মাধবী (পর্ব-৮)

আলপনা তালুকদার
উপন্যাস, ধারাবাহিক
Bengali
মাধবী (পর্ব-৮)

পূর্ব প্রকাশিতের পর…

– কি কর?

– লাঞ্চ করব।

– অফিসের কাজ শেষ?

– না। সাড়ে তিনটা থেকে একটা মিটিং আছে।

– কি পরেছ, শাড়ী?

-হুম।

-কি রঙ?

– নীলের সাথে গোলাপীর কম্বিনেশন। হাফ সিল্ক।

-ইস্! তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।

মাধবী হাসে। লাজুক কিশোরীর হাসি। আমরা ভুলে যাই যে, আমাদের বয়স হয়েছে। ভালবাসার অনুভূতিটা বোধহয় এরকমই। একইরকম ছেলেমানুষি। একে অন্যকে কাছে পাবার একইরকম উন্মাদনা।

আমি জীবনে অনেকগুলো বড় ভুল করেছি। তারমধ্যে একটি হলো, মাধবীর সাথে নতুন করে যোগাযোগ করা। আমি ভেবেছিলাম, মাধবী আমাকে ভুলে গেছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে আছে। কিন্তু কথা বলার পরে বুঝলাম, সেও আমার মতই একা। তাই আমরা প্রায়ই কথা বলতাম। নিজেদের সুখ-দুঃখ শেয়ার করতাম। আমাদের ভালো লাগতো।

মাধবীর সাথে ওর স্বামীর মানসিক দূরত্ব ছিল অনেক। মাধবীর সৃষ্টিশীল মনের খবর সে জানতো না। আকাশ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সে থাকতো তার নিজের মত। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ভীষণ স্বার্থপর। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার অধিকারী। মাধবীকে সে বোঝার চেষ্টা করত না। আমি শুনে অবাক হয়েছি যে, ও মাধবীকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যায়নি। হানিমুনেও না।

মাধবী বিজি থাকতো তার সন্তান, সংসার আর চাকরী নিয়ে। অফিসের কাজের ফাঁকে ও মাঝে মাঝে আমার সাথে কথা বলতো। কথা বলার সময় না পেলে ইমেল করতো। আমি চাতক পাখির মত অপেক্ষা করতাম। আমাদের সময় ভালো কাটছিল। আমি মাধবীকে মিট করার জন্য ধীরে ধীরে উদগ্রীব হয়ে উঠছিলাম।

আমাকে পাঠানো প্রথম ইমেলে মাধবী লিখেছিল, “আই থিংক আই উইল নেভার বি এবল টু ডু সেক্স উইথ এনি আদার পারসন এক্সেপ্ট মাই হাবি; ইভেন নট উইথ ইউ। ইউ নোউ আই এ্যাম এক্সট্রিমলি শাই। ইট ইজ ইউ হু ক্যান মেক দিস পসিবল। ক্যান আই রিলাই অন ইউ????” উত্তরে আমি লিখেছিলাম, “অফকোর্স ইউ ক্যান বেবি। ইট উইল বি মাই প্লেজার। উই উইল মিট এগেইন টু মেক আ হেভেন অন আর্থ। লেট মি গিভ ইউ আ কিস অন ইওর লাভলী লিপস নাউ। হ্যাভ পেশেন্স এন্ড ওয়েট আ বিট। লাভ ইউ সো মাচ মাই সুইট হার্ট।”

ওগুলো ছিল কথার কথা। আমি জানতাম, মাধবী দেখা করবেনা। যদিও মুখে বলেছিল, আমি চিটাগং গেলে সে দেখা করবে।

মাধবীর সাথে আমার যোগাযোগটাকে আমাদের সমাজ খারাপ চোখে দেখবে। সবাই বলবে, আমি অন্যায় করেছি সোমার প্রতি। আর মাধবী অন্যায় করেছে ওর স্বামীর প্রতি। কিন্তু আমি যখন সোমাকে ভাল না বেসেও শুধুমাত্র শরীরের প্রয়োজনে ওর সাথে সেক্স করি, তখন কি ওর প্রতি অন্যায় করা হয়না? কিংবা মাধবীও? আমি আর মাধবী দিনের পর দিন সোমা আর আকাশের সাথে ভালবাসার অভিনয় করে যাচ্ছি – এটা অন্যায় নয়? বিয়ে মানে তো শুধু একটা দালিলিক প্রমাণ নয়। বিয়ে মানে দুই শরীর ও আত্মার মিলন। সোমার সাথে কি আমার কখনও সেটা হয়েছে? কিংবা মাধবীর সাথে আকাশের?

আমি মাধবীকে বলতাম, “যখন দেশে যাব, তুমি আমাকে মিট করবে। কোন কথা শুনবনা। তুমি না এলে আমি তোমার বরের সামনে গিয়ে হলেও তোমার সাথে দেখা করব।” ও বলত, “আমি কিছুতেই তোমার সাথে দেখা করবনা। করলে তোমাকে আমার কাছে পেতে ইচ্ছে করবে। তখন লোক জানাজানি হবে। তখন দু’জনেরই ঘর ভাঙবে। তারচেয়ে থাক।”

– সেদিন অতরাতে ফোন করেছিলে কেন?

আমি চমকে উঠলাম। আমি মাধবীকে কখনোই অসময়ে ফোন করিনা। কারণ আমি ওকে বিপদে ফেলতে চাইনা। আকাশ কিছু জানতে পারলে ওর সর্বনাশ হবে। এমনিতেই আকাশ মাধবীর কলিগরা ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলা পছন্দ করেনা। আমার কথাও সে জানে।

– কবে? আমি তো করিনি!

– তুমি ছাড়া আমাকে ওভারসিস কল কে করবে?

– তা জানিনা। তবে আমি সত্যি করিনি।

ইদানিং সোমাকে আমার খুব বেশী গম্ভীর লাগে। ও বোধহয় কিছু টের পেয়েছে। ও যখন কাজে থাকে, সেই সময়গুলোতেই আমি লম্বা লম্বা কল করেছি দেশে। যার অর্থ পরিস্কার। তাছাড়া ভালবাসা লুকানো যায়না।  সোমার সাথে আমার সম্পর্ক দিন দিন আরো শীতল হতে লাগলো। মাঝে মাঝে ঝগড়াও।

– এত কথা তুমি কার সাথে বল, আমি বুঝিনা?

– মানে কি?

– আমি রিডায়াল বাটন টিপে একটা নতুন নাম্বার পেয়েছি। ঐ নাম্বারে তুমি এক ঘন্টা ছত্রিশ মিনিট কথা বলেছ। নাম্বারটা ডিলিট করতে ভুলে গেছ। নাম্বারটা কার?

– আমি যাদের সাথে কথা বলি, তাদের সবাইকে তুমি চেনোনা।

– চিনতে চাচ্ছি। বল কে?

– আমার ঢাকা কলেজের বন্ধু। এখন পত্রিকা অফিসে কাজ করে।

– বেশ। আমি একদিন ফোন করে কথা বলে নেব।

– নিও।

সোমা দেশে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সে দেশে যাবে। আমার বাড়ী থেকেও সবাই, বিশেষ করে মা নীলকে দেখতে চাচ্ছিলেন অনেকদিন থেকে। শেষে আমি দেশে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক করলাম, আমি পনেরো দিন পর চলে আসবো। সোমা থাকবে মাস চারেক।

মাধবীকে আসার কথা জানালাম। বললাম, সবার সাথে দেখা করা, এখানে ওখানে যাওয়া। বিজি থাকব খুব। ছেলে হবার পর প্রথমবার দেশে যাচ্ছি। গ্রামের বাড়ী যাব। সোমাও দেখা করবে ওর রিলেটিভদের সাথে।

শেষের দিকে যখন আমাদের প্রেম তুঙ্গে, তখন আমাদের মধ্যে ‘লজ্জা লজ্জা’ ভাবটা অনেক কমে আসে। আমদের সম্পর্ক তখন এতটাই কাছাকাছি যে,  আমরা অনায়াসে অনেক কিছু বলে ফেলতাম। মাধবী যেমন ছিল রোমান্টিক, তেমনি ছিল দুষ্টুও।  আমি তো বলি ‘বদের হাড্ডি’। ইচ্ছে করে চিঠির শেষের দিকে এমন কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কথা লিখত যে, সেগুলো পড়ার পর দিন-রাত আমার মাথার মধ্যে ঐ দৃশ্যটাই ভাসতো।

একবার সে লিখল, “আমার মাঝে মাঝে আলাদ্বীনের জ্বীন হতে ইচ্ছে করে। তারপর উড়ে গিয়ে তোমার দরজায় কড়া নাড়বো। তুমি দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলবে, তুমি?!! তুমি এখানে কি করে এলে? আমার চোখেমুখে তখন ভাদ্র মাসের ভরা জোছনার হাসি। আমি দরজা বন্ধ না করেই তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব। কেউ দেখলে দেখুক।”

মাধবী ছিল প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। আমি কাজে বসেও ওর কথা ভেবে মনে মনে হাসতাম। দরজার কাছে গেলে মনে হত, ওপাশে মাধবী আছে। মাইনাস তাপমাত্রায় সাইকেল চালিয়ে আসার সময় শীতে হাত-পা জমে গেলেও দিব্য চোখে দেখতাম, ভাদ্র মাসের জোছনা রাতে আমার বাড়ীর ছাদে দাঁড়িয়ে আমি মাধবীকে আদর করছি।

এখনও কি ওর সেই ছেলেমানুষীগুলো আছে? খুব জানতে ইচ্ছে করে। ভেবেছিলাম, দেশে গিয়ে কোন এক ফাঁকে মাধবীকে দেখে আসবো। বন্ধুদের সাথে দেখা করার নাম করে। প্লেনে যাওয়া-আসা মিলিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসব। এতদিন পর দেশে এসেও ওকে দেখতে না পেলে কষ্ট হবে খুব।

আবার ভাবি, যত ভালোই বাসি,  আমি কি সোমা-নীলকে ছেড়ে মাধবীকে বিয়ে করতে পারব? কিংবা মাধবী কি স্বামী-সন্তান ছেড়ে  আমাকে বিয়ে করবে? তাহলে জটিলতা বাড়িয়ে কী লাভ?

উল্টোটাও ভাবি। জীবন তো একটাই। সারাজীবন যাকে এত ভালবাসলাম, তার সাথে দেখা করলে খুব কি বেশী ক্ষতি  হয়? হলই বা। ‘মন’ বলেওতো একটা কথা আছে! সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও যদি নিজের ইচ্ছামত একটা দিন বাঁচতে না পারি, তাহলে মানুষ হয়ে কি লাভ?

আমি মাধবীকে ভালবাসি। আর ভালবাসি বলেই ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছি। যেসব পুরুষ ভালবাসা ছাড়া অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে, তাদের ব্যবহার করে, তখন কি পাপ বা ক্ষতি হয়না? নবী, এমনকি ফেরেশ্তারা যদি ভুল করতে পারে, আল্লাহর হুকুম অমান্য করে পাপ করতে পারে, তাহলে আমি তুচ্ছ মানুষ কেন নয়? এমন একজন মানুষ ও কি পৃথিবীতে পাওয়া যাবে, যে নিজের ইচ্ছাকে একবারও গুরুত্ত্ব না দিয়ে শুধু  অন্যের জন্য বেঁচেছে? অবশ্য মাধবীর সাথে যদি আমার দীর্ঘসময়ের মেলামেশা বা দেখা-সাক্ষাত হত, তাহলে বোধহয় আমার এতটা আগ্রহ থাকতনা। মাধবীর ক্ষেত্রেও তাই।

দেশে আসার আগেই যখন বুঝলাম, দেখা করতে যাবার সময় পাবনা, আবার মাধবীও যেহেতু ঢাকায় আসবেনা, তখন ধরেই নিলাম, আমাদের দেখা হবেনা। তাই সে আশা ছেড়ে দিয়ে আমি নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।

সোমা আমার শ্বাশুড়ীর মোবাইল ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিল, যাতে আমার কল লিস্ট ও লোকেশন ডিটেক্ট করতে পারে। সোমার দুলাভাই মোবাইল কোম্পানীর বড় অফিসার। আমি বুঝলাম, অবস্থা ভালনা। তাছাড়া সোমার সাথে সম্পর্ক খারাপ হবে – এমন কিছু করার ভাবনা তখনও আমার মধ্যে ছিলনা।

সোমার কাছে ধরা পড়ার ভয়ে আমি মাধবীর সাথে কথাও বলিনি। সবসময় সোমা আমার গতিবিধি খেয়াল করছিল। মাধবী কলব্যাক করলে ধরা পড়ে যাব, সেই ভয়ে ওকে আমার মোবাইল নাম্বারও দিইনি। ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি দু’দিন থাকার পর আমি দেশের বাড়ী চলে গেলাম। বাড়ীভর্তি আত্মীয়। বোনেরা এসেছে। আমি একবার ভাবলাম, রাস্তার মোড়ের মোবাইলের দোকান থেকে ফোন করে কথা বলি। তারপর মনে হল, থাক।

– কথা বল।

আমার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিল সুমন।

– কে?

– কথা বল বুঝতে পারবে।

আমি জানি ফোনটা কার। তবু ধরতে চাচ্ছিলাম না। বড় আপা খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন।  আমি চাইনা কেউ, এমন কি সুমনও জানুক, মাধবীর সাথে আমার যোগাযোগ হচ্ছে। কোনভাবে সোমা জানলে বেড়ানোর পুরো পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ও ভীষণ সাংঘাতিক মেয়ে!

– কথা বল। ও আমাকে অনেকবার ফোন করেছে। তোমার সাথে কথা বলতে চায়। জাস্ট হ্যালো বলে দাও।

আমি ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলাম।

– হ্যালো।

মাধবী হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

– কতবার ফোন করেছি জান? আমি কষ্টে মরে যাচ্ছি। আর তুমি? দশদিনে একবারও তেমার ইচ্ছে হলনা, আমার সাথে কথা বলার?

– সরি সোনা। আমি আসলে ইচ্ছে করেই কথা বলিনি। ঝামেলায় আছি। আমি চিটাগং যেতে পারব না।

– কথা বলতে সমস্যা কি?

– আমার ফোনটা আমার শ্বাশুড়ীর।

– শ্বাশুড়ীর ফোন ইউজ করছ কেন?

– সোমা দিয়েছে।

– এটা কোন এক্সকিউজ হলনা। এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফোনের দোকান।

– বাদ দাও। শোন। তুমি কি ঢাকা আসতে পারবে?

– না।

– দ্যাখোনা প্লিজ। কোনভাবে পার কিনা।

– না, পারবনা।

– ওকে। ভালো থেক। বাই। আমি পরে ফোন করব।

আমি ফোনটা কেটে দিলাম। আমি আসার পর থেকে মাধবী বার বার ফোন করেছে সুমনের কাছে। আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। আজই গ্রামের বাড়ী থেকে ফিরে সোমাকে ওর বাবার বাড়ীতে রেখে সুমনকে নিয়ে বড় আপার বাসায় এসেছি। আজ রাতে এখানেই থাকব। মাধবীর কান্না শুনে আমার আরো বেশী ইচ্ছে করছিল ওকে দেখতে। উপায় নেই। একটু পরেই আপার মোবাইলে ফোন করল সোমা। সে জানতে চায়, আমি সত্যি সত্যি আপার বাসাতেই আছি কিনা। আমি ভীষণ হতাশ হলাম।

– আমি আসছি।

– সত্যি?

– হ্যাঁ সত্যি। অফিসের কাজের বাহানা করে। তবে পরশুই ফিরব।

শুনে আমি যার পর নাই, খুশী হলাম। অবাকও হলাম ওর ব্যাকুলতা দেখে। যেই শুনেছে যে আমি নেমেছি, ওর সব প্রতিজ্ঞা, ঘর ভাঙ্গার ভয়, সোমা জানলে আমি বিপদে পড়ব – এসবকিছু ভুলে ও আমার সাথে দেখা করার জন্য মরীয়া হয়ে উঠল।

সুমনের বাসায় ঢোকার সময় আমার হার্টবিট বহুগুণ বেড়ে গেল। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। মাধবী সত্যি এসেছে?

ওকে দেখে আমার শরীর রীতিমত কাঁপছে। সেই চোখ, সেই হাসি। একটু মোটা হয়েছে বটে। তবে চেহারা আগের মতই। শুধু আমার জন্য সেই আবেগটা আর নেই। আমাকে দেখে এমন ভাব করল, যেন আমাকে দেখে মোটেই খুশী হয়নি। তাহলে এলো কেন দেখা করতে? আমি ভেবেছিলাম, আমরা অন্তরঙ্গ হব। মাধবীর অভিব্যক্তি দেখে আর তা মনে হচ্ছে না।

আমি এদেশে চলে আসার বছরখানেক পরেই সুমন বন্যাকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসে। নিজের ক্লিনিক দিয়েছে। দুই ছেলে। বন্যা গেছে বাবার বাড়ী।

সুমন আমাদের একা রেখে বাইরে যাবার সাথে সাথে মাধবী আমাকে অবাক করে দিয়ে অসম্ভব ভালবাসা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। একান্ত নিজের মানুষের মত আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। আমি ভেবেছি, ও লজ্জা পাবে, কাছে আসবেনা। সুমনের সামনে ইচ্ছে করে ওর আসল অনুভূতি প্রকাশ করেনি। আমার ভীষণ ভাল লাগছিল। এত ভাল আমার আগে কখনও লাগেনি।

ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর একটি মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। ওর নাম মলি। আমাদের সম্পর্ক টিকেছিল মোটে ছয়মাস। আমার সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন মলি অন্য একটি ছেলের সাথে একা দেখা করে। আমার ব্যাপারটা ভাল লাগেনি। আমি সরে গেছি কারণ ও আমার ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলনা। জীবনে প্রথমবার আমি ওর ঠোঁটে চুমু খাই। তখনও এত ভাল লাগেনি।

বিয়ের পর গত সাড়ে  তিন বছরে সোমাকেও আমি অসংখ্যবার চুমু খেয়েছি। সোমাও। কখনও আমার এত ভাল লাগেনি।

আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে সুমনের বেডরুমে গেলাম। বিছানায় ওকে শোয়ানোর পর যখন আদর করছিলাম, আমি দেখেছি, ওর শরীরটা তখনও অদ্ভুত সুন্দর। আমরা গোটা পৃথিবীকে ভুলে নিজেদের মধ্যে ডুবে গেলাম। আমার মনে হল, এরপর মারা গেলে আর কোন ক্ষতি নেই। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।

আমরা যখন আনন্দে ভাসছি, ঠিক তখন সুমন ফিরে এলো। আমরা আর কাছাকাছি আসতে পারিনি। কিন্তু ঐটুকু সময়ের ভাললাগাকেই মনে হয়েছে, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাপ্তি।

মাধবী সেদিন লজ্জা পেয়েছিল কিছুটা। আমার ধারণা, আর কিছুক্ষণ একা থাকলে আমি ওর সবটুকু লজ্জা ভেঙ্গে দিতে পারতাম। সুমন কলিং বেল না বাজালে আমি ওকে কিছুতেই ছাড়তাম না। সুমনকে চলে যেতে বলা যেত। মাধবীও তাই চাইছিল। আমি দেখেছি আমার স্পর্শ কি প্রচণ্ডরকম ওকে আলোড়িত করছিল। আমরা নিজেদের সংযত করি। তাছাড়া আমার কাজ ছিল। কোর্টে যেতে হবে। বার কাউন্সিলে জরুরী কিছু কাজ আছে। আমি চলে যেতে চাচ্ছিলাম। একেবারেই অনিচ্ছাসত্বেও।

মাধবী আর সুমন গাড়ীতে ওঠার পর আমি শেষবার মাধবীর দিকে তাকালাম। আমার কান্না পাচ্ছে খুব। মাধবীর চোখেও হতাশার কষ্ট। ধীরে ধীরে মাধবী আমার চোখের আড়ালে চলে গেল।

আমি এতদিনে বুঝলাম, মাধবী ইচ্ছে করে আমাকে ছাড়েনি। ছাড়লে নিজের সংসার ভাঙ্গার ঝু্ঁকি নিয়ে একা একা আমার সাথে দেখা করতে আসতো না। ওর কোন দায় ছিলনা আসার। মনের টান ছাড়া। আমি ওকে নতুন করে চিনলাম। ওর ভালবাসা নতুন করে অনুভব করলাম। ওর প্রতি আমার ভালবাসা আরো বেড়ে গেল।

আসার দিন প্লেন ছাড়ার আগে যখন বললাম, “ফিরে যাচ্ছি”, মাধবী কোন কথা বলেনি।

চলবে…

আলপনা তালুকদার। ড. আকতার বানু আলপনা (আলপনা তালুকদার নামেই বেশি পরিচিত) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.ই.আর (শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট) - এর একজন অধ্যাপক। তিনি এসএসসি-তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল থেকে রাজশাহী বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম ও সম্মিলিত মেধা তালিকায় অষ্টম...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ