অর্থের আতিথেয়তায় প্রেম

অশোক মুখোপাধ্যায়
কবিতা
Bengali
অর্থের আতিথেয়তায় প্রেম

অপেক্ষা

তুমি যদি আসো আমার কাছেতে ফের
আগে থেকে বোলো দরজা রাখব খুলে
তুমি যা ভুলো পথ যাও নি তো ভুলে
দরজার কাছে দাঁড়ালে পাবই টের।
কি যে হলো ছাই মনেও পড়ে না মোটে
তোমার-আমার বিরহ কেন যে হলো
খুব ভাল হয় এসে যদি কথা তোলো
কতদিন ঠোঁট রাখো নি আমার ঠোঁটে।
মনে কর এলে সন্ধ্যা নেমেছে সবে
শোনা যায় পাশের নদীর ছলাৎ ঢেউ
এখন পথেতে জটলা করে না কেউ
ঘড়িতে তখন সাড়ে ছ’টা বুঝি হবে।
ঝুলবারান্দায় আমিও ছিলাম বসে
মায়ের তখন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালা
কতদিন বল শুনি নি যাত্রাপালা
তোমার-আমার কষ্ট কি সব দোষে।
যদি আসো তুমি আমাকে জানিয়ো আগে
রাত্তিরে তুমি এখানেই খেয়ে যেয়ো
কথার মাঝে রবীন্দ্র গান গেয়ো
জানো তো রবিতে আমারও জীবন জাগে।
দারুণ সাজব একদম পরিপাটি
তুমি ফুল এনে চুলের বাঁদিকে গুঁজো
তোমাকে খুঁজব তুমিও আমাকে খুঁজো
স্পর্শ করব আমিও তোমার গা-টি।
আমায় তুমি আম কিছু দিয়ো এনে
জানো তো দারুণ আম খেতে ভালবাসি
বিনিময়ে দেব আমার মধুর হাসি
আড়ালে আমায় তেমন নেবে কি টেনে!
তুমি অসভ্য বিশ্বাস কিছু নেই
কতবার বল কত কিছু গেছে ঘটে
লোকের সামনেই ঠোঁট রেখেছিলে ঠোঁটে
এখনও আমি থাকি সে লজ্জাতেই।
কতদিন ভাবি তোমাকে দেখব আজ
লেনিনের পথে হাঁটতে পারি না আর
তুমি-আমি হব কবে যে একাকার
এখনও তুমি বাজাও পাখোয়াজ ?
তুমি এলে ফের হাঁটব মিছিলে কত
তুমি স্লোগানে ভরিয়ে তুলবে গলা
তোমাকে বলব যে কথা হয় নি বলা
মার্ক্সবাদী তুমি কন্ঠে তা অবিরত।
রবির কবিতা না হয় শোনাব আমি
তুমি তো বল নজরুলও ভাল বলি
নতুন করে চিনে নেব অলিগলি
যেখানে মানুষ হয়ে থাকে কম দামি।
মোচার ঘণ্ট ডুমুর ডালনা করে
তোমাকে খাওয়াব যত্নে নিজের হাতে
সেদিন তুমি থেকে গেলে নয় রাতে
উঠে চলে যেয়ো ঠিক কাক ডাকা ভোরে।
তুমি থাকবে আলাদা একটা ঘরে
পাশের ঘরে না হয় থাকব জেগে
আমাকে না পেয়ে আবার উঠো না রেগে
উতলা হয়ো না হঠাৎ দমকা ঝড়ে।
কবে আসবে গো তাড়াতাড়ি চলে এসো
কিছুতেই আর আমার সয় না তর
চোখেতে হারাই তবু হয়ে গেলে পর
আমায় তুমি এসে খুব ভালবেসো।

অভিমান

তোমার অভিমান সবটা রেখো না কাছে
তোমার অভিমান আমাকেও কিছু দাও
অভিসারে যাবে যেতে যদি তুমি চাও
আমারও হাতে সময় কিছুটা আছে।
অভিমান মানে অভিসার নয় জেনো
অভিমান মানে নজরে নজরে রাখা
অভিমানে থাকে ভালবাসা শুধু আঁকা
অভিমান মানে না বলে কিছু তো এনো।
বড় জ্বালা ধরে বুকে অভিমান এলে
দুজনের মাঝে দূরত্ব আঁকে পথ
দুজনেই থাকে দুজনেতে সহমত
মুখের কথারা উবে যায় কথা পেলে।
তবু অভিমান একা একা ভাল লাগে
স্বাভাবিকতায় থাকে না জীবন বাঁধা
প্রেম যেন হয় তখন মস্ত ধাঁধা
ছিন্ন বীণাটি বেজে যেতে চায় রাগে।
অভিমানে ঠোঁট আসে না ঠোঁটের কাছে
বিছানায় থাকে দূরত্ব দেড় ফুট
পাশে যেতে যেন মন দিতে চায় ছুট
না-ভঞ্জনে অভিমান মনে নাচে।
অভিমান থাক অভিমানটুকু হয়ে
অভিমান থাকা মনের পক্ষে ভালো
অভিমানী ঝড় শান্ত জীবনে আলো
অভিমান রোজ কত কিছু যায় সয়ে।
মানভঞ্জন একদিন হলে ফের
নতুন করে পুরনোকে চেনে মন
সময় এসে চেনে ফের যৌবন
বলে অভিমান আমি আসি হলো ঢের।
অভিমান মানে নতুন পৃথিবী আনা
অভিমান মানে নিজের পৃথিবী গড়া
অভিমান মানে ছুটি পেয়ে যায় জরা
অভিমান মানে দীর্ঘ জীবন টানা।
এমন অভিমান ফিরুক না বারবার
এমন অভিমান আসুক প্রতিটি মনে
বাঁচুক না সে বিজনে-সঙ্গোপনে
চলে গেলে সে ফিরবেই আরবার।

মানভঞ্জন

তোমার মান ভাঙতে গিয়ে রোজই কাহিল হই
প্লিজ তুমি মান ভাঙো হে আর পারি না সই!
তোমায় একটু আদর করে
কিছু ক্ষণ তো প্রেমের ঘোরে
থাকতে পারি সারাদিনে অন্তত একবার
তোমায় দেখতে চেষ্টা করি হও না তো দেখবার।
খুব গরমে আম পেকে যায় কাঁঠাল পাকে কত
তুমিই কেবল ঠাণ্ডা হয়ে থাকো তোমার মতো!
কি যে দোষ রোজই করি
পাই না ভেবে যতই স্মরি
তোমার জন্য ডিম ভেজে দিই হও না খুশি তাতে
উল্টে তুমি কোলবালিশে তফাৎ কর রাতে।
যখন তুমি ভোরেরবেলায় স্নানটি আসো সেরে
তোমায় ধরতে গেলেই বল এবার দেবো মেরে!
মারের ভয়ে হাত গুটিয়ে
বিছানাতেই রই লুটিয়ে
তোমায় জানো সিঁদুর পরলে ভীষণ ভাল লাগে
আমি তখন বেখেয়ালে খেয়াল করি রাগে!
সন্ধেবেলায় অফিস থেকে যখন ফিরে আসি
ইচ্ছে করে জড়িয়ে তোমায় একটু ভালবাসি!
তাকিয়ে তোমার চোখের দিকে
সব আহ্লাদ হয় যে ফিকে
নিজের মতন হাত-পা ধুয়ে রবীন্দ্রগান শুনি
সব অভিযোগ আমার দিকে আমিই প্রেমের খুনি!
এত কেন মান-অভিমান তোমার মধ্যে থাকে
বিয়ের আগে আমায় ছাড়া মন দিলে আর কাকে!
এই কথাটি বলার পরে
আমি পড়লাম বেদম জ্বরে
জ্বর ছাড়ল দুদিন পরে তুমি ফিরলে কই
এক বাড়িতে দুটি মানুষ ফারাক কত সই!
কতবার তো বলেছি গো বলব না আর এমন
বলি কি আর মনের থেকে আমি কি আর তেমন!
দুর্গতিতে খুব পড়েছি
মনে মনে খুব লড়েছি
হে বিধাতা কি যোগ্যতায় আমায় দিলে বর
মানভঞ্জন করতে তাকত দাও গো শক্তিধর।

 

অর্থের আতিথেয়তায় প্রেম

প্রেমের কথা অনেক হয়েছে বলা
প্রেমের থেকে এবার নেব ছুটি
প্রেমের মধ্যে মনগড়া সব ত্রুটি
প্রেমের পথে নয় যে সহজ চলা!
প্রেমের মধ্যে কেবল দ্বন্দ্ব ভরা
প্রেমে কেবল রূপের ছটা চাওয়া
প্রেমে কত মান-অভিমান পাওয়া
প্রেম মানে কি সব কিছু মন গড়া!
জটিল অঙ্ক সহজ সরল প্রেমে
থাক তবে আজ প্রেমের গল্পখানি
কট্টুকু আর প্রেমের গল্প জানি
প্রেমপিয়ালি নৃত্যে আসে নেমে।
রাত্রি নামে সন্ধ্যা গভীর হলে
শঙ্খ বাজে দূরের কোনও গ্রামে
ঘণ্টা বাজে শ্রীকৃষ্ণের ধামে
রাত্রি এসে সিংহদুয়ার খোলে।
এমনি করে ফের হয়ে যায় ভোর
এমনি করে হয় রবীন্দ্র পড়া
কথায় কথায় প্রেমের গল্প গড়া
প্রেমেতে পায় মনও ভীষণ জোর।
থাক না এখন এসব কথা বলা
তার চেয়ে বরং অর্থনীতি ভাল
সেই তো দেখায় প্রেমের পথে আলো
ইঙ্গিতে তার প্রেম অচলা-চলা।
সব মানুষই প্রেমে পড়তে পারে
অর্থনীতি সবার জন্য নয়
প্রেমের মধ্যে মনের থাকে জয়
অর্থনীতি যেমন চালায় যারে।
তোমার কাছে অর্থনীতি হাসে
আমার কাছে অর্থনীতি ঢাকা
অর্থনীতি কারোর চালায় চাকা
কেউ বা মরে অর্থনীতির ত্রাসে।
মানবতায় প্রেমের হাসি খুব
জীবন যেন উছলে পড়ে পড়ে
অর্থনীতি সেও তো ঘরে ঘরে
কোথাও জেগে কোথাও দেয় সে ডুব।
প্রেমের যেমন লড়াই চলে মনে
অর্থনীতির দ্বন্দ্ব সমাজ জুড়ে
মানবতা খায় সে কুরে কুরে
ভাল বাসে থাকতে সঙ্গোপনে।
বলব না তাই প্রেমের কথা আর
প্রেমের থেকে আমিও নেব ছুটি
প্রেমই শেখায় ভাগ করে খাও রুটি
অর্থনীতি জীবন করে ভার।
সূর্য যতই ভাঙুক দখলদারি
আকাশও আজ দখলদারি চেনে
অর্থনীতি নিচ্ছে এসব মেনে
যতই প্রেমের মুখ হয়ে যাক ভারি!

অশোক মুখোপাধ্যায়। কবি। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতায়। প্রকাশিত বই:

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

কবুতর

কবুতর

অগ্নিকাণ্ড আমার চৌহদ্দিতে ধ্বংসস্তুপের ভীড় পুনর্বার নুয়ে পড়া অতীতের তীর জীবনের মাঝপথে রেখে যায় সম্পর্কের…..