প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
“আরে ওসব নিয়ম কত করে, মানে আর কজন?”
-কিন্তু মানা তো উচিত দীনেশদা!
-শোনো ভায়া, নিয়ম করেছে ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে জোর করার কি আছে? যার ইচ্ছা পরবে, যার ইচ্ছা পরবে না। যে পরবে না, এটা তার নিজের রিস্ক
-কিন্তু দীনেশদা, সরকার থেকে, প্রশাসন থেকে আজকে যে কড়াকড়ি করেছে এটা তো ভালোই করেছে
-তোমরা এ যুগের ছেলে,নতুন নতুন বাইক চালাচ্ছ,তোমরা হেলমেট পরলে ঠিক আছে।আমি ভায়া তেত্রিশ বছর ধরে স্কুটার চালিয়ে এসেছি।আজকালকার ছেলেরা খুব অসাবধানী, তাই এদের এই অবস্থা। তুমিই বলো না! আমাদের সময়ে কম লোক বাইক আর স্কুটার চালাতো? তখনো হেলমেট পরতো কেউ কেউ, কিন্তু তাই বলে কোনো বাধ্য বাঁধকতা ছিল না
-এবার চলুন টাইম হয়ে গেছে, কাল এম ডি আসবেন, আজ তো অফিসের ভোল পাল্টিয়ে দিচ্ছে
-হ্যাঁ হ্যাঁ চলো
অফিসের কলিগ দীনেশদার আজকের কথায় সৌমিত্রর পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে গেলো।
সৌমিত্র বিয়ের আগে বেশ খামখেয়ালি স্বভাবেরই ছিল। চাকরি পাওয়ার দু’বছর পর সৌমিত্রর বাড়ি থেকে সম্বন্ধ করে চন্দ্রানীর সাথে সৌমিত্রর বিয়ে হয়। সৌমিত্রের জীবন একদমই সাধারণ ছিল। না কোনো নতুনত্ব, না জীবনে কোন অবসাদ।
বিয়ের পর তখন তাঁরা নতুন দম্পতি। একটু একটু করে তাঁদের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল,তখনও কেউ কাউকে খুব বেশি জানে না। একদিন সিনেমা দেখে ফেরার সময়, সন্ধ্যে বেলায়, অফিস টাইমে রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে, বড় রাস্তা পার হওয়ার সময় চন্দ্রানী খুব সতর্কতার সাথে পার হয়ে ফিরে দেখে, তখনো সৌমিত্র রাস্তার ওপারেই রয়ে গেছে। সৌমিত্র চন্দ্রানীকে হাত দেখিয়ে তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা মারুতি ভ্যানের নিচেই চলে যাচ্ছিল, তবে আয়ুর জোরে, না ভগবানই মারুতি ভ্যানের ড্রাইভারের রূপে এসেছিলেন তা সৌমিত্র জানে না, তবে সেই মুহূর্তে চন্দ্রানী ভয়ার্ত আশঙ্কায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। সে যাত্রায় সৌমিত্র বেঁচে গেলেও, সেই রাতে চন্দ্রানীর ঘুম আসে নি। বার বার মনে পড়ছিল যে, যদি ড্রাইভার ব্রেক কষতে না পারতো তাহলে কি হতো? সৌমিত্রের মৃত্যুকে চন্দ্রানী এত কাছ থেকে দেখে, সেই আতঙ্ক ভুলতে পারছিল না। ঘুমন্ত সৌমিত্রের দিকে বার বার তাকিয়ে দেখছিল চন্দ্রানী, একটা মুহূর্তের এদিক ওদিকে চন্দ্রানীর জীবনটা কেমন হয়ে যেত, সেটা ভেবেই চন্দ্রানী আঁতকে উঠছিল। সৌমিত্র ঘুমন্ত অবস্থায় বউকে হাতড়ে না পেয়ে, কোনো মতে চোখ খুলে দেখে চন্দ্রানী দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে দাঁড়িয়ে, অন্য দেওয়ালে ঠাকুরের আসনের দিকে তাকিয়ে আছে। এত রাতে বউকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সৌমিত্র। অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে আস্তে আস্তে বউয়ের সামনে গিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে? চন্দ্রানী ভয়ে, অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে সৌমিত্রের বুকের ওপর আছড়ে পড়ে। সৌমিত্র কিছু বুঝতে না পেরে বলে-
-কী হয়েছে? কাঁদছো কেন?
সৌমিত্র বউকে আরো ভালো করে জাপটে ধরে…
-কী হয়েছে বলো? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো? আমাকে ডাকো নি কেন? কেন কাঁদছো? কী হয়েছে বলবে না আমায়?
সৌমিত্র যে বিয়ের পর চন্দ্রানীকে এভাবে কখনো কাঁদতে দেখে নি…
-চলো খাটে বসবে, আমি আছি তো, কেন এত ভয় পাচ্ছো?
বউয়ের চোখ মুছিয়ে, দু হাতে ধরে আস্তে আস্তে খাটে বসিয়ে, বোতল থেকে গ্লাসে একটু জল নিয়ে বউকে দিয়ে, একদম বউয়ের গায়ে গা লাগিয়ে বসে, বউয়ের একহাতের আঙ্গুলগুলো নিজের হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে, মুঠো করে…
-এবার বলো তো কি হয়েছে? বাড়ির কথা মনে পড়ছে?
চন্দ্রানী মাথা নাড়িয়ে বোঝায় “না”
-তাহলে? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?
আবার চন্দ্রানী মাথা নাড়িয়ে বোঝায় “না”
-আমি কিছু করেছি?
চন্দ্রানী সৌমিত্রের দিকে ঘুরে বসে, সৌমিত্রের গালে কপালে হাত বুলাতে বুলাতে কাঁদতে থাকে আর…
-আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো, আমার কী হতো?
সৌমিত্র একটা ব্যাঙ্গের হাসি হেসে…
-দূর! এই কথা? আমি তো…
চন্দ্রানী নিজেকে আটকাতে পারে নি, সৌমিত্রের ওই ব্যঙ্গ হাসির সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রানী বেশ জোরেই সৌমিত্রের গালে একটা চড় মারে। সৌমিত্র হতবাক হয়ে যায়। চন্দ্রানী রাগে, দুঃখে…
-তুমি হাসছো? তোমার কোনো ধারণা আছে মেয়েদের স্বামী মারা গেলে কি হয়? তুমি ভাবতে পারছো, আমি কি করে বাঁচতাম তোমাকে ছাড়া? এটা এত সহজ তোমার কাছে? তোমার জীবনটা এখন কি শুধু তোমারই? আমি কি তাতে জড়িয়ে নেই? একটা ভুল পদক্ষেপে সারাজীবন শেষ হয়ে যায়, তুমি কি পারো এখনো খামখেয়ালি করতে? আজ ওই ড্রাইভার ব্রেক না কষতে পারলে, আমায় তখন কি দেখতে হতো, ভেবেছো? কেউ মরে গেলে তাঁর আর কিছু ভাবতে হয় না, কিন্তু তোমার ঐ রক্তাক্ত দেহ আমি কি দেখতে পারতাম? এগুলো তোমার কাছে হাসির মনে হচ্ছে?
সৌমিত্র বউয়ের আরো কাছে এগিয়ে বউয়ের মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে…
-সরি…সরি….আর কক্ষণো এই ভুল হবে না। সরি বলছি তো…আর কাঁদে না। আর আমি কখনো অসতর্কভাবে চলাফেরা করবো না। কী করবো বলো, নিজের জীবনের মূল্যটা যে এতটা তা কখনো আগে বুঝিনি। তুমি তখন ছিলে না যে! আর হবে না, বললাম তো! আমার লক্ষী বউ, এবার চলো শোবে, কাল অফিস আছে। তারপরে দেখা যাবে অফিসে গিয়ে বসে বসে ঘুমাচ্ছি
-এমা! তাই তো! চলো শুয়ে পড়ো। কেউ অফিসে তোমাকে ঘুমাতে দেখলে কী লজ্জার কথা
-লজ্জার কথা তো বটেই, ওরা ভাববে নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই বউ হয়তো সারারাত ঘুমাতে দেয় নি। কিন্তু ওরা তো আসল কথাটা জানে না যে, রাত জেগে আমি নতুন বউয়ের হাতে মার খেয়েছি
-ধ্যাৎ! সরি! আমি ইচ্ছা করে তোমাকে…
-না না, ইচ্ছা করে মারবে কেন, আমিই তোমার হাতটা তুলে নিজের গালে…
-এই প্লিজ তুমি কাউকে কখনো বলো না কিন্তু, আমি তখন …
-পাগল নাকি! এসব কেউ বলে? তবে বেশ জোরে মেরেছিলে কিন্তু! কই যখন আদর করো তখন তো…
-চুপ করবে তুমি! চলো শুয়ে পড়ি
-চলো
চন্দ্রানীর দায়িত্ব, চন্দ্রানীর ভালোবাসা, চন্দ্রানী অবলম্বন হওয়ায় আজ সৌমিত্র অনেক দায়িত্ববান হয়ে গেছে। সংসার জীবনে ছ’টা বছর কাটিয়ে সৌমিত্রের এখন চন্দ্রানীর সাথে সাথে তো ছোট্ট সঞ্চারীর দায়িত্ব আরো অনেক বেশি। সাড়ে চার বছরের সঞ্চারী যে বাবার নয়ন মণি। আজকাল সৌমিত্রের, এই দীনেশদাদের মতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষদের দেখলে বেশ বিরক্তিই লাগে। সত্যিই তো দীনেশদাদের মতো মানুষদের সাথেও তো পরিবারের সবাই জুড়ে আছে, তাঁরা কি করে এতটা অসাবধানতা করে!
দীনেশ সমাদ্দার সৌমিত্রের সিনিয়ার কলিগ। সংসার জীবনের বহু বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে কি হবে, সংসার সংসারের মতোই চলছে আর সেও তার মতোই চলেছে। চুল পাকার সাথে সাথে দুনিয়ার সবজান্তা হাব ভাব তাঁর। নতুনকিছু সহজে মেনে নেওয়ার উদারতা খুব একটা নেই, যদিও ফেসবুকটাকে খুব ভালোভাবে বুঝে রপ্ত করেছেন। দীনেশবাবুর বেশ বড়ই পরিবার। স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, তার ছেলের বয়স তিন বছর। বড় মেয়ে মালদায় থাকে। ছেলে এখন একটা ছোট কোম্পানীতে কাজ পেয়েছে সদ্য। ছোট মেয়ে কলেজে পড়ে।বাড়িতে একটা স্কুটি আর একটা বাইক আছে। স্কুটিটা নিয়ে দীনেশবাবু রোজ অফিস যান। বাইকটা ছেলের। ছোট মেয়ের কলেজ যাওয়া আর পড়তে যাওয়া দীনেশ বাবু আর তাঁর ছেলে নিজেদের কাজের সুবিধা অনুযায়ী পৌঁছিয়ে দেন। বাড়িতে একটা হেলমেট আছে তবে ওটা ব্যবহার না করে করে ধুলো, ঝুল পড়ে সিঁড়ি ঘরের এক কোণে পড়ে আছে। সামনেই রাখী পূর্ণিমা ছিল, তাই বড় মেয়ে মালদা থেকে বেশ কদিনের ছুটিতে বাপের বাড়িতে এসেছিল। আসলে বড় মেয়ের ছেলে রিন্টু তখনো স্কুলে ভর্তি না হওয়ায়, ওনার বড় মেয়ে মাঝে মাঝেই বাপের বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে চলে আসে।
দীনেশ বাবুদের অফিসের পুরাতন কলিগ, বঙ্কিম বাবু এই সদ্য রিটায়ার্ড করে, একদিন বাড়িতে অফিসের কিছু ঘনিষ্ট কলিগদের পরিবার সমেত নিমন্ত্রণ করেছিলেন। ওখানে সৌমিত্ররা তিনজন গিয়েছিল, আবার দীনেশ বাবুও তাঁর স্ত্রী আর নাতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওখানে সবাই বেশ আনন্দ করে। ফেরার সময় ছোট্ট সঞ্চারী আর তাঁর বাবা মা যখন মাথায় হেলমেট পরছিল, তখন দীনেশ বাবুরা সপরিবারে সৌমিত্রদের বাই করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে দিয়েছিল। ছোট্ট সঞ্চারী একটু রাগ করেই তাঁর বাপিকে বলেছিল-
-ওরা তো হেলমেট পরে নি, আমিও পরবো না বাপি
মার চোখ বড় করা আর বাবার আহ্লাদ করে বোঝানোতে শেষে সঞ্চারী হেলমেট মাথায় দিয়েই বাড়ি ফিরেছিল। তাঁর দুদিন পর রাখী পূর্ণিমা আর স্বাধীনতা দিবস একইদিনে হওয়ায়, সকালবেলায় দীনেশ বাবু নাতিকে নিয়ে স্কুটিতে বের হন। কথা ছিল দোকান থেকে রাখী আর ফ্ল্যাগ, নাতিকে কিনে দিয়ে, পাড়ার ক্লাবে ফ্ল্যাগ উত্তোলন দেখে তবেই ঘরে ফিরবেন। কলকাতার বাইরে থাকায় ওনার নাতি বয়সের থেকে একটু বেশিই পাকা। সে বায়না করলো, দাদুর সামনে নয়, দাদুর পিছনে বসে, সে বড়দের মতো বসে যাবে। দাদুও নাতিকে স্কুটির পিছনে বসিয়ে হাত দুটো নিজের কোমরে ভালো করে জড়িয়ে ধরতে বলেন।
এদিকে সৌমিত্র তখন প্রচুর বাজার করে ঘরে ফেরে। শালা আর শালার বউ আসবে। তাই স্পেশাল বাজার।
দীনেশ বাবু স্কুটি নিয়ে সকালে বেরোতে বরাবরই ভালোবাসেন, কারণ এক তো বেশি সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকে, তারওপর ভোরের একটা ঠান্ডা ঠান্ডা হওয়ায় স্কুটি চালাতে তাঁর খুব ভালো লাগে। স্কুটি চালাতে চালাতে হঠাৎ দীনেশ বাবুর কানে আবছা একটা আওয়াজ আসলো, সেটা ঠিক করে শোনার আগেই রাস্তার ধারে বসা এক সব্জিওয়ালি চিৎকার করে বলে “আরে! বাচ্চাটা পড়ে যাবে তো! ও তো ঘুমাচ্ছে” কথাটা দীনেশ বাবুর কানে পৌঁছানো মাত্রই আতঙ্কে স্কুটি চালাতে চালাতে পিছন ফিরে নাতিকে দেখতে গিয়ে, গলি থেকে বেরোনো একটা স্পিডে আসা বাইকের সাথে ধাক্কা খেয়ে…
সঞ্চারীর খুব দুঃখ যে, তাঁকে রাখী পরানোর কেউ নেই। তাই তাঁর বাবা মেয়েকে কোলে নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে তাঁর মাকে জিজ্ঞেস করে যে, বাবারা মেয়েকে রাখী পরাতে পারে না? এমন সময় তাঁর বাবার ফোন বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করেই…
-সেকি! কখন হলো? কোন হসপিটালে? আমি আসছি
চন্দ্রানী তাড়াতাড়ি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সৌমিত্রের দিকে তাকাতেই, সৌমিত্র…
-দীনেশদার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। সাথে নাতি ছিল। নাতি স্পট ডেড। দীনেশদার পা টা বোধহয়… আমি বেরোচ্ছি, পরে তোমায় ফোন করে দেবো
চন্দ্রানী শুনে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলো, ছোট্ট সঞ্চারী মার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো-
-কী হয়েছে মা? বাপি কোথায় গেলো? তুমি বাপিকে বললে না তো, বাপি আমাকে রাখী পরাতে পারবে নাকি?
চন্দ্রানী হাঁটু গেড়ে বসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে
হসপিটালে দীনেশ বাবুর বাড়ির লোক, আত্মীয়,বন্ধু বান্ধবদের ভিড়। দীনেশ বাবুর বড় মেয়েকে তখনো তাঁর ছেলের আসল সংবাদ দেওয়া হয় নি। তখন দীনেশ বাবুর অপারেশান চলছিল। অফিসের কিছু কলিগও ছিল সেখানে। সৌমিত্র পৌঁছিয়ে আসল ঘটনাটা শুনলো। দীনেশ বাবুর নাতি হয়তো বাইরের ঠান্ডা হওয়ায় দীনেশ বাবুর পিছনে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু হাত দুটো দাদুর দুই কোমরে ধরা ছিল বলে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায় নি। তবে আলগা হয়ে যখন কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল, তখন রাস্তার লোকেরা দেখে চিৎকার করেছিল। দীনেশ বাবু নাতি পড়ে যাচ্ছে নাকি দেখার জন্য যেই পিছন ঘুরে দেখতে গেছিলেন, তখন স্কুটি চলছিল। ওই মুহূর্তে স্কুটিটা একটা গলির সামনে থেকে পাস করছিল আর সেই গলি থেকে বেরোনো একটা স্পিডে আসা বাইকের ধাক্কায় দীনেশ বাবুর নাতি ছিটকে গিয়ে ল্যাম্প পোস্টের গায়ে ধাক্কা খায়। দীনেশ বাবু স্কুটি শুদ্ধু রাস্তায় ঘষতে ঘষতে ছিটকে পড়েন।
দীনেশ বাবুকে অপরেশানের পর বেডে দিয়েছেন। সৌমিত্র তখনো ওখানেই ছিল। একে একে সবাই ভিতরে ঢুকে দীনেশ বাবুকে দেখে আসছিল। সৌমিত্র সেখানেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। বার বার সৌমিত্রের চন্দ্রানীর কিছু কথা মনে পড়ছিল। সঞ্চারী হওয়ার কদিন পর এক ছুটির দিনে সৌমিত্র আর চন্দ্রানী চা খেতে খেতে গল্প করছিল, দুজনের সামনেই ছোট্ট সঞ্চারী তখন প্রায় এক মাসের শিশু, শুয়ে ছিল। চন্দ্রানী সৌমিত্রকে বলেছিল-
-মেয়ে হওয়ার পড়ে তোমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো
-জানি
-কী জানো?
-মেয়েকে খুব ভালো করে মানুষ করতে হবে, তাই তো?
-না! তা বলিনি। দায়িত্ব মানে তোমাকে নিজেকে আরো সাবধানে রাখতে হবে। এখন শুধু আমি নই, মেয়েও তোমার ওপর নির্ভরশীল হবে। জানো তো, শুধু তুমি নও, প্রত্যেক পরিবারে স্বামীরা হয় জীবনের চালক, স্ত্রীরা হয় সেই চালকের হেলপার আর বাকিরা হয় প্যাসেঞ্জার। ধরো তুমি আমাদের সবাইকে নিয়ে জীবনের পথে একটা ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছ, আমি তোমার পাশে বসা তোমার হেলপার। আমি সামনে পাশে যেটুকু খারাপ ভালো দেখছি, তোমাকে সাবধান করছি, কিন্তু চালাচ্ছ তুমিই। তুমি যদি ঠিক করে চালাও, তাহলে আমাদের জীবনযাত্রাটা ভালো কাটবে। তুমি পিছনে বসা পরিবারের বাকিদের যাঁকে যেখানে যখন সঠিক সময় নামাতে হবে, নামাতে পারবে। আর যদি তুমি বেঠিক চলো তাহলে তোমার সাথে সাথে আমরা সবাই ক্ষত হবো কিংবা মরবো। তাই স্বামীরাই বা বাবারাই আসল, মানে বাড়ির কর্তারা। কার কপালে কী আছে আমরা কেউ জানি না, তাই সাবধান তো আমাদের হতেই হবে, তাই না বলো!
-কি সৌমিত্র! দীনেশদার সাথে দেখা করবে না?
সৌমিত্র অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলো…
-হ্যা যাবো, আপনার দেখা করা হয়ে গেছে?
-হ্যা, কি দেখবো বলো তো! পাগলের মতো কাঁদছেন। এদের বাড়ির লোক গুলোও যে কি, কে জানে! ওনার এই অবস্থায় নাতির মৃত্যু সংবাদ না দিলে হতো না কি? ডাক্তার বলেছেন নাকি, ওনার নাতির ল্যাম্প পোস্টে মাথাটা লেগে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হয়তো হেলমেট থাকলে… ও কি সৌমিত্র! তুমি চলে যাচ্ছ কেন? দীনেশদার সাথে দেখা করবে না?
সৌমিত্রর গা টা কেমন গুলিয়ে উঠেছে। দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। মেয়ের সে দিনের সেই কথাটা মনে পড়ছিল “ওরা তো হেলমেট পরে নি, আমিও পরবো না বাপি” আজ যেন সৌমিত্রকে চন্দ্রানীর সেই রাতের মতো এক অদ্ভুত আতঙ্কে গ্রাস করছে। নিজের হেলমেটটা বুকে জড়িয়ে ধরে, চন্দ্রানীকে সৌমিত্র ফোন করলো…
-আমি ফিরছি এখন, তোমরা ঠিক আছে তো?
-হ্যা, সাবধানে ফিরো
-আস্তে চালাবো, চিন্তা করো না, হেলমেট আছে…
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..