বৃষ্টিবাহী ফেরি

বল্লরী সেন
কবিতা
Bengali
বৃষ্টিবাহী ফেরি

ফিরে আসার জন্য আপনাকে গড় করি।
জান কবুল, একদিন রাসের চাঁদ ফেরি করুন কয়েকবার
দরিয়ায় ডুব্ ডুব্ ত্রাসপানি এলে সাঁঝের গলুই পার
হবে ধনিয়াখালির বাঁজা মেয়ে, কাপড়ের কমলা পাড়ে
কতবার সে তার কৈশোর মুছে ফেলেছে
গৃহে তার ১৮ বছরের পুত্র
প্রতিরাতে
একই খাটে শুয়ে
মাংসের কোয়াগুলো ফেলে দেবে বলে
ফ্রিজ থেকে বার করে, ভুলে যাওয়া কৌটোয় তার
যোনি খুলে রাখা আছে ২২ বছর… কদমের থেঁতলানো
পিন্ডের ওপর মায়া হয়। মনে হয় এই বুঝি ডাকলো কেউ
কেউ যেন বুক ফাটিয়ে কেঁদে বারণ করছে
আসলে কেউ নয়।
পর পর সমস্ত সংখ্যা প্রতারক। একে একে সব্বাই আমারি
গায়ের পরে ভাত উগলে দেয়। বিগতজনমের অন্ন তরকারি,
নৈহার ফেরত মেয়ে যেমন কান্নার ভেতরে ছুড়ে দেয়
টুকরো করা হরলিক্স বিস্কুট, চাদমালা হরফের পাশে।

 

দুই.

এখন বলামাত্র
বিষন্নতা হবে। জলের ওপর থেকে সরে
শব্দের বাসন মাজা ছাই থুপ্ থুপিয়ে পানকৌড়ির
ডানায় গোটা আকাশ টা নিয়ে উড়াউড়ি করবে
পেখম খুলে একটি বার বোসো
বলো, তোমাদের সাত দাদার একটি বোন, এমন কুচ্ছিত
যে তাকে আর চিনতে পারবে না।

 

তিন.

আসলে
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়
আমাদের ছোটবেলাগুলো না পারা এক একটি
সরস্বতী পুজো
আর দেখা হয়ে যায় কোনো এক গড়চুমুক
গীতাঞ্জলি স্টেশন।

 

চার.

অতন্দ্র প্রহরী ছিল কোহীতুরের মতো। লীলার প্রথম সুপারি
দিল সুবাস, রেবা বেত্রবতীর তীরে জেগে উঠে একদিন সমস্ত নখ কেটে ফেলেছিলে। সেই হাত, মাশাল্লাহ্… অশ্রুকে রক্ত করে দিল। নিশাচর রমণীর ওমে তোমাকে জলপাই তেলে তাপ দিয়ে সুস্থ করেছি, আমার কোনো নাম নেই, নিপরিচয়, না পাক্ এমন কায়, অস্থিমাংসমজ্জায় বসন্ত এসে লাগে। আমি তাকে পেটের তলায় রেখে বাঁচিয়েছি, কোঁকড়ানো কাজলের নুন মেখে নাভিকুণ্ডে মুখ রাখার এক ফোঁটা আগে
নিজের গেরুয়া বীর্যের দিকে তাকিয়ে থেকেছি
হাঁ করে। তখন আষাঢ় মাস। মাস পেরোলে তার কাঁধ শক্ত
হবে, ভ্রূপল্লবে চোখে চোখ রাখবে সে, শীতলতম রাতগুলি এলে মাদী মায়ের মতো
আমি তার সঙ্গে দেহের চাদরে একই চামড়ায়
মিলিত থেকেছি
যথার্থ দোসর।

 

পাঁচ. 

গাছের চাতাল ধরে অববাহিকার
ডালপালা বিছানো, দৃষ্টি তার নিরন্ধ্র চারমিনার। ফুলকি
সরালে তোমার ওষ্ঠাধর হাতে লাগে। আকন্ঠ পুরিয়া করো,
শ্বাস নেবার ছলে একবার রোদের টোপর তুলে দেখি
পাহাড়ের গায়ে পড়ে আছে হাজার বছর
ধরে ভুলে থাকা
আমাদের
চুম্বনের দাগ। বলো, সত্যিই তোমার গ্রীবার ঘ্রাণ
তেমাথার স্নায়ুতে আমারি পুঁতে রাখা মেহগনি, বলো…
এরকমই চেয়েছিলে তুমি। মাইলের পর মাইল দূরে
ফ্রকের কোঁচরে
ভ্রান্তি, না দেখা হোক। বছর বিয়োনো কালরাত্রি শেষে
একদিন ধ্বনির মধ্যে ভেসে আসবে তোমার
হাফশার্টের কোলোন সুবাস, ওল্ড স্পাইস
কোনদিন চিনতে ভুল
হবে না।

বল্লরী সেন। গবেষক, কবি। প্রকাশিত বই বাংলায় ৫ টি ইংরেজি ২ টি। 'বিহান রাতের বন্দিশ' কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০১০ এ কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১২ থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা ভাষার নানা গবেষণায় যুক্ত। 'নারী বীক্ষায় পুরুষের কবিতা' তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণা গ্রন্থ।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

কবুতর

কবুতর

অগ্নিকাণ্ড আমার চৌহদ্দিতে ধ্বংসস্তুপের ভীড় পুনর্বার নুয়ে পড়া অতীতের তীর জীবনের মাঝপথে রেখে যায় সম্পর্কের…..