ফিরে এসো
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
হিংসাসুখ
বাবা মা এত সুন্দর একটা নাম রেখেছে উপাসনা, অথচ উপাসনার মন মানসিকতা ঠিক নামের উপযোগী হলো না। তা অবশ্য উপযোগী হতেই হবে তার কোনো মানে নেই। মধুসূদন নামের লোক কি কৃষ্ণের মতোই হয়? নাকি দুর্গা নামের মেয়েরা একেবারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সব সময়? নাকি সম্রাট নামের ছেলেরা সম্রাট হয় কোথাকার না কোথাকার? সেসব না। আসলে উপাসনার নামের সাথে ওর স্বভাবটা একেবারেই যায় না। স্বভাবটা হলো হিংসে দান করার প্রচেষ্টা। ইয়েস হিংসে দান। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন হিংসে দান বিষয় টা আবার কি? লোকে হিংসুটে হয় শুনেছেন। হিংসে দান তো শোনেন নি। শুনেছেন। বললেই বুঝবেন। মহাভারতের শকুনি। হিংসে দানকারী ইজ ইকুয়াল টু শকুনি ধরতে পারেন। এরা নিজেরা কাউকে কতটা হিংসে করে বলতে পারবো না, কিন্তু লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় টুক করে একটু কারুর সম্পর্কে হিংসেতে তাতিয়ে দেবার চেষ্টায় থাকে।
ঘটনাটা তাহলে বলি। ও হ্যাঁ আমার পরিচয়টা দিয়ে নি। আমি উৎস ঘোষ। সরকারী চাকরি পাই নি। একটা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। খুব বেশি মাইনে পাই না। আমার বৌ বাড়িতে বসে অবসর সময় কাপড়ে চাদরে ফেব্রিক পেন্টিং করে উপার্জন করে। আমার ছেলে বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ে। ওকে পড়তে বসতে বলতে হয় না। নিজের পড়া সময় মতো করে নেয়। এবং ভালো রেজাল্ট করে। আমার মা মারা গেছেন। তারপর থেকে বাবা একভাবে বাড়িতে থাকতে পারেন না। কখনও উত্তরবঙ্গে দাদার কোয়ার্টারে, কখনও নিজের ছোটোবেলার গ্রামে, কখনও পিসির ওখানে, কখনও দিদির ওখানে ঘুরে ঘুরে বেড়ান। সদা হাস্যোজ্জ্বল। একভাবে বাড়িতে থাকেন্ না কেন জিজ্ঞেস করলেই বলেন, “কোনদিন পটাস করে মরে যাবো, একটু ঘুরে বেড়িয়ে নি। আমি কারোর কাছেই অনাহূত না।” তা সব যদি ঠিক থাকে কিছু বলার নেই আমার। এইভাবেই চলে। ভালোই আছি।
এবার উপাসনার কথায় আসি। উপাসনা আমার ডাইরেক্ট পরিচিত কেউ নয়। আমার বন্ধু অজান্তর বান্ধবী ছিলো কলেজে। প্রেমিকা না। বান্ধবীই। সেই হিসেবে আমাকে চেনে। আর কথাও বলে কখনও কোথাও দেখা হয়ে গেলে। সেদিন রাস্তায় দেখা। দেখা মানে উল্টো পার থেকে চেঁচিয়ে ডাকলো,”আরে! উৎস যে! এদিকে এসো। কেমন আছো? ভালো আছো? বাব্বাঃ কতদিন পরে দেখা।”
কি আর করি । গেলাম ওপারে। পাঁচটা মিনিট যাবে। বললাম ” ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?” কোনোরকমে বলল,” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ভালো। তা তুমি কি করছো?”
বললাম।
উপাসনা জিজ্ঞেস করল, “অজান্তর খবর রাখো?” সত্যিই রাখি না। অজান্ত মেদিনীপুরের ছেলে। কলকাতায় কোথায় পেয়িং গেস্ট থেকে পড়াশোনা করতো। কলেজ ছাড়ার পরে আমার সাথে যোগাযোগ নেই। জানালাম যোগাযোগ নেই।
উপাসনা এবার চোখে হেসে বলল,” দেড় কোটির ফ্ল্যাট কিনেছে। বুঝতে পারছো তো কেমন চাকরিটা করে? ফরেন ট্রিপ করে এলো তো এবার! ফ্রান্স।”
হেসে বললাম, “বাহ ভালো। তোমার সাথে তার মানে যোগাযোগ আছে।”
বলল, “তা আছে। আমার পিসতুতো ননদের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে। “
আমি বললাম,”ওহ তাহলে তো আত্মীয় তোমাদের এখন।”
কথাটাতে তেমন গা না করে বলল, “তুমি কি আগের বাড়িতেই থাকো?”
বললাম, “হ্যাঁ। পৈত্রিক বাড়ি কলকাতায়। চাকরিও কলকাতায়। অতএব,,,,,”
____”বেশ বেশ। তা বাচ্চা কে কোন স্কুলে দিলে? ছেলে না মেয়ে?”
পাঁচ মিনিটটা দশ মিনিটের দিকে এগোচ্ছে। সংক্ষেপে সারলাম। “এক ছেলে। বাড়ির কাছের সরকারি স্কুলে।”
উপাসনার চোখ মুখ আবার উত্তেজনায় উদ্দীপিত,”অজান্তর ছেলে তো লা মার্টিনিয়ারে পড়ছে! গাড়িও কিনেছে মার্সিডিজ।”
আমার বাড়িতে গিয়ে সত্যিই কিছু কাজ আছে। অতএব এবার যাওয়ার জন্যে উসখুস করতে শুরু করলাম। এর মধ্যেই একবার জিজ্ঞেস করলাম,”অজান্ত ভালো আছে?”
উপাসনা প্রশ্নটা শুনে কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। ভাবলো বুঝি এতক্ষণ ধরে তো ও অজান্তর
ভালো থাকার গল্পই শোনাচ্ছে। তাহলে আবার এই প্রশ্ন কেন? আমি তাড়াতাড়ি সংশোধন করে জিজ্ঞেস করলাম, “মানে এমনি ভালো আছে? সে কথা জিজ্ঞেস করছি।”
উপাসনাও তাড়াতাড়ি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো আছে, ভালো আছে। তুমি কেমন আছো?”
প্রথমে একবার জিজ্ঞেস করেছিলো কেমন আছি। বলেছি। আবার জিজ্ঞেস করল,বললাম, “হ্যাঁ আমিও ভালো আছি। ঐ যা হয় আর কি, বৌ ঘরের কাজ, নিজের কাজ সব নিয়ে খুশি থাকে। ছেলে নিজের পড়াশোনা নিয়ে খুশি থাকে, বাবা বিন্দাস নিজের খেয়ালে থাকেন, তাই আমার আর না ভালো থাকার তেমন কিছু নেই। এর পরেও না ভালো থাকলে সেটা সুখের অসুখ হয়ে যাবে।”
মুখের এতক্ষণের উৎসাহটা কেমন নিভে গেলো। তাইতেই সন্দেহ হলো, আমার কথা ,নিজের কথা, সাধারণ কোনো কথা না বলে আগ বাড়িয়ে অত করে অজান্তর সম্বৃদ্ধির কথা বলে ও আসলে আমার রিয়াকশান দেখতে চাইছিলো। তা না হলে ওরকম চুপসে গেলো কেন আমি যা আছি তাই নিয়ে ভালো আছি শুনে? কে জানে বাবা। যাক গে অত আর ভাববো না। সন্দেহ বাতিকও আছি বটে আমি। এত ভাবতে যাবার কি দরকার?
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..
আজকের সন্ধ্যাটা থমকে যাওয়া মেঘেদের। ঝিরিঝির বৃষ্টি ছিল দিনভর। ঢাকা শহরের পথঘাট জল কাদায় মাখামাখি।…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..