ঘৃণা (পর্ব – ৬)

শাহীদ লোটাস
উপন্যাস, ধারাবাহিক
Bengali
ঘৃণা (পর্ব – ৬)

পূর্ব প্রকাশিতের পর…

 

বাসন্তী পড়ছিস?

: না, কলেজে যাবো, কিছু বলবে?

: তোর লেখাপড়া কেমন চলছে?

: বাবা, আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু বলতে চাও, দেরি না করে বলে ফেলো।

: তেমন কিছু না, তোর সাথে একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

বাসন্তী বাবার সামনে বসলো। ইসমাইল মাস্টার বসলেন টেবিলের পাশের চেয়ারে।

: বল, কি নিয়ে আলোচনা করতে চাও?

: আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে নিয়মিত কলাম লিখবো, পত্রিকায় আমার প্রবন্ধ পড়ে লোকজন সচেতন হবে, বিষয়ও ঠিক করে ফেলেছি।

বাসন্তী হা করে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে।

: ইসমাইল মাস্টার বললেন, প্রবন্ধ লিখতে হয় যুক্তিপূর্ণ উদাহরণ আর বাস্তবতা দিয়ে, গল্প কবিতার মতো না, যা-তা লিখলেই হবে না, কল্পনাও মিশানো যাবে না।

বাসন্তী কথা বলছে না।

ইসমাইল মাস্টার ইতস্তত: করে বললেন, অবাক হচ্ছিস নাকি?

: বাবা তুমি প্রবন্ধ লিখবে?

: কেন, আমি কি লিখতে পারি না? বাংলাদেশের রাজনীতি অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে এই বিষয় নিয়েও লিখা যায়।

বাসন্তী নড়েচড়ে বসলো, বাবার আগ্রহী মুখের দিকে তাকিয়ে বড় মায়া লাগছে ওর। এত আগ্রহ নিয়ে বাবা এসেছেন, মুখের সামনে বলাও যাচ্ছে না, বাবা আমি একটু ব্যস্ত,আমাকে কলেজে যেতে হবে, তোমার কথা পড়ে শুনবো।

বাসন্তী হাসির চেষ্টা করে বলল, ভালো তো ছেলে রিপোর্টার বাবা প্রবন্ধকার, তোমার সুবিধাও হবে, ভাইয়ার কাছে হেল্প পাবে।

ইসমাইল মাস্টারের চোখ ঝলমল করে উঠলো। তিনি আরাম করে বসে বাসন্তীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, রাজনীতি নিয়ে লিখলে প্রথমে ব্রিটিশ থেকে শুরু করবো, আর ব্রিটিশ এবং বর্তমানের মৌলিক মিলগুলো সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হবে আমার লেখার মুল লক্ষ্য।

বাসন্তীকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে রওনা দিতে হবে, তা না হলে ক্লাস মিস হয়ে যাবে, তবুও বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলল, যেমন?

: যেমন, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া এই দেশ শাসন করার নামে সব সময় করেছিলো শোষণ। এই বণিক লুটেরা শাসকগোষ্ঠী বাংলা তথা ভারতবর্ষের ধন-সম্পদ তিন ভাবে লুণ্ঠন করে, প্রথমে তারা লুণ্ঠন করে বাংলার অসহায় মানুষের কাছ থেকে অধিক হারে রাজস্ব আদায়ের মধ্য দিয়ে, দ্বিতীয় লুণ্ঠন করে বাংলার মানুষদের ব্যবসায়ের ফাঁদে ফেলে আর তৃতীয় লুণ্ঠন চলে ইংরেজদের কর্মচারী ও দেশি গোমস্তাদের ব্যক্তিগত অবাধ লুটতরাজে, সেই ইংরেজ বিদায় হয়েছে। আবার এসেছিলো স্বৈরাচারী পাকিস্তান, সেই পাকিস্তানকেও আমরা বিদায় করেছি, কিন্তু এখন দেশি বেঈমানদের বিদায় করতে পারছি না। এর মূল হল আমাদের এই শাসক শ্রেণীর শোষকগন এই দেশের জন্মগত নাগরিক, তারা এই দেশের শাসক হবার ক্ষমতা রাখে সংবিধানের বৈধ মতে। তাদেরকে বিতাড়িত করতে গেলে আমাদের নিজেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে, আর তখনই এই গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাইরের দেশগুলো আসবে মাতব্বরি করতে, আমরা হারাবো আমাদের স্বাধীনতা।

বাসন্তী বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের দেশীয় শাসকগোষ্ঠী কীভাবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া হয়ে গেলো বাবা?

: পরিষ্কার করে বোঝাই তাহলেই বুঝবি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া আমাদের ধনসম্পদ লুণ্ঠন করে তিন ভাবে, এই তিন ভাবের সঙ্গে এখন লুণ্ঠনের ধারা কিছুটা পরিবর্তন আসলেও মৌলিক ধারা ঠিকিই আছে, যেমন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া প্রথমে লুণ্ঠন করে বাংলার অসহায় মানুষের কাছ থেকে অধিক হারে রাজস্ব আদায়ের মধ্য দিয়ে, এখন বাংলার আধুনিক লুটেরারা লুণ্ঠন করছে, সকল ক্ষেত্রে অধিক হারে ঘুষের মধ্য দিয়ে,যেমন ধর, এই বছর বাংলাদেশে সরকারী চাকরীর কোটা খালি আছে ছয় হাজার, এই ছয় হাজার লোকের নিয়োগ হবে ক্ষমতাশীল দলের ইশারায়, এই ইশারা যাদের পক্ষে থাকবে তারাই সরকারী চাকরিজীবী হতে পারবে। ইশারা পেতে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আর সরকারী আমলা কামলাদের যে হারে ঘুষের টাকা দিতে হয় তা কিন্তু ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়াকে রাজস্ব দেওয়া থেকে কোন হারে কম নয় ! ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া দ্বিতীয় লুণ্ঠন করে বাঙ্গালীকে ব্যবসায়ের ফাঁদে ফেলে, আধুনিক কালে এই ব্যবসার ফাঁদ ভিন্ন পথে চলে গেছে, এখন চাল, ডাল, আটা, নীল, এই সবের ব্যবসা চলে না, এখন ব্যবসা চলে ভোটের ব্যবসা। নির্বাচনের সময় আমাদের রাজনীতিবিদরা তাদের পকেট থেকে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করেন, খরচের মূলমন্ত্র কি?  মূলমন্ত্র ভোট কেনা, আমরা এক কাপ চায়ের বিনিময়ে, একটি লুঙ্গির বিনিময়ে, অথবা ১০০/৫০০ টাকার বিনিময়ে আমাদের ভোট বিক্রি করে দেই, আর সেই ভোট কিনে কোন রাজনীতিবিদ একটি নির্দিষ্ট টাইমের জন্য ক্ষমতায় যান, সেই সময়ে সেই রাজনৈতিক উন্নয়ন, পুনর্গঠন, পুনর্বাসন, পল্লী অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ইত্যাদির উন্নয়নের নামে নিজেরা নিজেরা দেশের সম্পদ, যা রাজস্ব আদায়ের মধ্য দিয়ে পাওয়া যায়, তা খেয়ে ফেলেন। কি দাঁড়ালো? এক কাপ চা, একটি লুঙ্গি,১০০/৫০০ টাকার কাছে আমরা বিক্রি করে ফেলি বাঙ্গালির ভবিষ্যৎ, এই ব্যবসা কিন্তু ব্রিটিশদের তেল, আটা, নীল থেকেও ভয়ঙ্কর। ইংরেজদের তুতীয় লুণ্ঠন ছিল তাদের কর্মচারী ও দেশি গোমস্তাদের ব্যক্তিগত অবাধ লুটতরাজের মাধ্যমে, এখন আধুনিক বাংলা বা স্বাধীন বাংলা যাই বলি না কেন, সেই ব্রিটিশদের তিন চারশো বছরের আগের সিস্টেম একটু পরিবর্তন করে তাই হচ্ছে, এখন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সরকারী জমি দখল করে ফেলে কোন বাধা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই, ক্ষমতাবান লোকদের চাঁদা দিয়ে চালাতে হয় সাধারণ জনগণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এলাকায় কোন দরবার বা সালিশ হলে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের বানাতে হয় মাতব্বর, এই মাতবরদের আবার টাকা দিয়ে মন যোগাতেও হবে, না হলে সত্য বা অসত্য কোন বিষয় তারা দেখবেন না, খেয়াল মতো রায় দিয়ে দিবেন, তাদের ইচ্ছাই হবে বড়। রাস্তা, ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট সকল ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের হাতে, আর এসব নাম মাত্র কাজ করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলার মেহনতি মানুষের কষ্টার্জিত টাকা। যে লোকটি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সরকারকে ট্যাক্স দেয়, যে মানুষটি নিশ্চিতভাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই লোকটিও ক্ষমতাসীন দলের কোন নেতার চাহিদা মিটাতে না পারলে খুন অথবা গুম হয়ে যাবেন। আজ বাস স্ট্যান্ড, ট্রাক স্ট্যান্ড, বাজার, মহল্লা, ব্যবসা বাণিজ্য, সব কিছুই ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে টাকা দিয়ে চালাতে হচ্ছে। আবার এর সাথে মিশেছে প্রশাসন। সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তার মানে কি? বলতে বলতে ইসমাইল মাস্টার বাসন্তীর চোখের দিকে তাকালেন, বাসন্তী কিছুই বলল না, বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। ইসমাইল মাস্টার আবার বলতে শুরু করলেন, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান তো ব্যক্তিগত লুণ্ঠন করেনি, তারা লুণ্ঠন করে তাদের নিজ নিজ দেশকে করেছে সমৃদ্ধশালী, আর বর্তমানের লুণ্ঠনকারীরা তারা লুণ্ঠন করে তাদের দেশকে সমৃদ্ধি-শীল করছে না, তারা লুণ্ঠন করে সেই টাকা পাঠায় বিদেশে, স্বদেশকে বানায় তলাহীন ঝুড়ি, বাংলাদেশের অসহায় মানুষের ক্ষুধার্ত মুখের কথা ওরা ভাবে না একবারও, ওরা দেখে না পাঁচ হাজার টাকা বেতনের চাকরীর জন্য বাংলার যুবকেরা রাতদিন পাগলের মত কি ভাবে ঘুরছে, তারা বুঝতে চায় না টাকার অভাবে অসংখ্য মা তার অভুক্ত সন্তান নিয়ে জেগে আছে রাতের পর রাত, লুণ্ঠনকারীরা একবারও ভাবতে চায় না, বাঙ্গালী হয়ে আরেক বাঙ্গালীর সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলছে কি ভাবে, শুধু মাত্র নিজের অপ্রয়োজনীয় স্বার্থে ধ্বংশ করছে তারা সোনার বাংলাকে !

ইসমাইল মাস্টার ধরতে গেলে সহজ সরল মানুষ, তার মাথায় কোন প্যাচ-গোচের ব্যাপার নেই, তিনি ইস্কুলে যান, বাসায় ফিরেন, বাজারে যান, আর পত্রিকা পড়ে সময় কাটান, এই হল তার জীবন। এই সাদা-সিদে জীবনে কেন এই সব জটিল ভাবনা ডুকে যাচ্ছে বাসন্তী বুঝতে পারছেনা, বাসন্তী বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। কোন রাজনৈতিক সমালোচকের মতো অনর্গল বলে যাচ্ছেন বাবা।

ইসমাইল মাস্টার বললেন, বাসন্তী আমরা প্রতিবাদী জাতি হয়েও এখন আমরা ভীরু, তাই আমরা স্বাধীন থেকেও স্বাধীনতা হারিয়েছি, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে, রফিক আজাদের সেই কবিতার আবেদন যেন এখনো রয়ে গেছে,

‘ভাত দে হারামজাদা
না হলে মানচিত্র ছিঁড়ে খাবো।’

বাসন্তী বাবার কথা শুনে ঘাবড়ে গেছে, বাবা তো এমন না, কি সব কথা বলছেন। বাবা এমন হয়ে যাচ্ছেন কেন?

ইসমাইল মাস্টার বাসন্তীর কাছাকাছি এসে বলল, তুই আবার ভেবে বসিস না, আমি রাজনীতি নিয়ে কিছু লিখবো, রাজনীতি নিয়ে লেখায় অনেক ঝামেলা। ছেঁচড়া মাস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত লেগে থাকবে আমার পেছনে। আমি লিখব কর্মজীবী শিশু নিয়ে। সাধারণ বিষয়, কেউ আমার পিছু লাগবে না, সবাই বাহবা দিবে। যাদের ঘরে প্রতিনিয়ত কাজের শিশু নির্যাতিত হয়, ভদ্রতার খাতিরে তারাও আমার সুরে সুর মেলাবে।

বাসন্তী বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, কর্মজীবী শিশু নিয়ে তুমি কি লিখবে?

ইসমাইল মাস্টার নড়েচড়ে বসলেন। গম্ভীর হয়ে বললেন, তুই কি জানিস আমাদের এই বাংলাদেশে ৫৭ শতাংশ শিশু তাদের শ্রম দিচ্ছে শুধুমাত্র খাদ্যের বিনিময়ে। ভাবা যায় ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৫৭ জন শিশু দু-মুঠো ভাতের জন্য কাজ করে! কিন্তু রাত দিন পরিশ্রম করেও কি তারা পেট ভরে ভাত পায়?  আমাদের দেশে ৫৭.৫ শতাংশ শিশু দৈনিক ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করে, আমার ধারণা এই হিসাব ভুল, আমার ধারণা শিশু গৃহকর্মর কাজের কোন সময় সীমা নেই, তারা প্রতিনিয়ত অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ২৩.৭ শতাংশ শিশুকে নামমাত্র পারিশ্রমিক দেওয়া হলেও তা নগণ্য, কারো কারো বেলায় উৎসবে বাবা ময়ের হাতে দুই এক হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া ছাড়া কোন কিছু দেওয়া হয় না গৃহকর্মের কাজের শিশুকে। কোন কোন শিশু গৃহকর্মীর বেলায় এমন হয় যে যদি মেয়ে হয় তবে মালিক পক্ষ আশার বাণী শোনায় যে, কাজের শিশুটি বড় হলে তারাই তার বিয়ে দিয়ে দিবেন, বিয়ের যা খরচাপাতি হবে তারা সব বহন করবেন, আর ছেলে শিশু গৃহকর্মীর বেলায় রব উঠে বড় হতে থাক, বড় হলে তাদেরেই কোন প্রতিষ্ঠানে তাকে চাকরী দেওয়া হবে অথবা এক সঙ্গে নগদ টাকা পয়সা দিয়ে কিছু একটা করার ব্যবস্থা করবে মালিক-পক্ষ। এখন আমার আসল কথা বলি, এই যে আশার বাণী, এই বাণী যে চিরকাল বাণীই থেকে যায় এই কথা কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না। এই শিশু গৃহকর্মীর কাজ করে বড় হতে থাকলে বড় হয়ে সে কি করবে? সে সমস্ত জীবন পড়ে থাকবে নিম্ন শ্রেণির ভাত কাপড়ের অভাবে থাকা মানুষিক বিকার গ্রস্ত পর্যায়ে। গৃহকাজে থাকা এই শিশু গৃহ কাজ ছাড়া আর কি শিখল? আর গৃহ কাজ তো কঠিন কোন কাজ না, যে কেউ পরিশ্রম করলেই গৃহের কাজ করতে পারে।

বাসন্তী বিরক্তি নিয়ে বলল, রুমী এই সব তোমার মাথায় ঢুকিয়েছে না?

: আমার মাথায় ও কেন এই সব ঢোকাবে? আমি কি কিছুই বুঝি না?  বিষয়টি আরও খোলামেলা করে বুঝাই। মনে কর, তুই যদি আমাদের ঘরে জন্ম না নিয়ে কোন বুয়ার ঘরে জন্ম নিতি, তাহলে কি হতো? তুই কি ডাক্তার হতে পারতি? ভাতের অভাবে তোকে কোথাও না কোথাও কাজ করতে হতো। ধর, ছোট বেলায় তোর অভিভাবক কোন বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে তোকে দিয়ে দিলো, তুই সেই বাসায় কাজ করতে করতে বড় হলী, বাসার কাজ ছাড়া কিন্তু কিছুই শিখা হল না তোর, তুই লেখা পড়া জানলি না, টেকনিক্যাল কোন কাজ শিখলি না, জগৎ সংসার বুঝলি না। তোর ভবিষ্যৎ কি? কোন হত দরিদ্রের ঘরে বৌ হয়ে বাকি জীবন কাটানো ছাড়া আর কিছুই না! তোর দরিদ্র স্বামী তোকে না খাইয়ে রাখলেও তোকে তার ওখানে পড়ে থাকতে হতো, সে নির্যাতন করলেও তোর কোন উপায় নেই, কারণ পৃথিবীর জন্য তুই অযোগ্য হয়ে ধীরে ধীরে বড় হয়েছিস, সব দিক থেকে তোর সকল পথ বন্ধ। বলতে বলতে ইসমাইল মাস্টার বাসন্তীর দিকে তাকালেন, হঠাৎ করে তার মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। বাসন্তী অগ্নিমূর্তি হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে, ইসমাইল মাস্টার ভয় পেয়ে গেলেন।

ইতস্তত করে তিনি বললেন, নিজের দিক থেকে যে কোন বিষয় দেখলে বিষয়টি সহজে বোঝা যায়। বলতে বলতে তিনি দাঁড়িয়ে পরলেন, কিছু না বলেই আস্তে আস্তে বাসন্তীর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ইসমাইল মাস্টার।

 

(চলবে…)

শাহীদ লোটাস। বাংলা ভাষার লেখক, বাংলাদেশ-এর নেত্রকোনা জেলায় মোহনগঞ্জ থানায় ৩০ মে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে শাহীদ লোটাস-এর বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখতে উৎসাহবোধ করেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ