পৃথিবী’র জাতিস্বর

পার্থ রায়
কবিতা
Bengali
পৃথিবী’র জাতিস্বর

পৃথিবী’র জাতিস্বর

কোন সে আলোনেভা সময়ে যথন বাঁশঝাড়ে গুটি গুটি সন্ধ্যা আড়মোড়া ভাঙছিলো
ঠিক তখন রোদ্দুর পালিয়েছিল, সারাসন্ধ্যে সারারাত ঘুরে সে ফিরেছে একটা ঘরে
যার কোনে একটা পাথর আর কিছু আলো ছিল
তোমরা হাতল টেনে দরজা খুলে দাও
ওকে আসতে দাও কিছুটা কাঁচা টলমলে এখনো
সেই দুটি অভিনব হাত তোমার বাড়িয়ে দাও ডেকে নাও বেঁধে নাও তোমার স্নেহে
রোদ্দুর ফিরেছে একসন্ধ্যে একরাত্রি বাদ ওকে জায়গা দাও ওকে বেড়ে উঠতে দাও
ওকে আর অন্ধকারে টেনো না ওকে ভালোবাসো
ঘরের কোণে পাথর আছে আছে একটু আলো তাকে জগদ্দল কোরোনা ছেনির আঘাতে প্রশান্ত তথাগতর আনত নেত্র মূর্তি করো রোদ্দুর এসেছে।

 

দুই

শেষ হয়ে যায় পরে যায় দাঁড়ি কমা সেমিকোলন অথবা একটা হাইফেনের সুতীব্র শাসনে নেমে আসে যবনিকা, আসে উপসংহার। অথবা ডেকে আনা হয়।
প্রেম কি শেষ হয়? বলির খড়্গে রক্ত চলকে ওঠে
আহা ওতো আত্মনিবেদন।
প্রেম ও কি তা নয়?
কতদিন দেখিনা তোমায়, আমাদের গল্পগুলো স্বপ্নগুলো ভাবনাগুলো রোদ পোয়ানোর বারান্দা আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ রেলগাড়ির জানালার মতো শুধু পিছন দিকে সরে যায়
আমরা কি ভাষা হারিয়েছি? সম্পর্কের উপত্যকায় বুঝি শীত নেমেছে?
ভালোবাসায় চিরদিনই আমি বেহিসেবি তুমি আমার পাসওয়ার্ড হয়ো
ডেবিট ক্রেডিট যুদ্ধ করুক আমার আলসেমির অপরাহ্নে।

 

তিন

চলে কি যাওয়া যায়
চলে যেতে হয়
বরাবর
অথচ ছাদের কার্নিশে ছুঁয়ে থাকে যে ভুল তাকে আমি প্রেম বলি
আর শিলিং যা ছুঁয়ে থাকে
সেটা নিঃসঙ্গতা
চারটে দেয়ালের ঘর
জীবনের সিঁড়ি পর পর
ভালোবাসা নেহাত ই দূরের গাংচিল, সন্ধ্যারাগে ঘর ফেরে।

 

চার

সেই দিন মানে উৎসবের দিন
যেদিন সবাই আমায় ত্যাগ করবে দেবে নির্বাসন
মুঠোফোনের ধাতব শব্দ যখন বারংবার জানান দেবে
সভ্যতা করেছে তোমায় ত্যাজ্য, তুমি সভ্যতার অক্ষমতার পচা বর্জ্য
আমার তখন মানুষ হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু
বিশ্বনবীর মুচকি হাসি পাথেয় নিয়ে
ঈশান কোনের মেঘ তখন ভুবনডাঙ্গার ছাতিম গাছের মগডালে বসে পা দোলায়
প্রজাপতি ধরার নেশায়
ছাতিম সেই অনাদি আদিম গন্ধ ছড়ায়, প্রজাতি ডেকে আনে
খোয়াইয়ে কালো গাঢ় সন্ধ্যে ঘনায়, চাঁদ লুকিয়ে মেঘের কোনায়
কিছুই কি ফুরায়? অনুপস্থিতি ই কি ফুরিয়ে যাওয়া?
তবে তো সভ্যতা কবেই গেছে হারিয়ে সেই মেসোপটেমিয়ার চরে
তবু কবিতারা জন্ম নেয় ছায়াপথ পাড়ি দেয়।

 

পাঁচ

খারাপ বাসার মতন ক্ষুদ্র আমি নই
চরাচর আমার কাছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তুচ্ছ
মহাবিশ্বের ঘৃণার মাঝে
আমি ওড়াতে পারি প্রেমের বিজয়কেতনের দর্প
ভালোবাসলে সবকিছু কেমন নীল হয়ে যায়
নীলছাতা, স্বপ্ন নীলচে যন্ত্রনা
মহাকাশের পৃথিবীর রং নীল
কি ভাবে যেন কাউকে বলা হয় জানো দেখা হবে
নীল পোশাকের নিচে আরক্ত যন্ত্রনা ঢেকে
কি ভাবে যেন বলি ভালো থেকো
আমি আশ্চর্য হই নিজের নিপুন অভিনয়ে
নীলাভ সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে কখনো তো বলা হয়ে ওঠেনি ভালোবাসি
তবু যেন কেমন করে মন বদল
সন্ধ্যারাগের শাঁখ বাজা ঘর
খারাপ বাসলে লাগে
ভালোবেসে আমি পৃথিবীর জাতিস্মর।

পার্থ রায়। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বর্ধমানে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

অহমিকা

অহমিকা

অহমিকা আত্মগরিমায় আজ অন্ধ হয়ে আছো, বিবেকের দংশনে মননে নেই বিশ্বাস। কর্মে ব্যস্ততা সময়ের আবর্তে…..