বার্লিনের স্বপ্নধূলি ছুঁয়ে

মোস্তফা মহসীন
ভ্রমণ
Bengali
বার্লিনের স্বপ্নধূলি ছুঁয়ে

রওনা হওয়ার সময় মুখে অ্যালকোহলের গন্ধ নিয়ে, ট্রেনের পাশে করমর্দন শেষে বিল এবং জিম জড়িয়ে ধরলো একে অপরকে। পাশে হ্যারিয়েট আর আরিয়ানা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আলতো চুমু খেলো ঠোঁটে, বেশসময় ধরে। লোকজন কেউ তাকাচ্ছে না ওদের দিকে! ভাবুন তো এটা বাংলাদেশে কখনো সম্ভব? চর্মচোখে দেখে যাচ্ছি, সাতসকালে চামড়ার ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে দলবেঁধে ছুটে যাচ্ছেন অগুণতি ধপধপে সাদা চামড়া, সোনালী কেশ, রুপালী কেশ, আর মেধার ঔজ্বল্যে দীপ্তিমান নীলচোখের ভূমিপুত্র-ভূমিকন্যা’রা। জীবিকার তাড়নায় ছুটে চলা এই মানুষগুলোর স্নায়ু যেমন ইস্পাতের মতো দৃঢ় তেমনি ফিগারটাও কিন্তু স্লিম! ফলত মুখে বাটারবন পুরে, হাতে কফিপট নিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে প্রাতরাশ সেরে নেওয়াটাও এদের অভ্যাস নেয়; জীবন চর্যারই অংশ।

ভোরের মৃদু সূর্যালোক আর সোডিয়াম মিলমিশে বিচ্ছুরিত হয়েছে এক বর্ণিল আভা। আমার পুলকিত মনে রঙ ছড়ায় নানান জাতি এবং মানুষের শোরগোল-হল্লা। যেখানে রচনা হতে চলেছে এক গতিময় জীবনের স্পন্দন। এমনতরো সময়ে প্রশ্ন জাগে, ভোরের দেবতা কি সৌর দেবতা থেকে পৃথক? জানি, জার্মান পুরাণে আছে ‘অস্ট্রিন’ নামে এক ভোরের দেবতা। সেই দেবতার নির্দেশই কি তবে –পৃথিবীর বুকে বার্লিন এমন এক শহর; যে শহর কখনো ঘুমায় না!

ডুসেলডর্ফ থেকে সাড়ে চারঘণ্টার ভ্রমণে বার্লিন হাউফবানহফ (সেন্ট্রাল রেলস্টেশন) পৌঁছে বুঝলাম, ইউরোপে বেড়ানোর জন্য ট্রেনের চেয়ে আরামদায়ক আর কিছুই হতে পারে না। মিতব্যয়ীদের জন্য খবরটা দুঃখজনক, উড়োজাহাজ এবং বাসের চাইতে ট্রেনের টিকেট এখানে সবসময়ই ব্যয়বহুল। স্টেশনটি সম্পূর্ণ কাঁচের তৈরি। ৯ তলা বিশিষ্ট। এবং এই স্টেশন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সেন্ট্রাল রেলস্টেশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব নাম ছিলো ‘লেয়ারটার বানহফ‘। দীর্ঘ শ্রমে ২০০৬ সালে ফিনিক্স পাখির মতোই পুরাতন ধ্বংসাবশেষ থেকে অপরূপ স্থাপত্য কৌশলের রহস্যে গড়ে তোলা হলো এই প্রধান স্টেশনটি। বার্লিন জার্মানির সবচেয়ে বড় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে লন্ডনের পরই সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস এখানটায়।

সময়টা অক্টোবর মাস। বার্লিনে হেমন্ত ঋতুর জয়ধ্বনী। গাছে গাছে আগুনঝরা পাতা। এখানে শীতের প্রস্তুতিতে গাছের পাতাগুলো ঝরে যাবার পূর্বে অন্তিমের গানে রেখে যায় বিদায়ের বিষাদ নয়; বহুমাত্রিক মুগ্ধতা। পথে ঢেকে যাচ্ছে ঝরে পড়া হলুদ পাতার রোমাঞ্চে! তাকিয়ে দেখছি, লাবণ্যময়-কোমল তরুণীরা কেমন করে তা পা দিয়ে পিষে এগিয়ে যাচ্ছেন মাধুর্যময় কলধ্বনিতে। একদিকে তুষারপাত, কিছুক্ষণ পরেই ঝকমকে কড়া রুপোলী রোদের ঝলক। একটু পরেই বেরসিক বৃষ্টি। আর তার মাঝে বোহেমিয়ান আমি! হেমন্তের ঠান্ডা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে ভাবছি, একটি ইংরেজি শব্দ -‘আনপ্রেডিক্টেবল’জার্মান আবহাওয়া বিশ্লেষণে কতোটা না উপযোগী!

ওরানিয়েনপ্লাটজের ‘ওরা‘ বার্লিনের অন্যতম থিম ক্যাফে। কাঠের কাউন্টার মোমবাতির আলোয় কফি অন্যরকম এক সুখানুভূতির দোলা দেয়। এখানেই পরিচয় হলো মিরোস্লাভ ক্রুজ নামের এক জার্মান প্রৌঢ়ের সাথে। বার্লিন ঘুরতে এসেছি জেনে, পেশায় প্রকৌশলী এই ভদ্রলোক আমাকে শহরটি সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য যোগ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কথায় -কথায় জানালেন, বার্লিন মনোরঞ্জনের শহর। মনোরঞ্জন লুটে নিতে পর্যটকসহ সকলের জন্যই গত শতাব্দীর বিশের দশক থেকে এখানে নাচ-গান-নগ্নতার রেওয়াজ জারি আছে। হালে পৌরকর্তারা জনগণের জন্য একটি নতুন বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাচ্ছেন, যার শ্লোগান হতে যাচ্ছে, ‘স্বাধীনতার রাজধানী‘। আরোও জানলাম, স্বাধীনতার এই রাজধানীতে বার্লিনে নাইট লাইফ বলেও আলাদা একটা জগৎ আছে। ঊর্বশীদের আতিথেয়তায় সেই রাত নাকি এতোটাই স্বপ্নীল আর মাদকতার, এখানকার অনেক বাসিন্দাই তাই ‘আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজ, মেকস আ ম্যান হেলদি‘ ভুলে সারাদিন ঘুমিয়ে থাকেন শুধুই রাতটাকে অনিন্দ্যসুন্দর করে রাখার জন্য!

রাস্তায় শোয়া মানুষটার পাশে হাঁটুমুড়ে বসলো এক মহিলা। বললো, পালস বুঝা যাচ্ছে না! তবুও একটি ওভারকোট গোল করে পেঁচিয়ে সেই ঝুলে পড়া মাথার নীচে দেওয়া হলো। লোকটির হাঁটু উঁচু করে উপর-নীচ করানো হলো, সঙ্গে শরীরের পোশাকও ঢিলেঢালা করে দেওয়া হলো। থেমে ছিলো দোতলা একটি বাসও, চলতে শুরু করার পর দ্রুত ঘটে যাওয়া দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে অপরিচিত সব যাত্রীরা পরস্পর কথা শুরু করে দিলো। সেবকের ভূমিকা নিতে মুহূর্তেই সেখানে কয়েকজন পুলিশেরও আগমন ঘটলো। জায়গাটার নাম শার্লটেনবার্গ। হাঁটা পথধরে আমি যাচ্ছি বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। চলার পথে তবু হৃদয় ছুঁয়ে গেল একজন ভবঘুরের জন্য জার্মানদের অতলস্পর্শী মানবিকতা!

সময়টা ১৯৩৬ সাল। অলিম্পিক সামনে রেখে নাৎসিদের দাপট দেখাতেই তৈরি হলো এক বিরাট স্টেডিয়াম। দৌঁড় প্রতিযোগিতায় জার্মানরা শ্রেষ্ঠত্ব দেখাবে এই ভেবে সেদিন গ্যালারিতে বেশ খোশমেজাজে বসেছিলেন স্বয়ং ফুয়েরার। কিন্তু হিটলারের আশায় ছাই ছিটিয়ে যেন চপেটাঘাত হয়েই দেখা দিলো, এক কালো মানুষ জেসি ওয়েন্সের অ্যাথলেটিক ট্র্যাক বিজয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই অ্যাথলেট চারটি সোনা জিতে প্রমাণ করেছিলেন মানুষ পরিচিত তাঁর কর্মে, গায়ের রঙের কিংবা জাতিগত পরিচয়ে নয়। বার্লিনে কালো মানুষের সেই গর্বিত উত্থানের সাক্ষী অলিম্পিক স্টেডিয়াম তখন আমার নয়ন জুড়াচ্ছে! স্টেডিয়ামটি যদিও রিমোট এরিয়ায় কিন্তু এতো চমৎকার যে মুগ্ধতায় বুজে যাচ্ছে চোখ। বাইরের রূপটাও অসাধারণ। সুন্দর সবুজে লতানো ঝোপঝাড়। তার মাঝে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে পাইনের সারি। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল যারা চাক্ষুষ বা সরাসরি দেখেছেন কেবল তারাই জানেন, জিনেদিন জিদান এবং মাতেরাজ্জির সেই ঐতিহাসিক দ্বৈরথ! এখানেই পরিচয় হলো হুমবোল্ট ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের ছাত্র জুলিয়ান কাটলারের সাথে। সম্মোহিত করার মতোই শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে সে জানালো, বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ আসনসংখ্যা ছিয়াত্তর হাজার। জার্মান লীগে বায়ার্ন মিউনিখের সাথে বার্লিনের খেলা হয় যখন শুধু তখন স্টেডিয়ামটি কানায় কানায় দর্শকে পূর্ণ হয়ে যায়। স্বভাবে বিনয়, নাকের ডগায় লেপ্টে থাকা জার্মানদের পরিণত শান্ত সৌন্দর্য নিয়ে জুলিয়ান আরোও জানায়, এছাড়া অলিম্পিকের শুরুতে মশাল জ্বালানোর প্রচলন থাকলেও সেখানে দৌঁড় ছিলো না। পরে তার সঙ্গে মশালদৌঁড় যুক্ত হয়ে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পায়। বার্লিন অলিম্পিকে নাৎসি জোসেফ গোয়েবলস তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিলো আধুনিক অলিম্পিকের আজকের মশালদৌঁড়।

এখানে মেট্রোরেল মানে সাবওয়ে বা ‘উবান’। জানালা দিয়ে দেখছি চারশত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্প্রে নদী; কতোটা বাড়িয়ে দিয়েছে বার্লিনের সৌন্দর্য? নদীটা বার্লিন শহর চষে স্যাক্সনি, ব্রান্ডেনবার্গ হয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের বুকের ভেতর প্রবাহিত হয়েছে। ছোট শহরগুলো কোত্থেকে এসে উঁকি দিয়ে আবার দৃশ্যের বাইরে মিলিয়ে যায়। কলকারখানায় হুটহাট শব্দে শ্রমজীবীরা যন্ত্রের অনুশীলনে নিমগ্ন। ট্র্যাডিশনাল কাঠের অথবা কটেজ স্টাইল বাসাবাড়ি। কোনও বাসার বারান্দা থেকে রেলগাড়ীর দূরত্ব অনেক কম। দেখতে দেখতে এসে গেছি পেরিৎসার প্লাটজ। বহুবর্ণ, বহু দেশের মানুষের পদচারণায় হৈ হৈ রই রই ব্যাপার। এটাই যে ঐতিহাসিক বার্লিন গেইট (জার্মানরা বলেন ব্রান্ডেনবুর্গার টর)। ১৯৬১ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮৯ সালের নভেম্বরঅব্দি ২৮ বছর দুইমাস সাতাশদিন বার্লিনকে বিভক্ত করে রেখেছিলো এই বার্লিন প্রাচীর। ব্রান্ডেনবুর্গ গেইট দীর্ঘসময় জার্মানির বিভাজনের প্রতীক ছিলো। এমনকি ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীরের পতনের পরও ব্রান্ডেনবুর্গ গেইট পার হবার উপায় ছিলো না। সে বছরের ২ ডিসেম্বর অবশ্য সেই অবস্থার পরিবর্তন আসে। বার্লিনবাসী তখন সহজেই বাঁধাহীনভাবে ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্কটি উপভোগের সুযোগ পান। এই জায়গাটি মোটেই মনখারাপ করে থাকার জায়গা না।  ঘোড়ার গাড়ি, হিপহপ নাচিয়ের দল, সাইকেলে চাপা সুভ্যেনির বিক্রেতা, সবমিলিয়ে হুলস্থুলকাণ্ড। ঘোড়সওয়ারির আওয়াজে মনে পড়ে যায় নোবেলজয়ী জার্মান কবি গুন্টার গ্রাস’-এর অমর কবিতার কয়েকছত্র:

আবার এসেছে দেখো, ঘোড়সওয়ার
কারো সঙ্গে করেনি আলাপ, অথবা করেনি গুলি
খায়নি সে ভেড়ার মাংসের রোস্ট
আবার এসেছে দেখো, শীতের সকাল
ঢেকে দেয় সব– ঘাস,নির্দোষ মেষ আর নতুন সাজ।
কসাই এবং ঘোড়সওয়ার
তোমরা সঙ্গীতকে কেন সফেদ বলো?
(ইস্টার সঙ্গীত)

সময় ঘোড়ার মতো টগবগ ছুটছে, বার্লিনের প্রসিদ্ধ মিউজিয়ামও ঘুরে দেখতে হবে তো! এ যাত্রায় বার্লিনে দীর্ঘদিন যাবৎ থিতু হওয়া মুন্সিগঞ্জের মোখলেস ভাইকে পাওয়া গেল। টার্কিস চিকেন ডোনার আর ড্রিংকস শেষ করে মোখলেস ভাইয়ের হাত ধরে ছুটলাম মিউজিয়াম দর্শনে। ১৮৭৬ সালের পুরাতন জাতীয় গ্যালারিতে উনিশশতকের চিত্রের বিস্তৃত সংগ্রহ দেখে চোখ রীতিমতো ছানাবড়া হবার যোগাড়! ক্লাসিসিজম, ইমপ্রেসনিজম, রোমান্টিসিজম, মডার্নিজম শিল্পের প্রতিটি প্যাটার্নের নান্দনিক সব ছবি। হামবুর্গ বানহফ জাদুঘর, বার্লিন যে সমসাময়িক শিল্পের একটি বিস্তৃত সংগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা প্রদর্শনশালায় ঢুঁকেই বোঝা গেল। এটি জার্মান ন্যাশনাল গ্যালারিরও একটি অংশ।

নির্বাচনে জয়লাভ করবার জন্য যদি কোনও দল তার দেশের একটি আস্ত দালানে অগ্নিসংযোগ ঘটায়, তবে আপনি তাকে কি বলবেন? নিশ্চয় উন্মাদ? ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে এডলফ হিটলার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জার্মান ‘কমিউনিস্ট’দের ওপর যাবতীয় দায় চাপিয়ে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করেছিলেন। হিটলার আগুন লাগিয়ে জার্মান পার্লামেন্ট ভবন ‘রাইখস্টাগ’-এর ক্ষতিই সাধন করেননি এর মধ্য দিয়ে গোটা জার্মান জাতির ভাগ্যকেই তিনি আগুনে ভস্মীভূত করেছিলেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ অন্তত সেই সাক্ষ্য বহন করে। রাশিয়া দখলের উচ্চাভিলাষ থেকে লেনিনগ্রাদ শহরে পৌঁছে সাধারণ রুশদের উপর অবর্ণনীয় নিপীড়ন চালিয়েছিলো নাৎসি সৈন্যরা। সে কারণেই বার্লিন শহর জয়ের পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্তালিনের রেড আর্মির ভয়ানক ক্ষোভ যেন আঁচড়ে পড়েছিলো-‘রাইখস্টাগ’ ভবনের ওপর। ফ্যাসীবাদের কোনও চিহ্নই আর জীবিত রাখতে রাজি ছিলেন না মহামতি স্তালিন এবং সোভিয়েত সৈন্যরা। মিত্রবাহিনী কর্তৃক বার্লিন শহর দখলের পর তাই রাইখস্টাগ গম্বুজের মাথায় উড়িয়ে দেওয়া হয় হাস্তে-হাতুড়ি শোভিত লাল পতাকা। অভ্যর্থনা কক্ষ পেরিয়ে রাইখস্টাগের বিশাল হলরুমে ঢুকে ভাবছি, একদিন এই রাইখস্টাগ ভবনে বসে পৃথিবীর মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে বসতেন হিটলার এবং তার নাৎসি পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। ইতিহাসের নানা রসদ মজুদ থাকায় রাইখস্টাগ ভবন দেখতে প্রতিবছর প্রায় ত্রিশলাখ পর্যটক ভীড় করেন এখানে। বাইরের বাগানে রাজসিক ভঙ্গিমায় টিউলিপ, গোলাপি ক্লেমেটিস, গুচ্ছ গুচ্ছ রোজমেরি পর্যটকদের রাতকে মাতোয়ারা করে দেয়। বাগানজুড়ে ক্রমাগত ছড়িয়ে পরা রূপ রাশি অতিক্রম করে এগোচ্ছেন নানা দেশের অচেনা আগন্তুক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস এবং রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য জায়গাটি ঘুরে দেখার প্রয়োজনীয়তা জানালেন মোখলেস ভাই। সঙ্গে সঙ্গে আমিও সহমত পোষণ করলাম।

সে-সময়ে বার্লিনের আকাশে চাঁদ উঠেছে। আমি আর মোখলেস ভাই পার্লামেন্ট ভবনের বিশাল ঘাসের মাঠের কিনারে, মুক্ত হাওয়ায় বসে পড়লাম। ফুরফুরে মেজাজে প্যান্টের পকেটে সিগারেট খুঁজে পেয়ে, ব্যাকপ্যাক হাতড়ে মোখলেস ভাই ‘বেক’ ব্র্যান্ডের দুটো বিয়ারক্যান বের করলেন। আমার ধারণা, আমরা চাঁদের আলোয় দৃষ্টিসীমার বাইরেও অনেক দূর দেখতে পাচ্ছি…। যেখানকার সেলুলয়েডে ভাসছে রাইখস্টাগের পীনোন্নত গম্বুজ। হয়তো ও-ই গম্বুজের মাথায় লেখা আছে একটি প্রশ্নের উত্তর। দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধে হেরে গিয়ে, অজস্র ত্যাগ আর ভার্সাই চুক্তির মতো অগুণতি ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, একটি জাতি কেমন করে পৌঁছে গেল ঐতিহ্য আর মর্যাদাবোধের সিংহাসনে?

তাহলে কি সত্যিই নীল চোখ আর নীলাভ রক্তে তৈরি নর্ডিক জার্মানরা পৃথিবীর বুকে অন্যরকম এক মাংসজীব বা জীবাত্মা; ‘আর্যজাতি‘? যারা ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই গলা ছেড়ে অনায়াসে গাইতে পারে বিজয়ের গান!

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

রে এলাম সিঙ্গিগ্রাম, কবি কাশীরামদাসের জন্মস্থান।

রে এলাম সিঙ্গিগ্রাম, কবি কাশীরামদাসের জন্মস্থান।

কবি কাশীরামদাসের জন্মস্থান পূর্ববর্ধমান জেলার সিঙ্গিগ্রামে বেড়াতে গেলাম।তাঁর জন্মভিটের ভগ্নাবশেষ দেখলাম।আমি,মিহির,রিমি,সোমা,রজত সকলে গ্রাম ঘুুুুরলাম। চারদিকে…..

শিশিরবিন্দু

শিশিরবিন্দু

ভ্রমণবিলাসী চারজন বেরিয়ে পরলাম ভ্রমণে। আমিও গেলাম।প্রথমে ওরা গেল মুকুটমণিপুর। সপ্তাহান্তে পিকনিক বা একদিনে ছুটিতে…..