পৃথিবীতে সুন্দর বলে আর কিছুই রবে না

শাহীদ লোটাস
কবিতা
Bengali
পৃথিবীতে সুন্দর বলে আর কিছুই রবে না

 

আজ এই বসতি

এই স্বপ্ন

এই ভালোবাসা

যদি স্বার্থের আঘাতে

হারিয়ে যায় জীবন অন্ধকারে

যদি বেদনারা আবার ফিরে আসে

একাকী নিঃসঙ্গতার অশ্রুজলে,

তবে জেনে রেখো

পৃথিবীতে সুন্দর বলে

আমাদের আর কিছুই রবে না,

রবে না নবান্ন উৎসব

বৈশাখের বটতলা

শীতের কুয়াসা মোড়ানো সকাল

চাদের আলোয় ডুবে থাকা শান্ত রাত ।

 

আজ দুচোখে দেখা এই সুন্দর

যদি ধ্বংস স্তূপের নিচে হারিয়ে যায়

তার উপরে জেগে থাকে লাল লাল রক্ত

আর্তনাদে জেগে থাকে শেষ নিঃশ্বাস

শেষ ভয়, শেষ ভালোবাসা

তাকিয়ে দেখা শেষ দৃষ্টি

পৃথিবীর মানুষের দিকে,

তবে জেনে রেখো,

পৃথিবীতে সুন্দর বলে আর কিছুই রবে না,

রবে না আর

বেঁচে থাকার প্রেরণা

হবে না মানুষে মানুষে বন্ধন, বন্ধুত্ব

প্রেম প্রণয় প্রীতি ভালোবাসা,

বেঁচে থেকে পৃথিবী সুন্দরের যেই স্বপ্ন দেখি

হবে না আর

এই সুন্দর নিয়ে কারো কোন গান ।

 

উপড়ের আজ এই সুন্দর স্বচ্ছ আকাশ

যদি মৃত্যু ভয়ে ঢেকে যায়

ঢেকে যায় যুদ্ধ বিমান ক্ষেপণাস্ত্র মিশাইল

প্রাণঘাতী বারুদের মহড়ায়,

তবে জেনে রেখো,

পৃথিবীতে সুন্দর বলে আর কিছুই রবে না,

রবে না

শিশুর মুখের সরল হাসি

বিকেলের পড়ন্ত আলোয় মাঠে ঘাটে বাজারে

হই হোল্লুর আড্ডা

শিশু কিশোর যোয়ানের মাতামাতি খেলা,

দেখা হবে আর

দুপুরের রোদে হেটে যাওয়া বহুদূর

প্রিয়তমার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম

আঁচলে মুছা তার রূপের পরে রূপ ।

 

আজ এই পৃথিবীতে

দেশে দেশে শান্তির নামে যোদ্ধারা

যদি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে

হয়ে উঠে পশুর ন্যায় হিংস্র

খোলা অথবা মেঘের নিচে

পাখির বদলে যদি দেখা দেয় দানবের রূপে

আর তাদের অস্ত্র গুলো ভিজে যায় শিশুর রক্তে

তবে জেনে রেখো,

পৃথিবীতে আর সুন্দর বলে কিছুই রবে না ।

দরজার বাইরে আর কারো পদচিহ্ন দেখবে না

এই পৃথিবী কেউ,

বেদনায় ভারি বাতাসে ডুবে ডুবে হবে

সুন্দরের কবর গুলো

যারা সুন্দর অথবা অসুন্দর ছিলো

তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ সেই কবরে

নিভে যাবে চির দিন ।

 

আজ এই পৃথিবীতে

যদি নিজ দেশে নিজ ঘরে

নির্বাসিত হয় জনগণ

যদি গৃহ হারা হয়ে

মহান আকাশের নিচে অজানা ভবিষ্যৎ

তাড়া তরে কেড়ে নেয় তাদের সুখ

যদি আতঙ্ক ও ভয়ে সে বেঁচে থাকে

কারো নিঃসংশয়তায় মরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে

তবে জেনে রেখো,

পৃথিবীতে আর সুন্দর বলে কিছুই রবে না

রবে না

মৃত্তিকার সুখে সজ্জিত প্রাসাদ

রবে না ঘরে ফিরে যাওয়ার টানে

পথে প্রান্তরে সবুজে মরু অথবা অরণ্যে আর কেউ

রবে আর

বহু বহু দিন বেছে থাকার স্বপ্ন স্বাদ ।

 

আজ এই সতেজ সবুজ

যদি হারিয়ে যায় বিষাক্ত ধোঁয়ায়

বিষাক্ত পানিতে

যদি লোভ দাম্ভিকতায়

হারিয়ে যায় ফুল পাখি এই প্রকৃতি,

তবে যেনে রেখো,

পৃথিবীতে সুন্দর বলে আর কিছুই রবে না।

রবে না আর

মাঠের পরে মাঠ

ঘাসে আবৃত সবুজ চাদর

পাকা ধানের সোনা রাঙ্গা ঢেউ

গাছে গাছে পাখির কলরব

ফুলে ফুলে শত রঙ্গে রাঙ্গানো বাগান ।

 

আজ এই মসজিদে মন্দিরে গির্জায়

যদি প্রভুদের দলে বিভক্ত হয়ে

যদি পুড়িয়ে দাও মানুষের আবাস

যদি নিয়ে নাও কারো প্রাণ

তবে জেনে রেখো,

পৃথিবীতে উৎসব বলে আর কিছুই রবে না!

হবে না পবিত্র শরীর আর সফেদ পোশাকে

মসজিদে নামাজ

হবে না শত হাজার

মানুষের মিলন মেলা ঈদগাহ ময়দান ।

যদি প্রতিমার ভাঙ্গা মুখ, নষ্ট হাত

পরে রয় মন্দির অথবা পথে

যদি ঠাকুর অথবা ধর্মচারীর চোখ

দিশে হারা হয়ে রয় ভয়ে

যদি ধর্মের নামে মানুষ হয় লাঞ্ছিত

তবে জেনে রেখো,

স্বর্গীয় ঘ্রাণ নিয়ে দেবীর রূপে

আর কোন তরুণী যুবতী নারী

রূপসী হয়ে প্রতিমার মুখোমুখি

রবে না আর কোন দিন,

দুহাতে প্রণাম করে চাইবে না

প্রেম সুখ ভালোবাসা

সুখ আর স্বর্গের পর জীবন ।

আর কোন দিন মাতাবে না

দলে দলে বাদ্যের তালে তালে

সাধু সন্ন্যাসী অর্চনা কারীর দল ।

 

আজ এই পৃথিবী যদি

গির্জাকে ভাবে স্রষ্টাকে ভুলিয়ে দেওয়ার

বিভ্রান্ত পাঠশালা,

তবে জেনে রেখো

শিশু বৃদ্ধ আর আকাশ হবে উৎসবিহীন

হবে না বহু বহু দিন পর

প্রিয়দের মিলন মেলা

বুকে ঝড়িয়ের ধরার সুখে থাকা সময় ।

 

আজ এই পৃথিবীর মানুষ যদি ধর্মের নামে

নিয়ে আসে অসভ্য বর্বরা

নিয়ে আসে আয়ামে জাহিলিয়া

তবে জেনে রেখো,

আবার লাঞ্ছিত হবে নারী

অসহায়ের আর্তনাদে বাতাসে বাতাসে

ছড়িয়ে যাবে বহু বহু পাপ

আর কাপুরুষতায় মৃত্যু হবে আমাদের ।

শাহীদ লোটাস। বাংলা ভাষার লেখক, বাংলাদেশ-এর নেত্রকোনা জেলায় মোহনগঞ্জ থানায় ৩০ মে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে শাহীদ লোটাস-এর বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখতে উৎসাহবোধ করেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ