আমার বসন্ত, আমার উত্তর-পুরুষ

অন্তরা দাঁ
মুক্তগদ্য
Bengali
আমার বসন্ত, আমার উত্তর-পুরুষ

বসন্তের প্রথম দিন। তার আগ অবধি শিরশিরে শীতে পশমের নরম আদর-মাখা উষ্ণতা আজ ছটফটিয়ে বললো নাকি…

“আজি দখিন-দুয়ার খোলা…”

আজই কি প্রথমবার কোকিলের কুহুতান কানে মধু ঢেলে দিলো? বসন্ত একটা অনুভুতির নাম বুঝি? প্রেমেরই মতো? প্রকৃতি’র অনুষঙ্গেরা যে অনুভূতিকে উস্কে দেয় মাত্র! আর সেইজন্যই সরস্বতী পুজোর দিনগুলোকে কে যেন তুলিতে আবীর রং ডুবিয়ে এঁকে দেয় নানা-রকম আল্পনায়! সবাই যে বলে বসন্তপঞ্চমী মানে বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে!

আমার বসন্ত আমার ভ্যালেন্টাইন। এক আমূল বোহেমিয়ান উত্তর-যুবক সে, রুক্ষ, বিবাগী, উদাসীন। বছর-শেষে একবার এসে সে কড়া নাড়ে আমার দুয়োরে। সারা বছেরের অপেক্ষা’র আগুন নিবিয়ে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে আমায়। আমার গালে তার রুক্ষ গাল ঘষে আ-আলজিভ চুমু খায়। জ্বালা জ্বালা করে আমার। সেই জ্বালা তীব্র হয়ে ক্রমশ জ্বর আসে। আমি থরথর করে কাঁপি। হাজার প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষমতা নেই সেই জ্বরের উপশমের। শুধুমাত্র তার সান্নিধ্যেই জ্বালাধরা সুখ, তার সান্নিধ্যেই অনন্ত শান্তির সুশীতল হাওয়ার নিরাময়। চৈত্ররাতের ঝড়ের পর যে একপশলা বৃষ্টি এসে শান্ত করে প্রকৃতি’র উষ্ণ আর্তি! উদাত্ত আলিঙ্গনে বেঁধে নিয়ে সে আমায় বলে “এসো, ভালোবাসি! ” তার চোখের আয়নার সামনে নিজের হা-ক্লান্ত চেহারা বড় বেমানান লাগে, ডার্ক সার্কলগুলো আরো ছড়িয়ে যায়, হাসতে গিয়ে ফেটে যায় শুকনো ঠোঁট, অযত্নের রুক্ষ চুল, দাঁতে -কাটা হাতের নখ সব ভুলে গিয়ে তাকে সংলগ্ন করে রাখি নিজের সাথে। ফিসফিস করে বলি—
তোকে ভালোবাসি প্রাণ আমার!

আমার চোখের আলোর ঐশ্বর্য, নির্জনতার জ্যোৎস্না আমার বিভাজিকা জুড়ে, আমার চৈত্রশেষের দুপুরের মত গরম নিঃশ্বাসে তার নিঃশ্বাস মিশিয়ে সে আমায় গাঢ়তর করে তোলে প্রেমে, বেদনায়।

আমার বসন্ত, এক অনির্বান আলো, একমাথা কাঁচাপাকা চুলের এক স্বরাট পুরুষ, কবিতার ঈশ্বর আমার। তার আবাহনে -বিসর্জনে, উপেক্ষায় -ভালোবাসায়, প্রগাঢ়তায় -উদাসীনতায়, আমার জীবনের সপ্তপদী গমন। দিনশেষের লালাভ -হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরে সে হেঁটে চলে যায় দূর দেশে। আবার, আবার আসবে বলে। যাবার আগে আমার চুলে গুঁজে দিয়ে যায় একটি রক্তপলাশের কুঁড়ি। ফাগুনের রাত, আগুন হয়ে কাটে আমার। আমি মুঠো করে খামচে ধরি তার পাঞ্জাবি’র বুক। মুঠো ছাড়িয়ে চলে যায় সে…

আমি ধুলোয় পড়ে কাঁদি। তাকে ধরে রাখার সাধ্য আমার নেই। রাত এসে ছুঁয়ে দেয়, ক্লান্ত চোখ মুছিয়ে বলে- আমি তোমার আজীবনের।

বসন্ত আসে। বসন্ত চলে যায়।আমার গর্ভে তাঁর উপহার দেওয়া ভ্রুণের নড়াচড়া। স্মৃতি-মেদুর।

কবিতা’রা জন্ম নেয়।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ