ডাক্তার বললেন ডঃ রাসিফ কে, মেয়েটি শরীরে আঘাত তেমন পায়নি।কিন্তু ওর মনে তৈরি হয়েছে গভীর ক্ষত।এখন ওর পাশে থেকে ওকে গভীর মমতায় আগলে রাখাটাই বড় চিকিৎসা। ডঃ রাসিফ মনে মনে বললেন এর শেষ তো আমি দেখেই ছাড়ব।

ভোরের আলো ফোটার আগেই হিয়ার কাকা কাকী গ্রেফতার হলেন।প্রথমে তারা পুলিশের কাছে কিছুই স্বীকার করলেন না।বরং হিয়া কে মানসিক ভারসাম্যহীন আখ্যা দিলেন।।তবে বাড়ি তল্লাশি করে পুলিশ রান্নাঘরের ময়লার ঝুড়িতে পটাসিয়াম সায়ানাইড এর বোতল,এবং খাটের নিচ থেকে কেক পেলেন।এরপর তারা সবটা স্বীকার করতে বাধ্য হলেন।হিয়ার কাকা কাজী সফিক জানালো পুঠিয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল এবং পেশাদার চারজন খুনির সাহায্য নেয়া হয়েছিল দশ লাখ টাকার বিনিময়ে। যাতে ডাকাতির ঘটনা মনে হয় সেজন্য টাকা পয়সা ও গয়না কেড়ে নেওয়া হয়।হিয়ার কাকা এও বললেন, নিঃসন্তান বলে সব সম্পত্তি ভবিষ্যতে হিয়া পেত তাই এই পথ তিনি বেছে নিয়েছিলেন। তারপর পুলিশ বাদী হয়ে দুটো হত্যা মামলা এবং একটি হত্যা চেষ্টার মামলা নথিভুক্ত করে দুই আসামি কে কোর্টে চালান করে দেন।এবং চারজন খুনির খোঁজে তৎপর হন।ডঃ রাসিফ হিয়া কে নিজ তত্বাবধানে নিতে চান কারণ এই মুহূর্তে হিয়ার শারীরিক ও মানসিক চিকিত্সা জরুরি। কিন্তু তার জন্য বিস্তর ঝক্কি পোহাতে হল।অবশেষে সাত দিন পর ডঃ রাসিফ পুলিশ অফিসার হায়দার এর সহায়তায় হায়দার এর তত্ত্বাবধানে হিয়া কে চিকিৎসার জন্য নিজ দ্বায়িত্বে নিতে পারলেন।এরপর ডঃ রাসিফ হিয়া ও আমেনা খালাকে নিয়ে ঢাকা ফিরলেন।বারিধারা গুলশান লেক সংলগ্ন তিনতলা বাড়ি।নীচের তলা গ্যারেজ,কাজেরলোক,দুজন সিকিউরিটি গার্ড মালেক ও সবির,সুপার ভাইজার কালাম,ড্রাইভার মজিদ,এদের থাকার জায়গা। দোতলায় গবেষণাগার।এবং তিনতলা জুড়ে ডঃ রাসিফ এতদিন একাই থাকতেন।এই কদিনে আমেনা খালা সারাক্ষণ হিয়া কে আগলে রেখেছে।হিয়া ও আমেনা খালাকে নির্ভর করতে শুরু করেছে।গুলশানের বাড়িতে এসেই ডঃ রাসিফ হিয়াকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলেন।সব শুনে তিনি পরামর্শ দিলেন বাড়িতেই রাখতে এবং সর্বদা লোকজন ও হাসিখুশির ভেতর রাখতে।এবং হিয়া যা যা পছন্দ করে সেসব ওর সামনে উপস্থাপন করতে।ডঃ রাসিফ হিয়ার জন্য সুন্দর করে একটি ঘর সাজালেন। আমেনা খালার ঘর নীচ তলায় ছিল আগে।এখন তাকে ও তিনতলায় থাকার বন্দোবস্ত করে দিলেন।আমেনা খালা ডঃ রাসিফ কে আব্বা বলে ডাকেন।হিয়া জানতে চান ডঃ রাসিফ এর কাছে,আমি কি বলে ডাকব আপনাকে? ডঃ রাসিফ বললেন,আমেনা খালা তো আব্বা ডাকে।বাড়ির অন্য সবাই স্যার ডাকেন।বাইরে সবাই ডি,আর স্যার ডাকেন।শুনতে ভালোই লাগে কারণ এই ডি,আর আলাদা হলে ও ডাকার সময় ডিয়ার হয়ে যায়। অর্থাৎ ডিয়ার স্যার।বেশ আপন আপন মনে হয়।তুমি আমাকে স্যার বাদ দিয়ে ডিয়ার বলে ডেকো।এরপর থেকে ডঃ রাসিফ হিয়ার ডিয়ার।ডঃ রাসিফ এর স্নেহ, ভালোবাসা, যত্ন ,চেষ্টা এবং আমেনা খালার আদর ,মমতায় হিয়া একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে লাগল।ডঃ রাসিফ রোজ সকালে হিয়া কে নিয়ে লেকের ধারে হাঁটতে বের হন।নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যান।এর মধ্যে হিয়ার মাধ্যমিক এর ফলাফল প্রকাশ করা হল।হিয়া গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।ফলাফল জেনে হিয়া কাঁদল।কিন্তু তৈরি হল উচ্চ মাধ্যমিক এ ভর্তির জন্য। পছন্দ মত কলেজে ভর্তির সুযোগ ও পেল।ডঃ রাসিফ হিয়াকে স্কুটি চালানো শেখালেন।বললেন,হিয়া তুমি এখন কলেজ স্টুডেন্ট। এখন থেকে একা চলা ফেরা শিখতে হবে। পৃথিবী জয় করার নেশা জাগাতে হবে মনে। ডঃ রাসিফ হিয়ার স্কুলের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নেন হিয়া কি কি করতে পছন্দ করে।কি কি খেতে পছন্দ করে।তিনি জানতে পারেন হিয়া পিয়ানো বাজাতে পছন্দ করে,অরেঞ্জ ফ্লেভার কেক খেতে পছন্দ করে,সাদা রঙ পছন্দ করে,ফুল পছন্দ করে খুব।ওর প্রিয় ফুল বল লিলি।পরের বছর হিয়ার জন্মদিনে রাত বারোটায় ডঃ রাসিফ হিয়া কে শুভ জন্মদিন বলে শুভেচ্ছা জানালেন। নিজের হাতে বানানো অরেঞ্জ ফ্লেভার কেক বানিয়ে খাওয়ালেন। একটি পিয়ানো উপহার দিলেন,উপহার দিলেন একটি ফুলের টব মাটি সহ।হিয়া অবাক হয়ে জানতে চায় গাছ কোথায়?

ডঃ রাসিফ হেসে বললেন এতে বল লিলির বীজ লাগানো আছে।যে কোন দিন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে।হিয়া কখনও বল লিলির গাছ দেখেনি।কিন্তু ফুলের দোকান থেকে মায়ের সাথে অনেক বার কিনেছে এই ফুল।বল লিলি হিয়ার খুব পছন্দ। কিন্তু তাই বলে গাছ নেই,বীজ লাগানো মাটির ভেতর।আর মাটি ফুঁড়ে ফুল?আশ্চর্য বটে।ডঃ রাসিফ আর ও একটি জিনিস দিলেন।যা দেখে হিয়া আপ্লুত হল।সেই চেইন।যার লকেটে লিলি লেখা আছে।যেটা বাড়ি থেকে পালানোর সময় হিয়ার হাতে ছিল।কিন্তু এতদিন হিয়ার সে কথা মনেই পড়েনি।ডঃ রাসিফ বললেন,এটা সেদিন তোমার হাতের মুঠোয় পেয়েছিলাম। ইচ্ছে করেই দিইনি।আজ দেব বলে।এভাবেই হিয়া একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবন যাপন এ ফিরতে শুরু করল।ইতিমধ্যে হিয়ার উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হল।এখানে ও গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেল।তৈরি হল মেডিক্যাল এ ভর্তির জন্য।হয়ে ও গেল স্বপ্ন পূরণ।হিয়া এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ওদিকে ওর কাকা কাকী ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে হাজত বাস করছেন।সেই চারজন পেশাদার খুনি ও ধরা পরেছে।ইন্সপেক্টর হায়দার আলী প্রতি মাসে একবার করে হিয়া কে দেখে যান।ডঃ রাসিফ মুগ্ধ হন এই মানুষটি কে দেখে।ভাবেন সব পুলিশ কেন হায়দার আলীর মত হয়না। হিয়া এখন একদম স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ। একা একা স্কুটি চালিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ড্রাইভার মজিদের কাছ থেকে গাড়ি চালানো ও শিখে নিয়েছে। আমেনা খালা ছুটিতে রাজশাহী গেলে রান্না করে।ডঃরাসিফ বিদেশে সেমিনার কনফারেন্স এ যোগ দিতে গেলে হিয়া বাজার ও করে।

হিয়া সব ভয় কাটিয়ে উঠেছে।এই তো সেদিন ভাবল কফি বানাবে।কফি বানিয়ে এসে দেখে ডঃ রাসিফ বসার ঘরে নেই।আমেনা খালা বললেন,আব্বা তো দোতলায় গেলেন।তারপর হিয়া কফির কাপ নিয়ে দোতলায় এল।গত পাঁচ বছরে হিয়া কোনদিন দোতলায় আসেনি।কারণ আমেনা খালা বলেছেন এখানে আসা বারণ। ডঃ রাসিফ ছাড়া এ বাড়ির কেউ দোতলায় যায় না।তবে মাঝে মাঝেই ট্রাকে করে কিছু ড্রাম আসে।সেগুলো দুজন কর্মচারী মিলে নামিয়ে দোতলায় নিয়ে যায়।হিয়া ভাবে গবেষণার উপকরণ হবে হয়তো।ভাবল আজ ডিয়ার বকলে বকুক।কিন্তু গবেষণাগারে আজ যাবেই।দোতলার দরজা ভেজানোই পেল। হিয়ার দুই হাতে দুটো কফির কাপ। ধোঁয়া উঠছে।হিয়া দোতলায় ঢুকে দেখল এটা একটা অফিস ঘর ।খুব সুন্দর সাজানো। কিন্তু ডিয়ার এখানে নেই।হয়তো ভেতরে।অফিস ঘর ছাড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই হিয়া চিৎকার জুড়ে দিল।কফির কাপ ছিটকে পড়ল দূরে।তবে টুকরো টুকরো হয়ে। যা তা অবস্থা। ডঃ রাসিফ দৌড়ে এসে হিয়াকে ধরলেন কিন্তু হিয়া চিৎকার করতেই থাকল।ভয়ে ও কুঁকড়ে গেছে।ভাবতেই পারেনি এই ফ্লোরে এসব আছে।

সারা ঘর জুড়ে সারি সারি তাকে কাঁচের জারের ভেতর অসংখ্য সাপ কিলবিল করছে। ডাক্তারি পড়ার সুবাদে ইতিমধ্যেই হিয়া ভেনম ও এন্টি ভেনম সম্পর্কে জানতে পেরেছে। ও জানে ডিয়ার এসব নিয়ে গবেষণা করে।কিন্তু তাই বলে এই বাড়িতে সাপের আস্তানা।হিয়ার ভীত সন্ত্রস্ত চেহারা দেখে ডিয়ার হাসলেন হা হা করে।তারপর হিয়াকে ধরে অফিস ঘরে নিয়ে এলেন।চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে দিলেন। বললেন,আচ্ছা হিয়া, তুমি আর কিছুদিন পর ডাক্তার হবে,কিন্তু এখনও তো অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হও প্রতিদিন। কত ছেঁড়া কাটা রক্তাক্ত মানুষ দেখছ হাসপাতালে। তারপর মরা মানুষ কেটে ও তোমরা নিরীক্ষা চালাও।তখন কি ভয় পাও?হিয়া মাথা নেড়ে না সূচক ইঙ্গিত করে।ডঃ রাসিফ এবার বলেন,জানো আমাদের দেশে প্রতিবছর কত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায় সুচিকিৎসার অভাবে?আমি সেই চিকিৎসার উপকরণ এন্টি ভেনম তৈরি করছি।কিন্তু তার জন্য আগে ভেনম সংগ্রহ করতে হয়।যাকে বলে বিষে বিষক্ষয়। এবার শোন ভেনম কি?

ডঃ রাসিফ হিয়াকে নিয়ে আবার সাপের রাজ্যে প্রবেশ করলেন।
তারপর তিনি বিভিন্ন সাপ দেখিয়ে হিয়াকে শোনালেন ভেনম ও এন্টি ভেনমের বিষদ।বললেন, ভেনম হল প্রাণীজ বিষ বা প্রাণীদেহে উৎপন্ন হওয়া এক ধরনের বিষাক্ত নিঃসরণ।এই নিঃসরণটিতে চার ধরণের বিষাক্ত বস্তু থাকে যা মৃত্যু ঘটাতে পারে।

এখন ভেনম কিভাবে পাওয়া যাবে?যে সাপের ভেনম তৈরি হবে সেই সাপের বিষ সংগ্রহ করতে হবে।প্রত্যেক সাপের বিষ আলাদা ধরনের তাই এক সাপের বিষের এন্টি ভেনম অন্য সাপের বিষ ধ্বংস করতে পারেনা।সাপের বিষ সংগ্রহ করা একটি শিল্প। ডঃ রাসিফ জার থেকে একটি সাপ বের করলেন।তারপর একটি পাত্রের মুখে কাগজ আটকে সেখানে সাপের দাঁত ঢুকিয়ে দিলেন। হিয়া কে বোঝালেন, এখন সাপের মুখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা বিষ ঝরে পড়বে। তারপর সেই বিষ মাইনাস বিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জমিয়ে ফেললে বিষ থেকে জলীয় অংশ আলাদা হয়ে সাপের বিষ গুড়ো পাউডারে রূপান্তরিত হবে।আর এই গুঁড়া সোনার মত দামী।তারপর এই গুঁড়া বা সংরক্ষিত বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে ঘোড়ার ধমনীতে প্রবেশ করানো হয়।কারণ ঘোড়া কিন্তু কখনও সাপের কামড়ে মরেনা।তা সে একটি হোক বা দশটি।তাই সাপের ভেনম ঘোড়ার শরীরে প্রবেশ করালে ঘোড়া তো মরেইনা বরং তার শরীরে এন্টি ভেনম উৎপাদন তৈরি শুরু হয়। এরপর ঘোড়ার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে লাল অংশ আলাদা করা হয়।সাদা অংশ ম্যাট্রিক্স থেকে এন্টি ভেনম আলাদা করে শুদ্ধকরণ পক্রিয়া সম্পন্ন করে শিশিতে ভরে বাজারে সরবরাহ করা হয়।এই এন্টি ভেনম সাপে কাটা রোগীর শরীরে ইনজেকশন করলে এন্টি ভেনম শরীরে থাকা ভেনম কে অকার্যকর করে রোগীর জীবন বাঁচায়।হাজার হাজার মানুষের জীবন এই এন্টি ভেনমের কারণে বেঁচে যায়। ।কিন্তু এই ভেনম যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করে অথবা কেটে ছিড়ে গেছে এমন জায়গায় লাগানো যায় তাহলে রক্তের সংস্পর্শে এসে ভেনমের কারণে তার মৃত্যু হবে তিরিশ মিনিটের মধ্যে। আবার কোন খাবারের সাথে ও যদি মেশানো যায় এবং সেই খাবার কেউ খায় তাহলে ও তার মৃত্যু অনিবার্য তিরিশ থেকে এক ঘন্টার মধ্যে।তিরিশ মিনিটের মধ্যে তার শরীরে বিষের লক্ষণ দেখা দেবে।যেমন,মাথা ব্যথা, পেশী ব্যথা, সারা শরীর ব্যথা,তৃষ্ণা, বমি, জিহ্বায় ঘন অনুভূতি, পক্ষাঘাতের অবসান,শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। মোট কথা ভীষণ কষ্ট পেয়ে মৃত্যু হবে।

আর সেজন্যই এই ঘরে সবার আসা বারণ।কিন্তু তোমার কি ভয় পাওয়া উচিত? সবাই যদি ভয় পায় তাহলে জীবন বাঁচানোর উপায় কি বল?হিয়া লজ্জা পায়। সত্যিই তো আর কিছুদিন পর ডাক্তার হবে আর ও এই সাপে ভয় পেল।না হিয়া আর ভয় পাবে না। তারপর থেকে দোতলা হিয়ার নিয়মিত যাতায়াত। এর মধ্যে ডিয়ার একদিন গাজীপুর ঘোড়ার খামারে নিয়ে দেখিয়ে এনেছে কিভাবে ঘোড়া থেকে এন্টি ভেনম তৈরি হয়।হিয়া এখন ব্যাপারটা উপভোগ করে।

হিয়ার পরীক্ষা শুরু হয়েছে।লেখাপড়ার খুব চাপ। এর মধ্যে হঠাৎ আমেনা খালার রাজশাহী যাওয়ার প্রয়োজন হল।উনার মেয়ে অসুস্থ।সুপারভাইজার কালাম আমেনা খালাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসলেন।ডঃ রাসিফ বললেন আমেনা খালা না আসা অব্দি তিনিই রান্না করবেন।হিয়া যেন লেখাপড়া শিকেয় তুলে রান্না করতে না যায়। তথাস্তু। ডঃ রাসিফ দিব্যি নিজের কাজ সেরে রান্না করছেন।হিয়াকে সময় মত ফলমূল কেটে খাওয়াচ্ছেন।রাতে শোবার আগে দুধ বানিয়ে দিচ্ছেন।এভাবেই পাঁচ দিন কেটে গেল।

গত দুদিন ধরে হিয়া রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নে হিয়ার ঘুম ঘুম চোখ মাত্র বুঁজে আসে যখন ঠিক তখন নাকের ওপর থেকে কপাল পর্যন্ত একটা প্রজাপতির মুখোশ পরে একজন পুরুষ ওর পাশে এসে বসে, চোখ দুটো বাদামি আর চকচকে।তারপর হিয়ার চুল, চোখ, মুখ, ঠোঁটে আলতো করে হাত বোলাতে থাকে।সে হাত নেমে যায় একটু একটু করে পা পর্যন্ত। এরপর হিয়ার ঠোঁটে সে ঠোঁট নামায়, চুষতে থাকে, তারপর সারা শরীর ঘুরে বেড়ায় সেই ঠোঁট। কেন যেন জননাঙ্গে ব্যথা অনুভব করে খুব। মনে হয় কিছু ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। উহ্ অসহ্য যন্ত্রণা। চিৎকার করে জেগে উঠতে চায় কিন্তু পারেনা।এক সময় সব থেমে যায়। হিয়া ঘুমিয়ে পড়ে।এটাই ওর স্বপ্ন। অথচ সকালে নিজেকে আবিষ্কার করে রাতে যেমন শুয়ে ছিল তেমন।কাপড় চোপড় ও ঠিক থাকে।কিন্তু দুর্বল লাগে খুব।হিয়ার লজ্জা হয়।ভাবে কাকে বলবে এই সমস্যা। এটা কি কোন অসুখ?এভাবে পরপর পাঁচ দিন এই একই অনুভূতি হল।

সেদিন সকালে খুব দুর্বল লাগছিল।ভাবছে আজ আমেনা খালা কে ফোনে জিজ্ঞেস করবে এমনটা সবার হয় কিনা।মনে মনে রাগ ও হচ্ছে আমেনা খালার উপর।দশ দিন হয়ে গেল ফেরার নাম নেই।বিছানা থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে এসে দেখল ডিয়ার খাবার তৈরি করে টেবিল গুছিয়ে খেতে বসেছেন এবং খুব তাড়াহুড়ো করছেন। ডঃ রাসিফ হিয়া কে দেখে বললেন,শুভ সকাল হিয়া। হিয়া ও শুভ সকাল বলল।ডিয়ার বললেন হিয়া তুমি ঘুমিয়ে ছিলে বলে জাগায়নি। আমাকে এখনি একবার খামারে যেতে হবে। দুপুরের আগেই ফিরব।তুমি তৈরি থেক।ফিরেই তোমাকে নিয়ে বাইরে যাব।হিয়া বলল কেন?ডিয়ার বললেন,তুমি কি ভুলে গিয়েছ কাল তোমার জন্মদিন?তোমার জন্য কেনাকাটা করতে হবে তো,দুপুরের খাবার ও আজ বাইরে খাব।তাছাড়া,কেক বানানোর উপকরণ ও তো কিনতে হবে।সন্ধ্যায় এসে কেক তৈরি করব যে। রাত বারোটায় তোমাকে শুভ জন্মদিন জানাব।এটা তো এখন নিয়ম।হিয়া আশ্চর্য হয়ে বলে, ও তাইতো!আমি তো ভুলেই গিয়েছি কাল চার মে।আচ্ছা বেশ তাই হবে।

তারপর ডিয়ার খাওয়া শেষ না করেই বেরিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে হিয়া কে খেয়ে নিতে বলতে ভুললেন না।।ডিয়ার চলে যাওয়ার পর হিয়া নাস্তা শেষ করল।খবরের কাগজ পড়ল।তারপর টেবিল থেকে থালাবাসন রান্নাঘরে নিয়ে বেসিন থেকে ধুয়ে জায়গা মত গুছিয়ে রাখল।পানির জগ ভরে নিয়ে এল খাবার টেবিলে। এবার খেয়াল করল ডিয়ার চশমা রেখে গেছেন টেবিলে।ভাবল ডিয়ারের চশমা ছাড়া কষ্ট হবে।অবশ্য ডিয়ার মাঝে মাঝেই লেন্স ব্যবহার করেন।কিন্তু খুব কম।হিয়া ডিয়ার কে ফোন দিয়ে বলতেই তিনি বললেন,চশমা নিতে ভুলে গেছেন।তবে খামারে চশমা আছে।অসুবিধা নেই।হিয়া চশমা নিয়ে ডিয়ারের ঘরে আসে।লেন্স নিয়ে কিছু একটা মনে পড়ে পড়ে করে ও মনে পড়ছেনা।ভাবল সময় মত নিশ্চয়ই মনে পড়বে।চশমাটা বেড সাইড বক্সের ওপর রেখে দিল হিয়া। নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে মাত্র হঠাৎ মনে হল আলমারির একটা পাল্লা খোলা।আলমারির কাছে এসে পাল্লাটা লাগাতে যাবে এই সময় কাপড়ের নীচ থেকে একটি আলোর ঝলকানি দেখতে পায়।অল্প একটু বেরিয়ে আছে।কেমন যেন উজ্জ্বল কাগজের মোটা শিটের মত।চিকচিক করছে লাল সবুজ হলুদ ছোপ ছোপ রঙের আলো।

হিয়া হাত দিয়ে আলতো করে বের করল সেই মোটা কাগজটা।তারপর বিদ্যুতের শক খাওয়ার মত ছিটকে পড়ল দুই হাত দূরে।কি দেখছে ও?কেন দেখছে?এ ও কি সম্ভব?কি করে?কেন?হিয়ার শরীর কাঁপছে।কি করবে বুঝতে পারছেনা।

পেয়ে গেছে অনেক প্রশ্নের উত্তর। কেন রাতে দুধ খেলে ঘুম পায়? কেন সকালে দুর্বল লাগে? বাদামী লেন্স বসানো চকচকে চোখ!!উহ্ হিয়া আর ভাবতে পারছেনা। বুঝে গেছে ওর দুঃস্বপ্ন অবচেতন মনের নয়। তৈরি করা। কিন্তু এ ও কি সম্ভব? কেন আমার সাথে এসব হতে হবে?কেন?হিয়ার কাঁদতে ও ইচ্ছে করছেনা।ঘেন্না হচ্ছে নিজের প্রতি।নিজেকে এই জাঁকজমকপূর্ণ পৃথিবীতে শুধুই অন্যের প্রয়োজন মনে হচ্ছে।

হিয়া ভাবছে এ জীবন আর নয়।অনেক হয়েছে প্রবঞ্চনা। অনেক হয়েছে প্রয়োজন। হিয়া নিজেকে সর্ব শক্তি দিয়ে বসা থেকে দাঁড় করায়।

ভাবছে হিয়া এভাবে বাঁচবেনা। তারপর ঠিক করে নিল ও কি করবে। চকচকে কাগজটি যেখানে ছিল সেখানে রেখে দিল।আলমারির পাল্লা লাগালো। বেড সাইড বক্সের ড্রয়ার থেকে গবেষণাগারের চাবি নিল।তারপর ত্রস্ত পায়ে দোতলায় গেল।ফিরে ও এল কিছুক্ষণের মধ্যেই।

দুপুরে ডঃ রাসিফ ফিরে এলেন।হিয়া একদম স্বাভাবিক।ডিয়ারের সাথে বাইরে এল।পুরো দুপুর বিকেল হিয়াকে নিয়ে ডঃ রাসিফ বিভিন্ন দোকান ঘুরে কেনাকাটা করলেন,বাইরে খেলেন,বিকেলে হৈ হৈ করতে করতে বাড়ি ফিরলেন।তারপর সন্ধ্যায় ডঃ রাসিফ কেকের সরঞ্জাম ও উপকরণ নিয়ে বসলেন।হিয়া মুগ্ধ দর্শক।কেক তৈরি হল ।অরেঞ্জ ফ্লেভার।হিয়ার পছন্দ। তারপর রাতের খাবার শেষ করে হিয়া তৈরি হতে নিজের ঘরে এল।আজকেই কেনা সাদা গাউনটা পরল।ডঃ রাসিফ কিনে দিয়েছেন হিয়ার পছন্দে। সাজল মনের মত।উঁচু করে খোঁপা করল।সেই খোঁপায় সাদা গোলাপ দিয়ে ভরে দিল।আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হল হিয়া যেন ডিজনি ওয়ার্ল্ড এ চলে এসেছে।

তারপর বেরোলো নিজের ঘর থেকে।চলে এলো বসার ঘরে।ডঃ রাসিফ অপেক্ষা করছেন বসার ঘরে। হিয়া কে দেখে সম্মোহিত হল যেন ।চোখ স্থির হল।জবান স্তব্ধ হল।এত সুন্দর এই মেয়ে? এত সুন্দর। সম্বিত ফিরল হিয়ার ডাকে।আসুন বারোটা তো বেজে গেল।

ডঃ রাসিফ আড়ষ্ঠ কিন্তু সাবলীল ভাবে বসার ঘরের মাঝখানে রাখা গোল টেবিলের কাছে এলেন।সেখানে সাজিয়ে রেখেছেন বাইশটা সাদা গোলাপ এর মাঝখানে একটি সুন্দর কেক।যার উপর লেখা “হিয়া নতুনে বাঁচ আগামীতে “।

হিয়া অবাক হল।গত চার বছর তো লেখা থাকত শুভ জন্মদিন হিয়া। আজ এই বাক্য কেন?ডঃ রাসিফ বোধ হয় মাইন্ড রিডার।বলে উঠলেন অবাক হচ্ছ লেখাটা দেখে?আমি ও অবাক হয়েছি লিখতে গিয়ে। শুভ জন্মদিন লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু লেখার পর দেখি এই বাক্যটি লেখা হয়েছে। পরে ভাবলাম অবচেতন মন ঠিকই ভেবেছে,কি বল হিয়া?হিয়ার কেন জানি অস্বস্তি হচ্ছে। ভেস্তে যাবে কি সব?না না তা হতে দেবেনা হিয়া। হিয়া আজ অপ্রতিরোধ্য। পারতেই হবে ওকে। ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁল।

ডঃ রাসিফ হিয়ার কপালে চুমু এঁকে বললেন,শুভ জন্মদিন হিয়া। তারপর কেক কাটার জন্য ছুরি এগিয়ে দিলেন হিয়ার হাতে।হিয়া কেক কাটল।এবং বরাবরের মতই ডঃ রাসিফের মুখে আগে বাড়িয়ে দিলেন।ডঃ রাসিফ বললেন,আজ তুমি আগে খাবে। হিয়া অপ্রস্তুত হয় কিন্তু সামলে নেয় নিজেকে।

ডঃ রাসিফ এর চোখে চোখ রেখে বলে,ডিয়ার আমি আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করি,কখনও মনে হয় আপনি আমার বাবা,কখনও মনে হয় ভাই,কখনও বা বন্ধু,কখনও আবার প্রেমিক। অদ্ভুত না!কিন্তু আমি যে আপনাকে ভালোবাসি ও খুব।খুব ভালোবাসি।আপনার মতো করে এত মনোযোগ কেউ কখনও আমায় দেয়নি।

আপনি আমাকে অর্ধ মৃত অবস্থা থেকে তুলে এনে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন।আমার বাবা মায়ের খুনের বিচার পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।আমাকে আবার নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন।আপনার জন্য আমি জীবন কে ভালোবাসতে শিখেছি।আপনি আমাকে শিখিয়েছেন হয় মারো নয় মর কিন্তু দুই এর মাঝামাঝি থেকো না। আপনি আমায় দেখিয়েছেন আমার সীমানা অসীম।আপনার জন্য পেয়েছি জীবনে মনে রাখার মতো কিছু মুহূর্ত। আপনি আমায় হাসিয়েছেন।বলেছেন দুঃখ গুলো ছুটি।

হিয়ার কথা শুনে ডঃ রাসিফ অবাক হয়,মুগ্ধ হয়, বিমোহিত হয়।ভাবছে সত্যিই হিয়া বড় হয়েছে শুধু শরীরে নয় মনে ও।কিন্তু হিয়া ডঃ রাসিফ এর চোখে অন্য কিছু খুঁজছে।অথচ তার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছেনা। সেখানে ও এই মুহূর্তে ভালোবাসাই দেখতে পাচ্ছে।

হিয়া আগ্রহ ভরে বলে খাবেন না কেক আমার হাতে? এই শেষ বার!এই শেষ বার!ডঃ রাসিফ অবাক হয়ে বলেন,শেষবার?হিয়া বলে গত চার বছর ধরে আপনি আমার জন্য নিজ হাতে কেক তৈরি করছেন এবং আমার পছন্দের অরেঞ্জ ফ্লেভারের।কিন্তু এবারই শেষ আমার জন্য কেক বানানো ।কারণ সামনের বছর থেকে আমার জন্মদিনের কেক আমি বানাবো এবং তা আপনার পছন্দের ফ্লেভারের। তরমুজ ফ্লেভার।তখন আমি আগে খাব গবগব করে।কেমন। এটা আপনাকে দেয়া আমার সারা জীবনের দক্ষিনা।

ডঃ রাসিফের কি জানি হয়।চোখে জল আসে । কেক এর টুকরো ধরা হিয়ার হাত ধরে হিয়ার চোখের দিকে তাকায়।তারপর কেকে কামড় দেন। এবং পরম শান্তিতে খেতে থাকেন।হিয়া ডঃ রাসিফ কে এবার অবাক করে হাত ধরে সোফায় বসায়।তারপর পিয়ানোর কাছে গিয়ে ঢাকনা খোলে। কর্ডে হাত দেয়।সুর তোলে। সোফায় বসে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে ডঃ রাসিফ হিয়ার দিকে।হিয়া পিয়ানো বাজায় পৃথিবীর সব শক্তি সব আলো মনে নিয়ে। হিয়া পিয়ানো বাজাতে থাকে।রাত বাড়ছে ক্রমশ। একসময় মুগ্ধ চোখের ডঃ রাসিফ কেমন জানি অস্থির হন।ঘামতে থাকেন,হাত পা শরীরের হাড় মাংশ প্রচন্ড ব্যথায় কাটা মাছের মত ছটফট করতে থাকেন।চোখের চশমা খুলে যায় ডঃ রাসিফ হা করেন কিন্তু কোন আওয়াজ বের হয়না।হিয়া পিয়ানো বাজায় আর দেখতে থাকে দুচোখ ভরে ওর ডিয়ারের পরিণতি।এক সময় ওর ডিয়ারের চোখের মনি স্থির হয়।যেন তাকিয়ে আছে হিয়ার চোখ ভেদ করে অন্য এক পৃথিবীর দিকে।

হিয়া এবার পিয়ানো বাজানো বন্ধ করে।বসার ঘরের দরজা খুলে সিঁড়িতে পা রাখে ছাদে যাবে বলে।এক একটা সিঁড়ি টপকায় আর ভাবে আমি ছোঁবই বৈতরণী নদীর জল।সিঁড়ির শেষ ধাপ পেরিয়ে হিয়া ছাদে আসে।বল লিলির টবের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।

ঢাকা শহর এখন নিয়ণ আলোয় মেতেছে।সেই নিয়ণ আলোয় হিয়া দেখছে টবের মাটি ফাঁটছে একটু একটু করে। হিয়া তাকিয়ে থাকে যেন কতকাল হল।সময় গড়ায়,নিয়ণ আলো ছাপিয়ে উঁকি দেয় ভোর।হিয়া তবুও তাকিয়ে থাকে।জানে আজই সেই দিন।আকাশ ফুঁড়ে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। নীচে মাটি ফাঁটছে।উঁকি দেয়া সূর্য লজ্জা ভেঙে প্রকাশিত যখন,তখন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এল লাল বল লিলি। হিয়া লিলি ফুলে হাত বুলায়।তারপর আকাশে সূর্য নীচে বল লিলিকে সঙ্গী করে চিৎকার করে বলে শুভ জন্মদিন হিয়া।

ইসরাত জাহান। কবি। জন্ম বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী। বর্তমান নিবাস ঢাকায়। তেরোবছর বয়স থেকে লেখালিখি শুরু। লেখা শুরু করেছিলেন দৈনিক বাংলার বাণীর মাধ্যমে। তারপর দৈনিক আজকের কাগজে নিয়মিত লেখালিখিতে ছিলেন। এরপর হঠাৎ করে বারোবছর লেখালিখি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন। প্রকাশিত বই: 'তোমার...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..