আপ্লুত রজনী
কৈশোরের এক রাজকন্যা অভিভূত পৃথিবীতে এখনও অনন্যা অবাক জানায় অনুভবে আছি স্মৃতির মৌমাছি আমাদের মায়াবী…..
ধারাপাতের পঁচিশটা উষ্ণতর বসন্ত পেরিয়ে যদিও এখন সূর্য উলম্ব বিষুবরেখায়, আমার প্রেম আজও আঁটা চৌদ্দের খামে।
বিষণ্ণ এক-একটা দিন হতাশার লেজ ধরে ক্রমে রাত্তিরে গিয়ে ফুরায়, তবু রংধরা খেজুরের মতন সরস ঠোঁটে মুখ দেবো বলে আহত ক্লাউনের বেশে একনাগাড় ফুঁকে যাই তপ্ত মাউথঅর্গান–যদি শিকা ছিঁড়ে বিড়ালের ভাগ্যে!
নাগরিক চাকার মতন আসন্ধ্যা বহুমুখী প্রতারণার রমণীয় ভিড় উজিয়ে রাত্তিরে যখন স্বদখলের খুপরিতে ফেরত আসি—কিশোরী প্রেমিকার হৃদ্যতাও আর টানতে পারে না আমায়! বরং আমি সটান শুয়ে পড়ি উত্তর থেকে দক্ষিণ।
অথচ মাঝরাতে আমার দরজায় ওঠে কান্নার রোল। দুর্নীতিবাজ কোনো কালো বিড়াল প্রাক্তনের সুর নকল করে বিলাপ ধরে অসহ্য অতীত স্মৃতির; আর ক্রুদ্ধ আমি লাঠি-হাতে তেড়ে গিয়েও ব্যর্থ হই প্রত্যেক প্রত্যুষ।
নেহাত এক মামুলি বিড়াল আমায় হারিয়ে দেয়!
ইদানীং দর্শনের ক্লাসে বসলে প্রায়ই সামনে-পড়ে-থাকা গালভরা ইজমস, নাক উঁচা লেকচারার, রংচটা দরজা-জানালা-বেলকনি-করিডোরসহ ত্রিশ টাকার রিকশাভাড়া পাড় করে অনায়াসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ঢুকে পাড়ি আর লেলিন-মার্কস-গয়েবরাকে নিয়ে মেতে ওঠি ‘বিপ্লব বিপ্লব’ স্লোগান ও ক্ষুদাহীন ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমি তখন প্রেমিক কিংবা কবি কোনোটা না থেকে বরং হয়ে ওঠি আদর্শ চিন্তাবিদ।
আর এভাবে আমি যতবার দেশের জন্য দশের জন্য নিজের জন্য ভাবি–হয় সবুজ অরণ্য থেকে পাতারা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে, ন’য় ইলেক্ট্রিক তারে-বসা-কাক মাথা ভরে হাগে, ন’য় গেরস্থ গোয়ালের শান্ত গাইটা শিং উঁচিয়ে তেড়ে আসে—আমার উত্তর হয়ে, আশু ভবিষ্যতের বিপরীত নমুনা নিয়ে।
শেষতক ভাগ্যের দর্শন বাতলে দেয়–গাধা হয়ে যার জন্ম, বয়সকালে ঘোড়া হয়েই মরবে যারা ভাবে তারা নিপাট মূর্খ!
মাইকে আজান পাড়লে ‘আল্লাহ আকবর’ আমরা উঠে পড়ি। মেসওয়াক, ব্রাশ আর নিমের মাজন নিয়ে তিনজনে তিন সাজে বেরিয়ে পড়ি। তিন মাথায় তিন কিসিমের তেইক্কা দেখলে কেউ যদিও মানতে চাইবে না আমরা এক ছাদের তলায় ঘুমোই, এক জমিনের ফসলে বাঁচি।
ব্রাশ ঘষতে ঘষতে আমি করপোরেশনের কলের দিকে গেলে সাবধানে এড়িয়ে তারা–আমার দুই বন্ধু—খোদার দিঘিতে অজু করতে গেলো। কিছু দূর এগিয়ে আমরা আবার তেভাগ হলাম—তিন মসজিদের তিন পথ ধরেই আমরা বিচ্ছিন্ন—তিন মতবাদ। প্রত্যেকে পরস্পরের পথ নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত হতে থাকি…
নাগর
ছাউনিটা দুচালা, দু-রুমের। চার মাসের একটা শিশু বারান্দায় কেঁদে চলেছে—বেতাল সুরে। যদিও স্তনপিপাসা তার স্বরে, নিত্য ভাগের স্তনমুখ এখন অন্যের দখলে; সে তেরোর বালক।
ভেতরের দোরে চাটাইয়ে জননীর শরীর এলানো, অর্ধনগ্ন–যুগপৎ শিশু আর শিষ্টে নজর রাখছে। পুরোনো শাড়ি কোমর অব্ধি গোটানো—দু-মেরুতে দুটা পা—প্রসারিত যোনি। স্তন্যপায়ী বালক হাঁটুর ভাঁজে আটকে আছে—নগ্ন—কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিবেশ বদলে গেলো। কিশোর এবার ক্ষুধার্ত কোনো শরীরের তলে…। ঠোঁটের ভেতর ঠোঁ, আঙুলের ভাঁজে আঙুল, উরুর খাঁজে উরু। সবকিছু এক মিনিট!
ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়লো। বারান্দার কান্না থেমে গেছে, শরীর দুটিও। বুকপকেটের একটা নোট দুধগন্ধা অন্তর্বাসে জায়গা নিলো–চুক্তি মেনে জমা দিলো কিশোর। খদ্দের কিংবা নাগর।
কৈশোরের এক রাজকন্যা অভিভূত পৃথিবীতে এখনও অনন্যা অবাক জানায় অনুভবে আছি স্মৃতির মৌমাছি আমাদের মায়াবী…..
ভালো আছো, ভুলে আছো একটাই আঙুল একটাই সেতার যতোবার সুর তুলি তোমার নাম ততবার একটাই…..
প্রতীক্ষিত প্রেম চোখের চাহনিতে গভীর প্রণয় অন্তরে তৃষ্ণা সুধায়, একপলক দৃষ্টি আকুলতার নিঃশ্বাসে প্রতীক্ষার অন্তিম…..
মাঝরাতে বেড়াবার একদিন মাঝরাতে ঘুরে বেড়াবার ইচ্ছা হলো আঁধারে কপাল ঠুকে বেরিয়ে পড়লাম সটান দূরের…..