সীমা ঘোষ দে
কবিতা
Bengali

দূর-সম্পর্ক

পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সম্পর্ক ভাঙার শব্দ শুনলেই আমি অস্থির হয়ে পড়ি
মনে হয় কত স্মৃতি ছিল পায়ে পায়ে
এখন নেলপালিশ পরা পা দুটো
নিশ্চিত অন্য পা জোড়াকে মিস করছে
এখন নিশ্চয় জুতোর রুট বদলে গেছে
এক ছাতার তলায় ছিল দুটো মাথা
ছায়াদের আলাপনে ছাতার আনন্দে দিন কাটতো
এখন ছাতাটা নিঃসঙ্গ
কেবল রোদে পোড়ে, জলে ভেজে বারো মাস
ঠোঁট আড়ালের কাজ তার সমাপ্ত হয়েছে

ভালো থাকুক সব প্রেমিক প্রেমিকারা
বিনিময়ে দূরত্ব নদী হয়ে বয়ে যাক
আমার আর তার মাঝে

জন্ম-মৃত্যুদিন

আজকাল ধুমধাম করে আতসবাজি পুড়িয়ে সন্তানের জন্মদিন পালনের রেওয়াজ চালু হয়েছে। বিদেশিদের মত নরম কেকে আমরা অনায়াসে ছুরি চালায়,জানি এমন নরম, তুলতুলে কেক কাটতে ছুঁরির দরকার নেই যেমন সংসার ভাঙতে হাতুড়ি লাগে না, একটা আলপিনই যথেষ্ট !তবুও এগুলোই নিয়ম, নিয়ম লঙ্ঘন করলে সমাজ পাপ দেয়

আমি সমাজবদ্ধ জীব ,তাই জন্মদিন পালনের ছোঁয়াচে অসুখটা আমাকেও পেয়ে বসেছে
কিন্তু সাবজেক্ট তো থাকতে হবে ,সন্তান তো দূরের কথা, পোষ্য কুকুর বেড়ালও যে নেই !
আমার অবশ্য একটি নদীর মত তিরতিরে মেয়ে ছিল,ও বেঁচে থাকলে প্রতি বছর জন্মদিন পালন হতো, মৃত সন্তানের জন্মদিন হয় না ওদের একমাত্র মৃত্যুদিন

সোনালী ডাইনিং টেবিল

একটা বিরাট হীরক খন্ডের মত ঝলমলে ইতালিয়ান ফটোফ্রেম, তাতে কোনো একান্নবর্তী পরিবারে ছবি অনায়াসে ধরে যেত কিন্তু সেই ফটোফ্রেম জুড়ে ছিল তোমাদের ছোট্ট নিউক্লিয়াস ফ্যামিলির ছবি স্বামী-স্ত্রী-কন্যা, তোমরা তিনজন ছিলে মাত্র কিন্তু ঠোঁটের কোণে হাসিটা ছিল টানা-আ-আ-
যেন শ্রাবণ মাসের প্রশস্ত দামোদরের বুক, তাই ফ্রেমটা ভরাট হয়ে গিয়েছিল কানায় কানায়
একটুও শূন্যস্থান বা শূন্যতা রাখার জায়গা ছিল না কোত্থাও, অথচ তোমার বিরাট ঝলঝলে ফটোফ্রেমে জায়গা পাবে বলে যে গাছটা মেলেছিল সোনালী ডাল পালা, সে তোমার ঘরের শোভা বাড়াতে নিমিষে ফার্ণিচার হয়ে গেল

সমুদ্র-সার্কাস

সমুদ্র গর্জন করে কারণ ও শিকলে বাঁধা, খুঁটি থেকে আছড়ে পড়ে বালুতটে আবার ফিরে যায় স্বস্থানে যেমন সার্কাসের বাঘ রিং এর ভিতর গর্জায়। চোখ থাকে রিং মাস্টারের চাবুকে , টিকিট কেটে মানুষ সমুদ্রের সার্কাস দেখতে যায়

তুমিও বৌ বাচ্চা নিয়ে বার বার বেড়াতে যাও সমুদ্রে ওরা সুখী হয়, ওদের দেখে তুমি সুখী হও , তোমার সুখ দেখে আমি সুখী হই, আমার ঘরের সুখ দেখে বাইরের বারান্দা দুঃখ প্রকাশ করে , সাপ ব্যাঙ ধরে আর ব্যাঙাচি পোকা ধরে , পোকা যত না আঘাতে মরে তারচে বেশি মরে আতঙ্কে

সীমা ঘোষ দে। কবি। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারীতে। পড়াশোনা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ। প্রকাশিত বই: 'যুদ্ধনদী এবং অনন্য' (২০১৭), 'ধানসিঁড়ি' (২০১৯)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..