পথের দিশা

রুদ্র অয়ন
ছোটগল্প
Bengali
পথের দিশা

বেলা হয়েছে অনেক । নিলয় বিছানায় শুয়ে-বসে ছটফট করছে। কিছু ভালোলাগছে না যেনো!
পত্রিকা পড়েছে প্রায় এক ঘন্টার ওপরে । সবগুলো নিউজের হেডলাইনে একবার চোখ বুলিয়েই তার পত্রিকা পড়া শেষ হয়ে যায়। আর ভালো লাগে না। প্রতিদিন প্রায় একই নিউজ। নিউজের চেহারা সেই একই রকম। রাজশাহীতে কিশোরীর আত্মহত্মা । রংপুরে পরকীয়ার বলি স্বামী…। দিনাজপুরে বিরোধীদলের সমাবেশস্থলে সরকারী দলের সভা আহবানের প্রেক্ষিতি সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিভাবান কলেজ ছাত্র নিহত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী ছাত্র সংগঠনের অতর্কিত হামলায় প্রতিপক্ষের দুই ছাত্রনেতা নিহত, আহত অর্ধশতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। নাজিরপুরে ৫ টাকার জন্য রিক্সাওয়ালা খুন। সৈয়দপুরে পুত্রের হাতে পিতা নিহত….. ইত্যাদি ইত্যাদি…!
একই রকম সংবাদ প্রতিদিন পড়তে পড়তে এখন আর ভালোলাগে না। মনে হয় কিছু একটা পরিবর্তন দরকার, খুব দরকার। সেই পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিলয়ের ভেতর এতো প্রকট হয়ে উঠেছে যে, আর স্থির থাকতে পারছেনা নিলয়।
নিলয়ের স্ত্রী রান্নাঘরে নাস্তা তৈরী করছে। বড় মেয়ে ঝুমুর তড়িঘড়ি করে নাস্তা সেরে স্কুলে চলে গেছে। ছেলের স্কুল ডে শিফটে, বাবার ভয়ে ছেলে সকালের ঘুম দিতে না পেরে এই রুম ওই রুম করছে। কোথায় একটু পড়তে বসবে- তা না! ঘুর ঘুর করে সময় নষ্ট করাতেই যেন ওর আনন্দ। নিলয় সবকিছু দেখেও কিছুই বলছে না। কত আর বলবে! প্রতিদিন একই ঘ্যানর ঘ্যানর করতে আর ভাল্লাগে না নিলয়ের।
নিলয়ের বউ রুমে ঢুকে নিলয়কে শোয়া অবস্থায় দেখে একটু চিন্তাগ্রস্থ হলো। কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো- খারাপ লাগছে নাকি তোমার, শুয়ে আছো যে?
নিলয় : খারাপ লাগছে না তবে অস্থির লাগছে, কি করবো বুঝতে পারছি না। এই দেখো না, আজকের পত্রিকার রিপোর্টগুলোও ঠিক গতকালের মতো। শুধুমাত্র পত্রিকার তারিখটাই ভিন্ন, দেখো…।
পত্রিকাটা বাড়িয়ে দেয় নিলয় তার বউয়ের দিকে।
নিলয়ের স্ত্রী পত্রিকাটা হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। এক রকম বিরক্ত হয়ে বলে- আবারো সেই একই কথা বলছো তুমি! তুমি কি রাজনীতিবিদ হয়েগেলে নাকি? দেশ নিয়ে এতো ভাবতে কে বলছে তোমাকে ?
একটুক্ষণ পর আবার বললো : বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দিতে হবে, বুয়ার বেতন, বাড়ী ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিতে হবে কালকের মধ্যেই। সেই হিসাব আছে তো?
স্ত্রীর কথা শুনে নিলয়ের বিরক্ত লাগে। বলে : আমি কোথায় ভাবছি দেশ নিয়ে, আর তুমি কিনা এই সামান্য টুকটাক সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছো! আসলে তুমি অনার্স পাশ করেছো খামোখাই। তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বাজারের কথা বলতে তো ভুলেই গেছো, নাকি!
নিলয়ের কথা শুনে তার বউ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে মুখ ঝামটা মেরে ওঠে।
বলে ওঠে : এই, তুমি আমার পড়াশোনা নিয়ে টিজ করছো কেন? আমি কি সাধে ঘরকন্যা করি। তুমিই তো আমাকে চাকরি করতে দিলে না। বলো, চাকরি কি আমি করতে চাই নি?
এটুকু বলেই মুখ ভেংচিয়ে বলে : উহ্ আমার বীর পালোয়ান রে। উনি বললেন, তোমার চাকরির কি দরকার। আমিই তো সব খরচাখরচের সামাল দেব। তুমি শুধু ঘর সামলাবে আর বাচ্চাদের মানুষ করবে। কই এখন কি করছো তুমি? ঘরে এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা কেন? বলো?
এই রে সেরেছে, গোখরা সাপের লেজে পাড়া দিয়ে ফেলেছে নিলয় । তড়াক করে লাফিয়ে বিছানা থেকে ওঠেই শার্ট গায়ে পড়তে পড়তে নিলয় বললো : কই বাজারের ব্যাগ দাও। বাজারটা সেরে আসি। আর আজ রাতেই তোমার সব খরচাপাতির টাকা দিয়ে দেবো , ঠিক আছে?
নিলয়ের বিছানা ছাড়া দেখে তার স্ত্রীর রাগটা একটু পড়ে যায়। তবুও ফোঁস ফোঁস করতেই থাকে। রাগী গলায় বলে : নাস্তা হয়ে গেছে, সেরে যাও, নয়তো আবার হোটেলে ঢুকে বাজারের হাতটান ফেলে দেবে। তোমাকে আমি চিনি না ভেবেছো? সংসার খরচের কথা বললেই ভেজা বেড়াল সেজে যাও। উল্লুক কোথাকার।
বউ রান্না ঘরে চলে যায়, আর নিলয় যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। যাক অল্পতে বাঁচা গেল। ভাগ্য ভালো ঘরের নাস্তাটা কপালে জুটলো। ধীরে সুস্থে বাথরুম সেরে ট্রাউজার পড়ে তৈরি হয়ে বাজারের জন্য বের হলো নিলয়।
বাজার সেরে এসে স্নান করে ড্রয়িং রুমে এসে বসে থাকে পুঁচকে প্রোগ্রামার রিংকুর জন্য। রিংকুকে ক্ষুদে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ বলে ডাকে নিলয়। ছেলেটি তার পরিচিত। গতকাল ছেলেটা বলেছিল বিশেষ প্রয়োজনে কথা আছে। নিলয় তাকে বাসায় আসতে বলেছে । ছেলেটা এখনো আসছে না। ঘড়িতে দশটা ছুঁই ছুঁই করছে। নিলয় অস্থির হয়ে আবারো পত্রিকা হাতে নিয়ে বসে। আলগোছে চোখ বুলাতে গিয়ে একটা নিউজে আটকে যায় চোখ।
পত্রিকার প্রথম পাতার মাঝখানের তিন কলামের নিউজ-
সাইবার যুদ্ধে ভারত হেরে গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, গত দুদিন যাবত ভারতীয় হ্যাকাররা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ন সরকারী-বেসরকারী কিছু সাইট হ্যাকিং করতে শুরু করলে বাংলাদেশী হ্যাকাররা তার জবাবে ভারতীয় সাইট হ্যাকিং করা শুরু করে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে বাংলাদেশী হ্যাকাররা এ পর্যন্ত প্রায় ২০ সহস্রাধিক ভারতীয় সাইট হ্যাক করেছে। বাংলাদেশী হ্যাকাররা এই সাইবার যুদ্ধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
নিউজটা পড়েই লাফিয়ে ওঠে নিলয়। চিৎকার করে বউকে ডাক দেয়- ঝুমুর মা ঝুমুর মা … তাড়াতাড়ি এদিকে এসোতো…!
নিলয়ের এমন অতর্কিত ডাক শুনে দৌড়ে আসে নিলয়ের স্ত্রী। কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে বলে, কি হলো? এতো ডাকাডাকি করছো কেনো? বাড়িতে কি ডাকাত পড়েছে নাকি?
নিলয় বললো : আরে না না। দেখো না কি সাংঘাতিক নিউজ। বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা এবার ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে। এই দেখো, এই নিউজটা পড়ো। বলেই নিলয় পত্রিকাটি বাড়িয়ে দেয় বউয়ের দিকে।
আগ্রহের সাথে পত্রিকাটি হাতে নিয়ে নিউজটি পড়তে থাকে ঝুমুর মা। আর নিলয় লক্ষ্য করে ওর চেহারায় একটা খুশির ঝলক বয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে। নিলয় খুবই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে ওর প্রতিক্রিয়া দেখে। নিলয় বলে ওঠে : দেখেছো ছেলেদের কাণ্ড। বিজিবি আর আর্মি যা পারেনি তা এই পুঁচকে ছেলেগুলো কি অনায়াসে তা করে ফেললো। এবার একটা কিছু হবে, দেখে নিও।
নিউজটা পড়তে পড়তে তার চেহারায় ভাবান্তর হয়। কপাল কুঞ্চিত হতে থাকে। তা দেখে নিলয় শঙ্কিত হয়ে পড়ে, কি এমন ঘটলো যে ও চিন্তিত হয়ে গেলো? নিলয় উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে বউয়ের দিকে আর ওর ভাবান্তর লক্ষ্য করতে থাকে। নিউজটা পড়া শেষ করে খুব চিন্তিত বদনে সে তাকায় নিলয়ের পানে।
ঝুমুর মা বলে : আচ্ছা বলতো, এই ছেলেগুলোর কি হবে?
নিলয় থতমত খেয়ে যায়! অনেকটা উৎকণ্ঠার স্বরে বলে ওঠে : কি হবে মানে? কিসের কথা বলছো তুমি?
ঝুমুর মা বলে : বলছিলাম এই পুঁচকে বাংলাদেশী হ্যাকারদের কথা। এত মেধাবী বাচ্চাগুলো আবেগের বশে যা করেছে তাতো করে ফেলেছেই। কিন্তু আমাদের সরকার কি ওদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবে মনে করছো? দিল্লী থেকে এ ব্যাপারে সরকারকে চাপ দিলেই তো সরকার এই পুঁচকে ছেলেগুলোকে ধরপাকড় শুরু করে দেবে। তখন কি হবে? এই অমিত সম্ভাবনাময় ছেলেগুলোর জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠবে না? একবার ভেবে দেখো তো ব্যাপারটা?
স্ত্রীর কথায় বিষম খায় নিলয়! প্রচণ্ড একটা ধাক্কা লাগে তার মনে। নিলয়ের ভেতর আবারো সেই খারাপ লাগা ব্যাপারটা চনমন করে ওঠে। তাহলে? তাহলে কি হবে এই সম্ভাবনাগুলোর? এরা কি অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যাবে? আরে, এই ছেলেগুলোকে কাজে লাগালেই তো আমার দেশ অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারে। এরা হয়তো একেকজন বিল গেটস কিংবা স্টিভ জবস হয়ে যাবে একটু যত্ন নিলেই। নিলয় মাথা দুলিয়ে স্ত্রীকে বলে : না না তুমি যা ভাবছো বিষয়টা সেরকম নয়। সরকার ওদের ঘাটতে যাবে কেন? ওরা তো সরকারের কোন ক্ষতি করছে না। বরং ওরা সরকারের পক্ষ্য হয়ে কাজ করছে ফ্রি ল্যান্সারের মতো।
নিলয়ের স্ত্রীর কপাল আবারো কুঞ্চিত হয়। খুব ধীরে সুস্থে বলে, তোমার কথাই যেন ঠিক হয়। কিন্তু ব্যাপার হলো কি, বর্তমান সরকার জনগণের সুযোগ সুবিধার চেয়ে এক বিশেষ মহলের স্বার্থ সুবিধা দেখতেই বেশি তৎপর ! এহেন কর্মকান্ড দেখে সরকারের ওপর সর্বসাধারণ হতাশ! আর ভারত পলিসি কিন্তু আমাকে ও রকম ভাবতে বাধ্য করছে।
: কেমন করে?
– বন্ধু রাষ্ট্র ঠিক আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা যে সহযোগীতা করেছিলো এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের ফলে এই দেশের যে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয় তার সমাধান আজও হয়নি। ‘ একটুক্ষণ থেকে আবার বলতে লাগলো : সম্প্রতি এই দেখো না,সীমান্তে করিডোর দেয়া, অভিন্ন নদীতে বাঁধ প্রশ্নে সরকারের নতজানু নীতি, করিডোর দেয়ার ফলে ভারতীয় ভারী যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য দেশের অভ্যন্তরের তিতাস নদীসহ দশ-বারটি নদীখালে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ, সীমান্তে বিএসএফ এর বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড প্রশ্নে সরকারের নতজানু নীতি… আর কতো বলবো? এতো কিছু দেখেও কি তোমার বোধোদয় হয় না- ভারতের স্বার্থে আঘাত হানে এমন কিছু আমাদের ছেলেরা করে বসলে সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে?
বউয়ের কথা শুনে নিলয় থ’ মেরে যায় । ও যেভাবে কথা বলছে তা তো একজন সাধারণ গৃহিনীর কথা নয়। একজন সচেতন, শিক্ষিত মানুষের কথা। অথচ নিলয় ওকে চিনতেই পারেনি! দেশ নিয়ে এতো ভাবনা তার ? নিলয় সত্যি সত্যি স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মুখে কোন কথা যোগায় না। হা করে তাকিয়ে থাকে বউয়ের দিকে।
নিলয়ের বিষ্ময়েবিমূঢ় হওয়া তাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে না। সে বলতে থাকে : দেখো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। শুধুমাত্র নতুন দেশ লাভের আকাঙ্খায় পৃথিবীর কোন ভূখন্ড কখনো স্বাধীন হয়নি। আমাদের দেশও না। বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে এদেশের মানুষ পাকিস্তান বানিয়েছিল এক বুক স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছিলো । এ দেশের মানুষ আবারো রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের জন্ম দিলো। সত্যি করে বলতো এখানো কি আমরা মুক্তি পেয়েছি? সেই কাঙ্খিত মুক্তি কি আমরা পেয়েছি? সরকার সাধারণ জনগণের সুযোগ সুবিধার চেয়ে এক বিশেষ মহলের স্বার্থ সুবিধা রক্ষার্থেই বেশি সচেষ্ট। এই যে ডিজিটালের ধুয়ো তোলা হচ্ছে, সব সুবিধা/টু-পাইশ খাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আর জন সাধারণকে কলা দেখিয়ে মুলা ঝুলিয়ে দেবার যোগার সরকারের পক্ষ্য থেকে। ইন্টারনেট মেগাবাইটের সুলভ মূল্যের প্রতি ব্যবস্থা না করা ও মেয়াদবেঁধে দেয়া এটা কি ধরণের মনোভাব জনতার প্রতি সরকারের! আগে ফোন কলরেট ১৫% ভ্যাট/ট্যাক্স লাগতো, বর্তমানে লাগে ২২%, তার ওপর ফোনকলের সকল সুবিধায় জল ঢেলে কলরেট বাড়ানোটা জনতার প্রতি সরকারের পকেট কাটার একটা বাড়তি ধান্দা ছাড়া কিছুই না। আর উন্নয়ন! রাস্তা ঘাটের তো বেহাল দশা! সারাদেশে পানি বিদ্যূতের বিভ্রাট লেগেই থাকে প্রতিনিয়ত! দেশ বা দেশের মানুষের নয়, ওরা নিজেদের আখের গোছানোর উন্নয়নেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পায়না আর উনারা সামান্যতেই বিদেশ যান চিকিৎসা করাতে!
নিলয় অপার বিস্ময় নিয়ে হা করে গিলছি তার বউয়ের কথা। সে বলতে থাকে :
দেখো, এখনো আমরা রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হইনি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো যাকে চাচ্ছে তাকেই লোক দেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসাচ্ছে। আমরা এখনো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করিনি। আমাদেরকে এখনো পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা এখন সাংস্কৃতিক গোলামীর জিঞ্জিরে বাঁধা পড়ে যাচ্ছি দিন দিন। কেন, কেন? এই স্বাধীনতার অর্থ কী? যদি আমরা প্রকৃত মুক্তি না পেয়ে থাকি তাহলে তো এই স্বাধীনতার কোন মূল্য নেই। পথে প্রান্তরে আজও নারীদের নিরাপত্তা নেই। নির্যাতন অত্যাচার লান্ছনার স্বীকার হতে হয় প্রতিনিয়ত! আজও ধর্ষণ -খুনের স্বীকার হয় নারী। মানুষের স্বাভাবিক জীবনের গ্যারান্টি নেই আজ! এই রকম অসম্পূর্ণ পঙ্গু স্বাধীনতার কি দরকার ছিলো, বলো?
নিলয়ের স্ত্রী কথাগুলো বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। ওর চোখ টলমল করে ওঠে।নিলয় সম্মোহিতের মতো তার দুই হাত তুলে ধরে তাতে গভীর শ্রদ্ধার চুমু এঁকে দেয়। ধীর কম্পিত কণ্ঠে বলে ওঠে :
তোমার মতো একজন দেশপ্রেমিক মানুষের স্বামী হয়ে আমি আজ গর্বিত। তোমার মতো করে তো কখনো ভাবিনি। আমার ভাবনাগুলো ছিলো খেইহারা নৌকার মতো। আর তোমার ভাবনাগুলো সমুদ্রের অতল গহ্বর থেকে ওঠে আসা মুক্তোদানার মতো। বলো আমাকে কি করতে হবে?
ঝুমুর মা’র চোখ থেকে অশ্রুধারা নেমে আসে। নিজেকে সংবরণ করে বলে ওঠে : তুমিও তো একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। আর কিছু পারো না পারো এই পুঁচকে ছেলেগুলোকে আগে রক্ষা করো। দেশের জন্যে দেশের মানুষের জন্যে তুমি ভালো কিছু করবে এটাই তোমার থেকে আশা করি আমি। আর শোনো, ঐ কোমলমতি প্রোগ্রামারদের জন্যে কিছু একটা করো। তুমি যার জন্য অপেক্ষা করছো সেই রিংকুও সম্ভবত এই সাইবার আর্মির সদস্য। তুমি এদের সাথে মিলে দশের জন্যে দেশের জন্যে ভাল কিছু করবে। আমি তোমার পাশে আছি সব সময়।
স্ত্রীর কথা শুনে গর্বে নিলয়ের বুকটা ভরে ওঠে। নিলয় এতোদিন বুঝতেই পারেনি কত বড় দেশপ্রেমিক স্বত্ত্বাকে নিতান্ত গৃহবধু মনে করে এসেছে! নিলয় দিশেহারা হয়ে যায়। কি করবে না করবে ভেবে পায়না সে। এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। স্ত্রী বলে ওঠে : তোমার সাইবার যোদ্ধা চলে এসেছে বোধহয়। চেষ্টা করে দেখো এই অভাগা জাতিটাকে কিছু দিতে পারো কিনা, যাও।
নিলয় নতুন এক উন্মাদনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। হ্যা তা যে পারতেই হবে, এই অমিত সম্ভাবনাগুলো নিরাপত্তা ও গাইডলাইন দিতে হবে। দেশকে উপহার দিতে হবে একঝাঁক সাহসী তরুণ। যারা আলো হাতে পথ দেখাবে আগামীর…..।

রুদ্র অয়ন। কবি।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

পটচিত্র

পটচিত্র

  সৌম দাদুর কাছে থাকতে ভালোবাসত। গ্রামের নাম পাঁচুন্দি।আশেপাশে প্রচুর গ্রাম।সবাই সকলের খবর রাখে।সৌমদীপ এখানকার…..